somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভারত যা তাকে সেভাবেই দেখতে হবে - আনু মোহাম্মদ

১০ ই জানুয়ারি, ২০১০ রাত ১১:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ভারতকে বুঝতে গেলে বা ভারতের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক ঠিকভাবে নির্ধারণ করতে গেলে প্রথমে দুটো দৃষ্টিভঙ্গী বাতিল করতে হবে। এগুলো হল প্রথমত, যেহেতু ভারত ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে সহযোগিতা করেছিল সেহেতু ভারত কখনো বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী কোন অবস্থান গ্রহণ করতে পারে না। সুতরাং বাংলাদেশ সম্পর্কে ভারতের কোন ভুমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলা অকৃতজ্ঞতার শামিল। এবং দ্বিতীয়ত, ভারত একটি হিন্দুপ্রধান রাষ্ট্র সুতরাং সেই হিসেবে মুসলিমপ্রধান রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের উপর সে আধিপত্য বিস্তার করছে। ভারতকে মোকাবিলা অতএব একটি সামপ্রদায়িক প্রশ্ন।

রাষ্ট্রের সাথে রাষ্ট্রের সম্পর্ক নৈব্যক্তিক। এখানে মহানুভবতা, দয়া দাক্ষিণ্য এমনকি সমপ্রদায়গত বিবেচনা কাজ করে না। রাষ্ট্র কাজ করে তার আভ্যন্তরীণ শ্রেণীশক্তির বিন্যাস, তার চাহিদা, নীতি ও প্রতিষ্ঠান অনুযায়ী। অন্যান্য উপাদান এর অধীনস্ত। ব্যক্তির ভূমিকা সেখানে খুবই গৌণ, নিছক মুখপাত্রের।

ভারতকে বিবেচনা করতে হবে একটি বৃহৎ রাষ্ট্র হিসেবে, আশেপাশের সবগুলো দেশের তুলনায় যার অর্থনৈতিক, শারীরিক, সামরিক শক্তি অনেকগুণ বেশি। এটি এমন একটি রাষ্ট্র যেটি স্বাধীনতা লাভের পর থেকে ধারাবাহিকভাবে নির্বাচিত সরকার দ্বারা পরিচালিত হয়ে আসছে, কিনা একইসঙ্গে যার এক তৃতীয়াংশ অঞ্চল এখন সামরিক বাহিনী দ্বারা পরিচালিত। ভারত এমন একটি রাষ্ট্র যেখানে কোটিপতির সংখ্যা পৃথিবীর সর্বোচ্চ, রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতায় বৃহৎ পুঁজিপতির একটি শক্তিশালী ভিত্তি তৈরি হয়েছে সেখানে যার চাহিদা বাজার সমপ্রসারণ, পুঁজিবিনিয়োগ, মূলধন সংবর্ধনে দখল বিস্তার। যুক্তরাষ্ট্রের সাথে কৌশলগত ঐক্য এই শ্রেণীর দাপট আরও বৃদ্ধি করেছে। আবার ৪০ কোটি মানুষেরও বেশি অর্থাৎ একদেশে পৃথিবীর সবচাইতে বৃহৎ সংখ্যক দরিদ্রের বাসও এই ভারতেই। একদিকে জাকজমক অনেক বৃদ্ধি পেলেও শ্রেণীগত জাতিগত লিঙ্গীয় বর্নগত আঞ্চলিক বৈষম্য খুবই প্রকট। সামপ্রদায়িকতা আর জাতপাতের সংঘাত সহিংসতা নানাভাবে জারী আছে। বৈষম্য, নিপীড়ন ও মূলধন সংবর্ধনের আদিম ও আধুনিক দুটো রূপই সেখানে এখনও প্রবলভাবে উপসি'ত। শাসক শ্রেনীর বাঁধ নির্মাণ সহ তথাকথিত উন্নয়ন উন্মাদনায় ভারতের বহু কোটি মানুষ এখন উদ্বাস', ছিন্নভিন্ন। প্রতিরোধও নিচ্ছে নানা মাত্রা। অন্যদিকে যেসব অঞ্চলে খনিজ সম্পদ বেশি সেখানে নানা অজুহাতে সামরিকীকরণ বাড়ছে, বাড়ছে বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড।

