তারিখ ২১ শে ফেব্রুয়ারী ২০১৭,যথারীতি নিয়মিত মেডিকেল চেকাপের জন্য বাসা থেকে হাসপাতাল রওয়ানা হলাম।যাত্রাপথে দেখলাম শহীদ দিবসে একেবারে ভ্যালেন্টাইন ডে এর মত করে রঙ বেরং এর ফুলের মুকুট মাথায় দিয়ে হাজার হাজার বিভিন্ন বয়সী মানুষ ঘুরে বেড়াচ্ছে ,কিছুক্ষনের জন্য মনে হল আজ কি ১৪ই ফেব্রুয়ারী???খুব খারাপ লাগল ব্যাপারটা।আবার হাসপাতাল থেকে বাসায় ফেরার পথে দেখলাম অবাক করা এক কান্ড,এক বিয়ের চলনের গাড়ি,এত সমস্যা ছিল না কিন্তু ঠিক বরের গাড়ির পিছনেই এক মিনি পিকাপ ভ্যান এর উপর বিশাল সাইজের দুই স্পীকার এ তীব্র জোরে বাজছিল হিন্দি গান।এবার মেজাজটাই বিগড়ে গেল,কিন্তু ইচ্ছা থাকা সত্বেও কিছু বলতে পারলাম না যেহেতু রাস্তায় ছিলাম এবং দুই গাড়ি ফ্লাই ওভার এর উপর দ্বিমুখি অবস্থানে ছিল।
উক্ত দুটি ঘটোনার পরে এখন মনে হচ্ছে ,অমর একুশে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করতে হবে তাই পালন করে ,এটাকে শুধুমাত্র এখন একটা আনুষ্ঠানিকতা মনে করে ।শহীদ দিবস ক্রমে ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনের মাধ্যমে।আমার মনে হয় শহীদ দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস এর গাম্ভীর্যের মাঝে বিস্তর ফারাক রয়েছে,এটা আমাদের ভাল করে বুঝতে হবে।
ইউকিপিডীয়া হতে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়ঃ-
কানাডার ভ্যানকুভার শহরে বসবাসরত দুই বাঙ্গালী রফিকুল ইসলাম এবং আবদুস সালাম প্রাথমিক উদ্যোক্তা হিসেবে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণার আবেদন জানিয়েছিলেন জাতিসংঘের মহাসচিব কফি আনানের কাছে ১৯৯৮ খ্রিস্টাব্দে।১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দের ১৭ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ইউনেস্কোর প্যারিস অধিবেশনে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয় এবং ২০০০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে দিবসটি জাতিসঙ্ঘের সদস্যদেশসমূহে যথাযথ মর্যাদায় পালিত হচ্ছে।২০১০ সালের ২১ অক্টোবর বৃহস্পতিবার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৬৫তম অধিবেশনে এখন থেকে প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করবে জাতিসংঘ। - এ-সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব সর্বসম্মতভাবে পাস হয়েছে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনের প্রস্তাবটি সাধারণ পরিষদের ৬৫তম অধিবেশনে উত্থাপন করে বাংলাদেশ। গত মে মাসে ১১৩ সদস্যবিশিষ্ট জাতিসংঘের তথ্যবিষয়ক কমিটিতে প্রস্তাবটি সর্বসম্মতভাবে পাস হয়।
১৯৫৩ সাল থেকে প্রতি বছর ২১ ফেব্রুয়ারি তারিখে মহান ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানানো হয়। এ দিন প্রত্যুষে সর্বস্তরের মানুষ নগ্ন পায়ে প্রভাতফেরীতে অংশগ্রহণ করে এবং শহীদ মিনারে গিয়ে গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন ও পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে। সারাদিন মানুষ শোকের চিহ্নস্বরূপ কালো ব্যাজ ধারণ করে। এছাড়া আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ইত্যাদির মাধ্যমে ভাষা আন্দোলনের স্মৃতি তর্পণ করা হয় এবং ভাষা আন্দোলনের শহীদদের আত্মার মাগফিরাত ও শান্তি কামনা করা হয়। ১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর থেকে দিনটি কখনো জাতীয় শোক দিবস, কখনও বা জাতীয় শহীদ দিবস হিসাবে রাষ্ট্রীয়ভাবে উদযাপিত হয়ে আসছে এবং পরবর্তীতে ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো বাংলা ভাষা আন্দোলন, মানুষের ভাষা এবং কৃষ্টির অধিকারের প্রতি সম্মান জানিয়ে ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে যা বৈশ্বিক পর্যায়ে সাংবার্ষিকভাবে গভীর শ্রদ্ধা ও যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে উদযাপন করা হয়।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ২:০৪