শরদিন্দু বন্দোপাধ্যায়ের সৃষ্ট গোয়েন্দা চরিত্র ব্যোমকেশ। ব্যোমকেশ বইয়ের বাজারেও যেমন সফল ছিলো সিনেমায়ও তেমন সফল।হর হর ব্যোমকেশ তৈরী হয়েছে বহ্নি-পতঙ্গ অবলম্বনে।
এবার কে কে অভিনয় করেছেন দেখে নেই :
ব্যোমকেশে সত্যান্বেষীর ভূমিকায় আবীর চ্যাটার্জি ই রয়েছেন ।এক হাতেই ব্যোমকেশ, ফেলুদা,শবর সবই করে যাচ্ছেন আবির।
সত্যবতীর ভূমিকায় রয়েছেন সোহিনী সরকার, অজিতের ভূমিকায় অভিনয় করছেন ঋত্বিক চক্রবর্তী,শকুন্তলার ভূমিকায় অভিনয় করেছেন নুসরাত জাহান ও রতিকান্তের ভূমিকায় শদাব কামাল। দেবনারায়ণ সিংয়ের চরিত্রে থাকছেন ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্ত। এছাড়াও ছবিতে রয়েছেন দীপঙ্কর দে, জুন, রাজেশ শর্মা, জয়দীপ কুণ্ডু, প্রদীপ রাই, সুব্রত দত্ত ও রেচেল হোয়াইট।
ছবিতে মিউজিক বিক্রম ঘোষ, সিনেমোটোগ্রাফির দায়িত্বে রয়েছেন সৌমিক হালদার।চিত্রনাট্য লিখেছেন পদ্মনাভ দাশগুপ্ত এবং অরিন্দম নিজে।
সিনেমার পটভূমিতে যাই:
ব্যোমকেশ,সত্যবতী,অজিত বেনারস যাচ্ছে।কারণ,কলকাতায় দাঙ্গা চলছে তাই কিছুদিন বেনারসে থাকবে তারা।বেনারসে আসা মূলত ঘুরে বেড়ানো এবং কিছুদিন থাকার জন্য যতদিন কলকাতা শান্ত না হয়।পূর্ব পরিচিত পুলিশ পুরন্দর পান্ডে র ভাইয়ের বাড়িতে ওঠেন ব্যোমকেশ বক্সী।
দুপুরে নেমন্তন্ন পন্ডে জি র বাড়িতে।খাওয়াদাওয়ার পর পান্ডে, ব্যোমকেশ,অজিত বসে ছিলো এমন সময় দেবনারায়ন সিং এর চিঠি নিয়ে আসে রতিকান্ত।ব্যোমকেশ পরিবার নিয়ে তার বাড়িতে বলে পুরন্দর পান্ডে নিমন্ত্রন ফিরিয়ে দেন।দেবনারায়ন সিং পুরোনো জমিদার।এরপর দেবনারায়ন সিং এর অনুরোধে ব্যোমকেশও যায় দেবনারায়ন সিং এর পার্টিতে। ব্যোমকেশ বেনারস এসেছিলেন নিছক বেড়াতে কিন্তু সত্যান্বেষী যেখানে সেখানেই খুন হয়ে গেলো।পরের দিন মারা গেলেন দেবনারায়ন সিং।তদন্তে সহযোগীতার দায়িত্ব নিলেন ব্যোমকেশ।
দেবনারায়ন সিং এর লিভারে সমস্যা ছিলো।এজন্য এক সপ্তাহ পরপর তাকে ইনজেকশন দেন ডাক্তার পালিত।পরের দিন ইন্জেকশন দেওয়ার পরই দেবনারায়ন সিং মারা যান।আগে দেবনারায়ন সিং এর চিকিংসার দায়িত্ব ছিলো ডাক্তার জগন্নাথ এর কাধে। এরপর শকুন্তলা দেবী জগন্নাথ কে সরিয়ে দেবনারায়ন সিং এর চিকিৎসার দায়িত্ব দেন ডাক্তার পালিত কে।এরপর জগন্নাথের সাথে ডাক্তার পালিতের সম্পর্ক খারাপ হয়।ডাক্তার পালিতের চেম্বারে দেবনারায়ন সিং এর মৃত্যুর আগের রাতে চুরি হয়েছিলো।ব্যোমকেশ বুঝতে পারেন ভায়েল বদলানো হয়েছে।কিন্তু, ফরেনসিক রিপোর্টে আসে ওষধের ঐ ভায়েলেও বিষ নেই....
