'৯০ সালের শেষের দিকে যখন প্রথম উপসাগরীয় যুদ্ধের দানা বাঁধছে, পুরো বাংলাদেশ তথা নন-মধ্যপ্রাচ্য মুসলিম বিশ্ব (মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলি কখনোই সাদ্দামকে খুব ভাল চোখে দেখেনি) জুড়ে সাদ্দাম হোসেনের নামে হুলুস্থুল, এই সময়টাতে সাদ্দামকে মহামান্বিত করার জন্য একটা কথা খুব প্রচার করা হত যে তিনি নাকি তার বেশ কয়েকটা বডি ডাবল বানিয়ে রেখেছেন, যে কারনে আমেরিকার পক্ষে কখনো আসল সাদ্দামকে হত্যা করা সম্ভব না! এই গুজব অবিশ্বাস করার কোন কারন ছিল না কারন সাম্প্রতিক কালে বেশ অনেক রাজনৈতিক নেতারই এক বা একাধিক বডি ডাবল থাকার কথা শোনা যায়। লোকে তো আজকাল এমনও বলছে যে হিটলারের যে পোড়া মৃতদেহ বার্লিনের বাংকার থেকে রাশিয়ানরা উদ্ধার করেছিল, সেটা আদতে একজন বডি ডাবলের। আসল হিটলার নাকি পালাতে সক্ষম হয়েছিলেন এবং অনেক পরে তার স্বাভাবিক মৃত্যু ঘটে। এছাড়াও স্ট্যালিন, ইদি আমিন এমনকি আমাদের পাশের দেশ শ্রীলংকার প্রভাকরনেরও বডি ডাবলের কথা বহুল আলোচিত।
খুব বেশি লোকের হয়ত জানা নেই যে সাদ্দামের ভয়ংকর স্বভাব-চরিত্রের জ্যোষ্ঠ পুত্র উদে হোসেন যাকে দীর্ঘদিন সাদ্দাম পরবর্তী ইরাকের ভবিষ্যত প্রেসিডেন্ট হিসেবে ধরা হত, তারও লতিফ ইয়াহিয়া নামে একজন বডি ডাবল ছিলেন। লতিফ উদের জন্য '৮৭ সাল থেকে '৯১ পর্যন্ত কাজ করেন। এই চার বছরে উদে হিসেবে তাকে মোট ১৫ বার হত্যার চেষ্টা করা হয়। বারবার নিজের জীবনের উপর হামলা এবং উদের নোংরা জীবন চোখের সামনে সহ্য করতে না পেরে '৯১ সালে লতিফ পালিয়ে যান। ২০০৩ সালে তিনি তার এই চার বছরের দুঃসহ অভিজ্ঞতা নিয়ে The Devil's Double নামে একটি বই প্রকাশ করেন। সম্প্রতি পরিচালক লি ট্যামাহোরি (জেমস বন্ড মুভি ডাই অ্যানাদার ডে খ্যাত) এই বইটির উপর একই নামে একটি ছবি নির্মান করেন। ছবিটি সম্পূর্ন ইংরেজি ভাষায় মূলত বেলজিয়াম এবং নেদারল্যান্ডে নির্মিত হলেও বিখ্যাত হলিউড প্রযোজনা সংস্থা লায়ন্সগেটের পরিবেশনায় এ বছরের মাঝামাঝির দিকে সীমিত থিয়েটারে মুক্তি পায়।
বাঁয়ে বাস্তবের লতিফ ইয়াহিয়া, ডানে বাস্তবের উদে হোসেন
ইরাকের মধ্যবিত্ত পরিবারের লতিফ ইয়াহিয়া শৈশবে উদে হোসেনের সহপাঠি ছিলেন। আশির দশকে ইরাক-ইরান যুদ্ধ চলাকালে লতিফ ইয়াহিয়া ছিলেন যুদ্ধক্ষেত্রে লেফটেন্যান্ট হিসেবে। হঠাৎ একদিন উদের লোকজন তাকে বাগদাদের প্রেসিডেনশিয়াল প্যালেসে নিয়ে যায়। সেখানে উদে হোসেন তাকে জানায় যে এখন থেকে তাকে উদের বডি ডাবলের ভূমিকায় কাজ করতে হবে। এ কাজের জন্য লতিফ ইয়াহিয়াকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিতে