ওয়ালটার গোসতেলো নামে এক জ্যোতিষী ১৬৫৮ সালে বলেছিলেন, 'লন্ডন শহর যদি দশ বছরের মধ্যে পুড়ে ছাই না হয়, তবে আমাকে চিরদিনের জন্য তোমরা মিথ্যাবাদী বলো'।
কিন্তু তার কথা ফলেও যায়।১৬৬৫ এর প্লেগ এর ভয়াবহতা কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই ১৬৬৬ সালের ২ সেপ্টেম্বর লন্ডন আক্রান্ত হয় এক ভয়ানহ অগ্নিকান্ডের। যা ইতিহাসে" গ্রেট ফায়র অফ লন্ডন " নামে পরিচিত।খ্রিষ্টীয় সপ্তাদশ শতাব্দীর এই ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের সময় ব্রিটেনের শাসনকর্তা ছিলেন রাজা দ্বিতীয় চার্লস। ১৬৬৬ খ্রিস্টাব্দের ২ থেকে ৫ সেপ্টেম্বরের সেই অগ্নিকান্ডে পুড়ে যায় লন্ডনের কেন্দ্রীয় অংশ।
১৬৬৬ সালে যে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে, তার সূত্রপাত হয়েছিল থমাস ফেরিনারের পুডিং লেনের বেকারি থেকে। রাতে বেকারি ছেড়ে যাওয়ার আগে চুলার আগুন না নেভানোয় আগুন ক্রমে চুলার পাশের কাঠে লাগে। প্রবল বাতাসের টানে সেই আগুন ক্রমে ছড়িয়ে পড়ে গোটা লন্ডনে। বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, ওই অগ্নিকান্ডে ফেরিনার পরিবারের কোনো ক্ষতিই হয়নি!সপ্তদশ শতাব্দীর দিকে লন্ডন শহরের বেশিরভাগ ঘরবাড়িই ছিল কাঠ ও খড় দিয়ে তৈরি। ফলে প্রবাহিত বাতাসে আগুন ছড়িয়ে পড়তে বেশি সময় লাগেনি।
একটু উদ্যোগ নিলে আগুনের ভয়াবহতা হয়তো কিছুটা কমানো যেত, কিন্তু মেয়র ছিলেন ভীষণ উদাসীন। ফলে পুড়ে ছাই হয়ে যায় ১৩ হাজার ২শ' বাড়ি, ৮৭টি চার্চ, ৪৪টি কোম্পানি, রয়্যাল এক্সচেঞ্জ, কাস্টম হাউসসহ শহরের জেলখানা। আগুনের ধ্বংসলীলায় নষ্ট হয়ে যায় শহরের রাস্তা, ব্রিজ। ধারণা করা হয়, চার দিনের সেই অগ্নিকান্ডে এক হাজারের বেশি প্রাণহানি ঘটে। পুড়ে যাওয়া লন্ডনকে পরে সাজিয়ে তোলার পরিকল্পনা করা হয়।অবশ্য এর আগে অর্থাৎ ১১৩৩ ও ১২১২ সালেও লন্ডন শহরে আগুন লেগেছিল। ১৬৬৬ সালের এই অগ্নিকান্ডের পর লন্ডনের বিখ্যাত স্থপতি ক্রিস্টোফার রেইন নিজ হাতে সাজিয়ে তোলেন লন্ডন। আগুনের হাত থেকে রক্ষা পেতে তিনিই প্রথম ইট ও পাথরের বাড়ি নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন। এ ঘটনার পর মানুষ অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা বিষয়েও সতর্ক হয়।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৮:২৬