http://facebook.com/rajinreview/
ছোট বেলায় বাংলা ব্যকরণ বইতে একটি অধ্যায় ছিল: “সমার্থক শব্দ”। খুব একটা ভালো মতো হয়তো পড়া হয়নি। ঠিকমত খেয়াল করলে নিশ্চয়ই “স্বজনপ্রীতি” শব্দের সমার্থক হিসেবে “বলিউড” কে পাওয়া যেত। যদিও বলিউডে স্বজনপ্রীতির ইতিহাস বেশ পুরানো। তবুও গত কয়েক বছর ধরে একটু বাড়াবাড়ি পর্যায় চলে গেছে। অনেকদিন পর এমন একটি মুভি আসলো যেটা নিয়ে সবাই বেশ উৎসুক এবং কোন চরিত্রে কোন তারকার সন্তান নেই। দেখে আসলাম কার্তিক আরিয়ান এবং কৃতি শ্যানন অভিনীত এক দারুণ হাসির মুভি “লুকা ছুপি”।
কাহিনী জানা যাক। গুড্ডু (কার্তিক আরিয়ান ) এক মফস্বলের ডিশের চ্যানেলের সাংবাদিক। বলা যায় ঐ শহরের হিরো আলম। সম্প্রতি “লিভ টুগেদার” ব্যাপারটি নিয়ে বিরাট ক্যাচাল করছেন এক প্রতাপশালি নেতা (বিনয় পাঠক)। আবার ঐ নেতারই মেয়ে রাশমি (কৃতি শ্যানন) এর সাথে ইটিশ পিটিশ শুরু করে গুড্ডু। গুড্ডু রা আবার তিন ভাই । মেজ ভাইয়ের বিয়ের কোন খবর নেই। গুড্ডু চিন্তায় পরে যায় “তার বিয়ে হবে তো?”। সুতরাং সরাসরি রাশমি কে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েই বসে গুড্ডু। কিন্তু রাশমি সেটা তে এখনো রাজি না। তবে লিভ টুগেদার করা যায়। যার বাপ “লিভ টুগেদার” করা যুগলদের ধরে রীতিমত পিটান দেয়, তার মেয়ের সাথে লিভ টুগেদার? ঘটতে থাকে মজাদার সব ঘটনা।
মুভির প্রাণ হলো মজাদার চিত্রনাট্য এবং হাস্যরসাত্মক সব সংলাপ। পুরো মুভিটি বেশ আনন্দের সাথে দেখেছি। লক্ষণ উটেকারের প্রথম হিন্দী মুভির নির্দেশনাতে পুরাই বাজিমাত।
অভিনয়ের দিক দিয়ে নায়ক নায়িকাদের আগে অবশ্যই পার্শ্ব অভিনেতাদের কথা বলা উচিত। একটু মুভি যে একটি দলীয় কাজ সেটা এই মুভির পার্শ্ব অভিনেতারা ভালোমতই বুঝিয়ে দিয়েছেন। বিনয় পাঠক, পংকজ ত্রিপাঠি, অতুল শ্রীবাস্তব, হিমাংশু কোহলি, স্বপ্না সান্দ অসাধারণ করেছেন। তবে গুড্ডুর ভাতিজা চরিত্রে পিচ্চি পোলা “সমর্থ” পুরাই পর্দা কাপায় দিসে। পংকজ ত্রিপাঠির চরিত্রটি কিছুটা নব্বইয়ের দশকের জনি লিভার টাইপের রোল হলেও দারুণ লেগেছে।
মুভির মূল চরিত্রে কৃতি শ্যানন এবং কার্তিক আরিয়ান কে দারুন মানিয়েছে। জুটিটি পর্দায় দেখতে যেমন গ্ল্যামারাস, সেরকম অভিনয়ও ভালোই করেছেন। কৃতি শ্যানন সব সময়েই তার অভিনয় দিয়ে মুগ্ধ করে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। আত্মবিশ্বাসী নারী চরিত্রে দারুন মানিয়েছে। কার্তিক আরিয়ানকেও দারুন লেগেছে। কার্তিক ছেলেটি ভারতের প্রথম সারির কোন অভিনেতা নন। তবে কেন জানি “বেকুব পোলা” টাইপের চরিত্রে তার থেকে ভালো কেউ অভিনয় করতেই পারবে না। বাপ-মা থেকে বিদায় নেবার দৃশ্যে পুরা হল হাসিতে লুটোপুটি খাচ্ছিল। বলিউডে এই দুজনের ভবিষ্যৎ আপাতত উজ্জ্বল বলে মনে হচ্ছে।
মুভির খারাপ দিক বলতে হলে বলবো যে দ্বিতীয়ভাগ একটু একঘেয়ে ধরনের। মুভির গানগুলি বেশ ভালো তবে কিছুটা অহেতুক বলে মনে হয়েছে। মুভিতে “লিভ টুগেদার” এর পক্ষে কিছু যুক্তি উপস্থাপন করার চেষ্টা করা হয়েছে যেটা বিফলে গেছে। মুভিটি দেখলে শুধুমাত্র হাসির মুভি হিসেবে দেখলেই পুরা মজা পাবেন। বেশি সিরিয়াসলি নিলে খবর আছে। এই কারণে মুভিটি অনেকের কাছে বেশ গালাগালি খাচ্ছে। কিন্তু কোন মুভি যদি আমাকে আনন্দ দিতে পারে তাহলে তার বিরুদ্ধে আমার কোন অভিযোগ নেই।
সব মিলিয়ে টাইম পাস করার জন্য দারুন একটি মুভি।
রেটিং – ৩.৫ / ৫.০
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই মার্চ, ২০১৯ বিকাল ৩:৩৫