হবে, এমনকি লতিফের বাবা-মাও জানবে যে লতিফ ইরান যুদ্ধে মারা গেছেন। এছাড়া চেহারা পুরোপুরি সমন্বয় করার জন্য ছোটখাট কিছু প্লাস্টিক সার্জারিও করতে হবে। লতিফ অস্বীকৃতি জানালে তাকে বন্দি করে নির্যাতন করা হয় এবং তার পরিবারের সবাইকে জেলে ঢোকানোর ভয় দেখানো হয়। একটা সময় লতিফ উদের কথা মানতে বাধ্য হয়। শুরু হয় প্রেসিডেনশিয়াল প্যালেসে তার নতুন জীবন।
অফিসিয়াল ট্রেইলার
এখানে লতিফ বিষ্ময়ের সাথে লক্ষ্য করেন, যে সাদ্দামের ক্ষমতায় আসার দিন তার পুরো পরিবার রাস্তায় নেমে উল্লাস করেছিল, সেই সাদ্দাম পরিবারের অসামান্য ভোগবিলাস, অবাধ যৌনাচার, যা খুশি তাই করার স্বাধীনতা ভোগ করছে কোন জবাবদিহিতা ছাড়াই। লতিফের পর্যবেক্ষনে উদে একজন স্যাডিস্টিক সাইকোপ্যাথ যে মানুষকে নির্যাতন করে আনন্দ পায়, অন্য মানুষের ব্যাথা-বেদনা যাকে একেবারেই স্পর্শ করে না। প্রকাশ্য দিবালোকে ১৪ বছরের স্কুল ছাত্রীকে রাস্তা থেকে জোর করে ধরে নিয়ে এসে ধর্ষন এবং হত্যা করে জঙ্গলে ফেলে দিয়ে আসে উদে। ছাত্রীর বাবা কন্যার খোঁজে উদের বাড়িতে এলে সে তার লোকদের নির্দেশ দেয় বাবাকে এক হাজার দিনার দিয়ে দেবার জন্য। এমন এক সাক্ষাৎ পিশাচ ছিল উদে হোসেন।
কামাল হান্নাহ নামে সাদ্দামের এক অতি ঘনিষ্ঠ সহচর ছিল। কামালের কাজ ছিল সাদ্দামের খাবার পরীক্ষা, তার জন্য নিত্যনতুন যুবতী সরবরাহ এবং বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ প্রদান। এই ব্যক্তিই সাদ্দামকে সামিরা নামে এক মেয়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় যাকে সাদ্দাম পরে বিয়েও করে। এসব কারনে উদের মা সাজিদা এবং উদে নিজেও কামালের উপর ক্ষিপ্ত ছিল। ১৯৮৮ সালে এক সান্ধ্যভোজের অনুষ্ঠানে উদে কোকেনের নেশায় আচ্ছন্ন হয়ে কামালকে সবার সামনে ইলেকট্রিক নাইফ দিয়ে হত্যা করে। সাদ্দাম এই ঘটনায় খুবই ক্রুদ্ধ হন। বিচারে উদের আট বছরের জেল হয়, যদিও মাত্র তিন মাস পরেই জর্ডানের বাদশাহ হুসেইনের মধ্যস্থতায় সাদ্দাম তাকে ছেড়ে দেয়।
এর কিছুদিনই পর ইরাক কুয়েত দখল করে নেয়। দেশের এই দূর্যোগের সময়ও উদের জীবনযাপনের কোন পরিবর্তন দেখা যায় না। আগের মতই ভোগবিলাসে সময় কাটে তার, যে বিয়েতে উদে অতিথি হিসেবে আমন্ত্রিত ছিল, সেই বিয়ের কনেকেই জোর করে উঠিয়ে নিয়ে ধর্ষন করে। উদে একটু চোখের আড়াল হলে মেয়েটি উঁচু বিল্ডিং থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করে। এসব দেখতে দেখতে বীতশ্রদ্ধ হয়ে এক সময় লতিফ পালিয়ে যাবার সিদ্ধান্ত নেয়। উদের নির্দেশে লতিফের বাবাকে হত্যা করা হয়।