নিজ দেশেই সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ যেখানে রাজনৈতিক অর্থনৈতিক ও সামরিক নিপীড়নের শিকার সেই
ভারত তার আশেপাশের তুলনামূলক দুর্বল দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক স্থাপনে কাদের স্বার্থের প্রতিনিধিত্ব করবে তা বুঝতে অসুবিধা হবার কথা নয়। বাংলাদেশের সাথে ভারতের যেসব সমস্যা জটিল আকার ধারণ করেছে সেগুলো তাই নিছক ভুল বোঝাবুঝি বা সরকার বিশেষের বাংলাদেশ বিদ্বেষ প্রসূত নয়। এর কারণ একদিকে ভারতের শাসক শ্রেনীর পাশ্ববর্তী তুলনামূলকভাবে দুর্বল দেশগুলোর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গী এবং তার এজেন্ডা বাস্তবায়নে পরিকল্পিত পদক্ষেপ এবং অন্যদিকে বাংলাদেশের সরকারগুলোর বা নির্দিষ্টভাবে শাসকশ্রেণীর অবনত অবস্থান থেকে সৃষ্ট।

তালপট্টি ইস্যু ও ফারাক্কা বাঁধ বাংলাদেশের একটি অনেক পুরনো বোঝা। কোন সরকার এগুলো নিয়ে নিজেদের অবস্থান নিজদেশে ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। আর তার ফলে এখন আরও অনেক বিপদ তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশের সমুদ্র সীমার দুই তৃতীয়াংশ এখন ভারত ও মায়ানমার দাবি করছে। ভারত, মায়ানমার আর সেইসঙ্গে চীন ও যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গোপসাগরকে ভাগাভাগি করে নেবার আয়েজনে ব্যস-, বাংলাদেশের সরকারগুলো এই বিষয়ে তাদের বিভিন্নমাত্রায় সুযোগ ও সেবাদান ছাড়া আর কিছু করেনি। নদীর পানি বন্টন এখন আরও বড় ঝুঁকির মুখে। টিপাইমুখ বাঁধ ও সেইসঙ্গে ফুলেরতল ব্যারেজ বাংলাদেশের জন্য একটি বড় বিপদ হিসেবে হাজির হতে যাচ্ছে। সরকারের অবস্থান একেবারেই নাজুক। ভারত বাংলাদেশের সীমান্ত জুড়ে একদিকে কাঁটাতারের বেড়া দিচ্ছে, গুলি করে প্রায় প্রতিদিন তারা মানুষ মারছে আবার অন্যদিকে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে তার এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে যাবার নিরাপদ রাস্তা তৈরির প্রকল্প তৈরি করছে। এসব বিষয়ে সরকারের অবস্থান খুবই দুর্বল কিংবা ভারতের প্রতিধ্বনি ছাড়া আর কিছু নয়।

বাংলাদেশের সরকার যদি জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে তাহলে এই মুহূর্তে ভারতের সাথে অন্য যেকোন আলোচনার আগে তিনটি বিষয় স্পষ্টভাবে উপসি'ত ও নিশ্চিত করতে হবে: ১. সীমানে- মানুষ হত্যা অবিলম্বে বন্ধ করা এবং এযাবতকালের হত্যাকান্ডের আন-র্জাতিক বিচার। ২. টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণের সব কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করে যৌথ সমীক্ষা শুরু। এবং ৩. সমুদ্র সীমায় বাংলাদেশের ন্যায্য অবস্থানের স্বীকৃতি। প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভারত সফরে এবিষয়গুলো কীভাবে উপস্থাপিত করেন তা থেকেই তাঁর অবস্থান পরিষ্কার হবে।

-ফেসবুকে আনু মোহাম্মদের এই লেখাটি পড়ে ভালো লাগলো, তাই শেয়ার করলাম।
১৪টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বেফাঁস মন্তব্য করায় সমালোচনার মুখে সমন্বয়ক হাসিবুল ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৩ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩২



"মেট্রোরেলে আগুন না দিলে, পুলিশ না মারলে বিপ্লব সফল হতো না "- সাম্প্রতিক সময়ে ডিবিসি নিউজে দেয়া সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করে সমালোচনার শিকার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসিবুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমিত্ব বিসর্জন

লিখেছেন আজব লিংকন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১:৪৮



আমি- আমি- আমি
আমিত্ব বিসর্জন দিতে চাই।
আমি বলতে তুমি; তুমি বলতে আমি।
তবুও, "আমরা" অথবা "আমাদের"
সমঅধিকার- ভালোবাসার জন্ম দেয়।

"সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট"
যেখানে লাখ লাখ শুক্রাণুকে পরাজিত করে
আমরা জীবনের দৌড়ে জন্ম... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×