কাহিনী জানা যাক। দিল্লীর এক নারী সাংবাদিক জাগ্গু ( Anushka Sharma) নিজের চ্যানেলের জন্য আজেবাজে খবরের প্রতিবেদন দিতে দিতে বিরক্ত। হঠাৎ চোখে পড়ে এক অদ্ভুত মানুষকে। মাথায় এক হলুদ রংয়ের হেলমেট , গলায় সব ধরনের ধর্মের মালা, এবং হাতে কয়েকটি কাগজ। কাগজে কিছু দেব-দেবীর ছবি দিয়ে নিচে লেখা “সন্ধান চাই”। পিছু নেয় আনুশকা। কিছু তো গড়বড় আছেই। অদ্ভুত সেই ছেলে। মন্দিরে ঢুকার আগে চপ্পলে সাইকেলের তালা লাগিয়ে রাখে। একদিন তো সে “এখানে পেচ্ছাব করলে ৫০ টা জুতার বাড়ি” লেখায় দেদারসে নিজের তরল ঢেলে দিলো। পুলিশ নিয়ে গেল ধরে। পুলিশকে কিছু ঘুষ দিয়ে আনুশকা কারাগারের ভিতর ঢুকে পড়ে তার সাক্ষাৎকার নেবার জন্য। কিছু একটা কাহিনী তো আছে এই বান্দার। নাম কী? ভোজপুরী ভাষার টানে বললো: “আমি পিকে”।
কে এই ভোজপুরী ছেলেটি? দিল্লী তে কী করছে? পিকে তার কাহিনী বলা শুরু করলো। দুই লাইন শুনার পর আনুশকা ভাবলো:” ধুর!!! আমি এত কষ্ট করে এই পাগলের পিছে ভাগছি? ঐ! আমারে কেউ বাইর করো!!”
ও আচ্ছা পিকে চরিত্রে অভিনয় করেছেন “ আমির খান”। আরে তাই নাকি? এটা আমির খান নাকি? সত্যিই! পিকের দিকে তাকিয়ে থেকে ভুলে যেতে হয় যে এটি আমির খানের অভিনয়। আমি এত অসাধারণ অভিনয় কোন মুভিতে কারো থেকে দেখিনি। অসাধারণ, দুর্দান্তু। আমির খানের অভিনয় সেই প্রশংসার প্রাপ্য যেটির বিশেষণ বাংলা ভাষাতেও নেই। চোখ গুলি ছানাবড়া করে যেভাবে সকলের মন জয় করে নিল সেই পিকে তার কথা কেউ ভুলবেনা। অসাধারণ অসাধারণ অসাধারণ।
মুভির নির্দেশক রাজকুমার হিরাণী। ভাবলাম ... আর কত? এবার নিশ্চয়ই ফালতু মুভি বানাবে। হিন্দী মুভির যেরকম যাচ্ছেতাই অবস্থা! কিন্তু নাহ। রাজকুমার হিরাণীর জবাব নেই। কীভাবে পারে? অভিজাত জোশী – হিরাণী জুটি শুধু হিন্দী মুভি দর্শক নয় যেন গোটা মানব সমাজকেই এক অসাধারণ উপহার দিলেন। প্রযোজক বিধু বিনোদ চোপড়া একটি দারুন মুভির পিছনে টাকা ঢাললেন, এর জন্য তাকে ধন্যবাদ দিতেই হবে।
আনুশকা শার্মার অভিনয় যথেষ্ট কঠিন ছিল এবং দারুন করেছেন তিনি। শুধু তার চুলের স্টাইলটা খুব একটা পছন্দ হয়নি। স্বাধীন, স্বনির্ভর নারী হলেই কী Barkha Dutt এর মত চুল থাকতে হবে?
সহ অভিনেতা হিসেবে সঞ্জয় দত্ত , বোমান ইরানীকে অনেক ভালো লেগেছে। সুশান্ত সিং, পরীক্ষিত সাহানী, সৌরভ শুকলাকে ভালোই লেগেছে। এই মুভি আমির খানের। আমির খানের সাথে তারা আমি বলবো সফল ভাবে তাল মিলিয়েছেন।
সংগীত হিসেবে “ভাগওয়ান ... হে কাহারে তু ?” অসাধারণ একটি গান। Swanand Kirkire ‘র লেখনি , শান্তনু মৈত্রের সুরে ফাটায় ফেলছে সোনু নিগাম। সাথে আমির খানের অভিনয় দেখে চোখের পানি আটকায়ে রাখতে পারিনি।
অনেকে বলতে পারেন মুভিটি কী “3 Idiots” এর চেয়েও ভালো? কঠিন প্রশ্ন। উত্তর দেবার চেষ্টা করি।
3 Idiots এর “বালাৎকার” ধরনের অসাধারণ হাসির দৃশ্য হয়তো নেই এই মুভিতে। তবে যতটা হাসিয়েছে , ততটাই কাঁদিয়েছে PK। 3 Idiots এর সাথে মিল হলো দুটাই অসাধারণ মুভি।
মুভির খারাপ দিক শুধু একটা মনে হয়েছে। মুভিতে পিকের জীবনে ভালোবাসার প্রবেশটি একদম বেমানান লেগেছে। ভালোবাসাটি বন্ধুত্ব পর্যন্ত থাকলে তেমন কিছুই ক্ষতি হতো না।
সবশেষে মহান আল্লাহ কে জানাই “রক্ষা করো প্রভু”।
রেটিং- ৪.৫০ /৫
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:০৯