প্রতিশোধ নেবার জন্য লতিফ এবার উদেকে হত্যার পরিকল্পনা করে। বিয়ের আসর থেকে যে মেয়েটিকে উঠিয়ে ধর্ষন করা হয়েছিল, তার স্বামী লতিফকে সাহায্য করতে রাজি হয়। এছাড়া উদের ঘনিষ্ঠ মুনেম নামের এক বয়স্ক ব্যক্তিও লতিফকে সাহায্য করে, উদের অবস্থান লতিফকে জানিয়ে দেয় সে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, তারা আদতে উদেকে মারতে ব্যর্থ হয়। আটটা গুলি নিয়েও পঙ্গু হয়ে বেঁচে যায় উদে। এর মধ্যে একটা গুলি মেরুদন্ডের খুব কাছে থাকায় কখনোই বের করা সম্ভব হয়নি।
এখানে একটি বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন, ছবির প্রতিটা ঘটনার বর্ননা যেমন এখানে লেখা হয়নি, তেমন উপরে লেখা সবকিছু আবার ছবিতে দেখানো হয়নি। আগ্রহী পাঠকদের জন্য সাদ্দাম, উদে, লতিফের উপর লেখকের নিজস্ব গবেষনালব্ধ অনেক তথ্য এখানে সন্নিবিশিত হয়েছে।
বাস্তবে অবশ্য উদে হোসেনের উপর এই হামলার সাথে লতিফের কোন সম্পর্ক থাকার কথা জানা যায় না। ছবির এই অংশটা শুধুমাত্র নাটকিয়তা আনার এবং একটা প্রতিশোধের গল্প বানানোর জন্য আরোপ করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, উদের হাত থেকে পালানোর পরপরই লতিফ কুর্দি বিদ্রোহিদের হাতে ধরা পড়েন। তারা তাকে উদে হোসেন ভেবে আটকে রাখে। পরে অবশ্য তাদের ভুল ভাঙে এবং লতিফ শেষ পর্যন্ত অস্ট্রিয়াতে রাজনৈতিক আশ্রয় পান। পঙ্গু হবার কারনে উদের শেষ বছরগুলি খুব ভাল যায়নি। সাদ্দাম তার বদলে উদের ছোটভাই কুসে হোসেনকে ইরাকের ভবিষ্যৎ নেতা হিসেবে নির্বাচন করে। The Devil's Double বইটা বাজারে আসার মাস দেড়েক পর উদে এবং কুসে দুইজনই মার্কিন টাস্ক ফোর্সের সাথে বন্দুকযুদ্ধে মারা যান।
ছবিটা নিয়ে কথা বলতে গেলে প্রথমেই বলতে হবে প্রধান চরিত্র ডমিনিক কুপারের কথা। কি অসাধারন অভিনয় যে তিনি করেছেন, সেটা ভাষায় প্রকাশ করার মত না। আমার জীবনে দেখা বোধহয় সেরা অভিনয়। কাহিনী পড়ে বুঝে ফেলার কথা যে তিনি দ্বৈত চরিত্রে অভিনয় করেছেন। একটা চরিত্র এমন যে দর্শকের মনে তার জন্য অসীম ঘৃনা জন্মাতে হবে, অন্য চরিত্রটা আবার দর্শকের মনে খুব সহানুভূতি সৃষ্টি করতে হবে। ছবির একটা বড় অংশে এই দুই চরিত্র একই দৃশ্যে তো বটেই, এমনকি একই ফ্রেমেও অবস্থান করে। একসাথে এত জটিল আর ভিন্ন দুটো চরিত্রের সফল রুপায়ন সহজ কথা না, কিন্তু এই কঠিন কাজটাই মনে হচ্ছিল তিনি যেন হেসেখেলে করছেন। এর আগে তেমন কোন উল্লেখযোগ্য ছবিতে তিনি কাজ করেননি। এই ছবিটাকেও ঠিক মূলধারার ছবি বলা যাবে না। তবে আমি মনে করি, খুব শিঘ্রি এই ব্রিটিশ অভিনেতাকে আমরা অনেক বড় বড় ছবিতে নিয়মিতই দেখব।