আবার ব্যোমকেশ জগন্নাথকে দেখেছিলো পালিতের অ্যাসিসটেন্ট কে ঘুষ দিতে....
অন্যদিকে,
বুড়ো অসুস্থ জমিদার দেবনারায়ন সিং এর স্ত্রী শকুন্তলা।সেই শকুন্তলা আবার সন্তান সম্ভবা।
অন্যদিকে দেবনারায়ন সিং মারা গেলে তার সব সম্পত্তি পাবে দেবনারায়ন এর ভায়ের ছেলে।
যে ছেলেকে দেবনারায়ন সিং সবসময় ভাঙের নেশায় বুদ করে রাখতেন।
এইদিকে আবার পারিবারিক কলহ।
এমন অনেক সমীকরণই আছে মুভিটিতে। যেগুলো সমাধান করেই ব্যোমকেশ খুনি পর্যন্ত পৌছায়।
.
দেখতে পারেন মুভিটি। ভালো লাগবে।
অঞ্জনের ব্যোমকেশ এর তুলনায় অরিন্দমের ব্যোমকেশ কিছুটা নাম্বার বেশিই পাবে।এর আগের কিছু ব্যোমকেশে কাহিনীর গভীরতা খুব কমে গিয়েছিলো। কেমন যেন বোঝাই যাচ্ছিলো কে অপরাধী কে হতে পারে।কিন্তু এবার অরিন্দম সেদিকে ভালোই নজর রেখেছেন।"ডিরেক্টর পরিবর্তনের সাথে সাথে ব্যোমকেশের চশমাটাও পাল্টেছে।"
সমালোচনা:শোনা যায় ব্যোমকেশের অনেকগুলো রাইটস কেনা আছে অরিন্দমের। বনে গেলে যেমন সবাই বাঘ হতে চায়, অরিন্দম ও তাই করেছে।শুরুতেই শরদিন্দুর পুরো প্লট টাই চেজ্ঞ করে দিয়েছে অরিন্দম।বহ্নি-পতঙ্গ তে শরদিন্দুর পুরো গল্প পাটনায়।কিন্তু অরিন্দম পুরো প্লট টা নিয়ে এসেছে বেনারসে।দাঙ্গা থেকে বাচতে কলকাতা ছেড়ে আসা ব্যোমকেশ,অজিত,সত্যবতীর চেহারায় নেই কোন চিন্তার ছাপ। মনে হচ্ছে যেন বেনারসে পিকনিকে এসেছেন।
শাঁসে-জলে আর রম্য মেক-আপে দিব্যি চকচক করছে তিনজনে, বিশেষ করে সত্যবতী! শরদিন্দু লিখে গেছিলেন, ওর নাকি ‘… গায়ের রঙ ময়লা… সুশ্রী কি কুশ্রী বুঝিবার উপায় নাই’ (‘অর্থমনর্থম’)। গুলি মারুন ওসব বর্ণনায়। অরিন্দম শীলের হাতে পড়ে সেই সত্যবতীই এখন কী মাখন-মাখন চেহারা।
অজিতের চরিত্রে ঋত্বীক চক্রবর্তী ভালো অভিনয় করলেও। এবারের ব্যোমকেশে অজিত যেন কেমন থেকেও নেই।বারবার মনে হচ্ছে ব্যোমকেশ আর সত্যবতীর জন্য স্পেস ছেড়ে দিচ্ছে অজিত।
শরদিন্দুর মূল গল্পকে যথেচ্ছা কাটাছেড়া করেছেন অরিন্দম.......
আমার রেটিং পয়েন্ট :৭.৫
[রেটিং পয়েন্ট ৭.৫ এর কারণ শুধু অরিন্দমের যথেচ্ছা কাটাছেড়া এবং বেশি সাসপেন্স দিতে গিয়ে গুবলেট বানিয়ে ফেলা।]
তবুও ব্যোমকেশের ধার যেন কমেই নি কারণ লেখক যে শরদিন্দু বন্দোপাধ্যায়
[বি. দ্র: আমার কাছে মুভিটির ডাউনলোড লিংক নেই ]
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:১৪