কৃতিত্ব দিতে হবে এর চিত্রগ্রাহক, মেকআপ আর্টিস্ট এবং স্পেশাল অ্যাফেক্ট দলকেও। পুরো ছবির কাহিনী ইরাকে হলেও শ্যুটিং হয়েছে মাল্টাতে। ইরাকের ধুসরমরু পটভূমিকে মাল্টার লোকেশনে খুব সফলভাবে দৃশ্যায়ন করতে সক্ষম হয়েছেন চিত্রগ্রহন দল। আজকের ডিজিটাল প্রযুক্তিতে যমজ চরিত্রকে একই ফ্রেমে নিয়ে আসা খুব কঠিন না। তারপরও স্পেশাল অ্যাফেক্টের দলের কাজ এত সুনিপুন ছিল যে মাঝে মাঝে ঘোর লেগে যায় যে আসলেই কি একই লোক দুটো চরিত্র করছেন নাকি আলাদা অভিনেতা নেয়া হয়েছে! মেকআপের লোকজনও দুই চরিত্রের জন্য সম্পূর্ন আলাদা গেটআপ ঠিক করেছিলেন, ফলে শুধু দেখেই সবসময় বোঝা গেছে কোনটা উদে আর কোনটা লতিফ।
পরিচালনায় লি ট্যামাহোরির মুনশিয়ানা ছিল। ছবির গতি ধরে রাখতে তিনি শতভাগ সফল। এক সেকেন্ডের জন্যও মনে হয়নি কোন অংশ আরোপিত বা ছবিতে না থাকলেও চলত। শেষ দৃশ্যটা (উদের উপর হামলা) নিয়ে আমার অবশ্য অভিযোগ আছে। এ ধরনের সত্য ঘটনার উপর নির্মিত ছবিতে কাহিনীর প্রয়োজনে বা একটু নাটকিয় করার জন্য বাস্তবের সাথে ছোটখাট কাল্পনিক ঘটনা যোগ করতেই হয়, কিন্তু এ ধরনের ঐতিহাসিক না থাকাই ভাল। একই কারনে ট্যারান্টিনোর Inglourious Basterds এর শেষাংশও আমার ভাল লাগেনি।
সাদ্দাম চরিত্রটা নিয়ে সামান্য একটু কথা আছে। কেন যেন এই চরিত্রটা জমেনি। ছবিতে খুব সামান্য সময়ের জন্য উপস্থিত বলেই হয়ত পরিচালক এই চরিত্রের দিকে একটু কম মনোযোগ দিয়েছেন বলে মনে হয়। আরেকটু ভাল হতে পারত।
উদের রক্ষিতা এবং পরবর্তীতে লতিফের সাময়িক বান্ধবী সারাবের ভূমিকায় লুডিভিন সেনিয়েঁ গতানুগতিক। তার চরিত্রটাও শেষ পর্যন্ত পরিষ্কার হল না। সে কি আসলেই লতিফের প্রতি দুর্বল ছিল নাকি উদে নিজেই লতিফের উপর সার্বক্ষনিক নজর রাখার জন্য তাকে কাজে লাগিয়েছিল, এই বিষয়টা বোঝা গেল না।
উদে হোসেন তার মায়ের সাথে
তবে ছবির সবচেয়ে দুর্বোধ্য অংশ হল উদের সাথে তার মায়ের সম্পর্ক। পুরো ছবিতে একটা মাত্রই দৃশ্যেই ভদ্রমহিলার উপস্থিতি আছে। এছাড়া সাদ্দামের প্রিয় বন্ধু কামাল হান্নাহকে সবার সামনে হত্যার ঝুঁকি নেয়াতে বোঝা যায় যে সে তার মাকে খুব ভালবাসত। কিন্তু দুজনের মধ্যকার এই দৃশ্যটা দেখে তাদের সম্পর্কটা চিরন্তন মাতা-পুত্রের ভালবাসার সম্পর্ক নাকি আরও জটিল কিছু, সে প্রশ্ন থেকে যায়।
সবমিলিয়ে The Devil's Double ছবিটাকে আমি ব্যক্তিগতভাবে সাম্প্রতিককালে আমার দেখা সেরা ছবি বলতে দ্বিধা করব না। চলচ্চিত্রপ্রেমী এবং/অথবা বিশ্বরাজনীতিতে আগ্রহী সবার জন্য 'অবশ্যই দেখতে হবে' তালিকায় ছবিটা রাখা উচিৎ।
ডাউনলোড লিঙ্কঃ
৩০০ মেগাবাইট সরাসরি ডাউনলোড লিঙ্ক
আমি অবশ্য ২০ মিনিট সময় ব্যয় করেও বের করতে পারলাম না যে কিভাবে এই সাইট থেকে ডাউনলোড করতে হবে! বড়ই দুর্বোধ্য। ৪১ নম্বর মন্তব্যে ব্লগার দিপ পুরো প্রক্রিয়াটা সচিত্র বুঝিয়ে দিয়েছেন। তাকে আন্তরিক ধন্যবাদ।
৫৫০ মেগাবাইট সরাসরি ডাউনলোড লিঙ্ক
২.২৫ গিগাবাইট সরাসরি ডাউনলোড লিঙ্ক
সদস্য হতে হবে যেটা ফ্রি। সোয়া দুই গিগাবাইট যিনি ডাউনলোড করবেন, তার জন্য দু'মিনিট ব্যয় করে সদস্য হওয়া কোন ব্যাপার না। হয়ে যান। দুর্দান্ত কোয়ালিটির জন্য এটা আমার সবচেয়ে প্রিয় সাইট।
৭০০ মেগাবাইট টরেন্ট ডাউনলোড লিঙ্ক
১.৩৭ গিগাবাইট টরেন্ট ডাউনলোড লিঙ্ক
আগ্রহী পাঠকেরা ইউটিউবে লতিফ ইয়াহিয়ার সাক্ষাৎকার দেখতে পারেন। চমকে যাবার মত একটা ব্যাপার হল যে লতিফের সাদ্দামের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ তো নেইই, বরং সে সাদ্দামকে যথেষ্ট শ্রদ্ধা করে। এমনকি তার মতে, সাদ্দাম নাকি কুর্দিদের উপর রাসায়নিক অস্ত্র প্রয়োগের সাথে জড়িত ছিল না।
-----------------------------------------------------------------------
* ছোট ভাই বা বোনের জন্মের সময় যে কারোর জন্যই খুব অন্যরকম একটা ব্যাপার। হঠাৎ একদিন লক্ষ্য করা যে মাকে যেন কেমন একটু ক্লান্ত ক্লান্ত লাগে সবসময়, শরীরের একটা পরিবর্তন দেখা দিচ্ছে আস্তে আস্তে, কোলে নেয়া বন্ধ করে দিয়েছে, সহজে পাশে শুতে দেয় না (লাথির ভয়ে)। আরও কিছুদিন পর নতুন একটা বাবু আসার সম্ভাবনা নিয়ে উত্তেজনা, হঠাৎ নিজেকে একটু মুরুব্বি মুরুব্বি বোধ করা। তারও বেশ কয়েকদিন পর নতুন বাবুর আগমনের প্রাথমিক উচ্ছাসের পর আবিষ্কার করা যে পরিবারে নিজের আদর-যত্ন একটু কমে গেছে, মায়ের মনোযোগ অন্যদিকে বেশি চলে গেছে। এসব নিয়ে কিঞ্চিত হিংসা আছে আবার একই সাথে ফুটফুটে, টুকটুকে নতুন বাচ্চাটার জন্য অপরিসীম ভালবাসাবোধ হওয়া। সবমিলিয়ে দারুন একটা সময়। এত কথা বলার কারন হচ্ছে যে আজকে আমাদের একজন সহব্লগার রাজসোহানের পিচ্চি বোন ইফার নবম জন্মদিন। রাজ ফেসবুকের স্ট্যাটাসে নয় বছর আগের সেই আনন্দময় দিনটার কথা সবাইকে জানাল। নয় বছরের মেয়েকে আর পিচ্চি বলা যায় না, কিন্তু এই ডাকটা রাজই স্ট্যাটাসে লিখেছিল। অন্তত এগার/বার বছরের ছোট বোনটা বোধহয় তার চোখে কোনদিনই বড় হবে না! পিচ্চি আপু, সামহোয়ারের সকল ব্লগারের পক্ষ থেকে জন্মদিনের উপহার হিসেবে তোমাকে এই পোস্ট উৎসর্গ করলাম। ভাল থাকো সারাজীবন, আনন্দে থাকো আর অনেক বড় হও সোনা।