somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পাঠ: সব লোকে কয় লালন কী জাত সংসারে

২৬ শে নভেম্বর, ২০১০ বিকাল ৩:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১৮৯৯ সালে আঁকা জ্যোতিরিন্দ্রনাথের অথেনটিক (?) লালন।

সব লোকে কয়
লালন কী জাত সংসারে
লালন বলে জাতের কী রূপ
দেখলাম না এ নজরে।।

সুন্নত দিলে হয় মুসলমান
নারী লোকের কী হয় বিধান
বামন চিনি পৈতা প্রমাণ
বামনি চিনি কিসে রে।।

কেউ মালা কেউ তসবি গলে
তাইতে কি জাত ভিন্ন বলে
আসা কিংবা যাওয়ার কালে
জাতের চিহ্ন রয় কি রে।।

জগৎ বেড়ে জাতের কথা
গৌরব করি যথাতথা
লালন বলে জাতের ফাতা
বিকাইছি সাধ-বাজারে।

লালনের গানের কথা থিকা লালনরে (১৭৭২-১৮৯০) একটু বোঝনের চেষ্টা করি। লালনের যাপনকারীদের কথা বাদ দিলাম আপাতত। তদুপরি লালনের জাত বা মাহাত্ম্য বাদ দিয়াই শুরু করতেছি। বিকজ, যদি গুরুত্ব আর মহত্ত্বই ধরতে হয় তাইলে তো জাত ধরায়ও সমস্যা নাই। সুতরাং আর আর অ-জাত অ-কুলশীল, অ-মহৎ, অ-বৃহতের লগে যেমন যেমন লালনের লগেও তেমন তেমন, হ্যাঁ?

লালন স্যার কইলেন, “লালন বলে জাতের কী রূপ দেখলাম না এই নজরে।”

তারপরেই উনি জাতের যে যে রূপ নজরে দেখতেছেন তা বলতেছেন: “কেউ মালা কেউ তসবিহ গলে” “সুন্নত দিলে হয় মুসলমান” “বামন চিনি পৈতে প্রমাণ”। লালন এই প্রকারে মোটা গলায় জাতরে আইডেনটিফাই করতেছেন। কিন্তু সুন্নত না দিলে নারীকে “মুসলমান” বলে বুঝতে চাইতেছেন না। বা বলতেছেন, “বামন চিনি পৈতে প্রমাণ বামনি চিনি কী প্রকারে”। পৈতে না থাকলে বামনিকেও আর বামনি বইলা চেনার জো নাই। আদতে কি তাই? বর্গের মধ্যে বসবাসকারীর আরো বহু চিহ্নই তো আছে। তা লালনের নজরে যে পড়ছে তার চিহ্নও লালন তার গানে গানে রাইখা গেছেন।

জাত নয়, জাতের প্রকাশিত চিহ্ন নিয়া এই গান। ধরি, মালা, তসবিহ, পৈতা খুইলা (সুন্নতের কথায় আগাইলাম না, শুনছি ইহুদি জাতের ভাইরা আর আফ্রিকার কোন জাতের বইনরাও নাকি সুন্নত নেন; এনারা সুন্নতের দিক থিকা এক হইয়াও লালনের জাতের সমস্যা মিটাইতে পারেন নাই।) দেখতে শুনতে একান্তই বিনা জাত হওয়া গেল! তাতে কি জাত চইলা যাবে? জাত কি আর কেবল চিহ্নে থাকে নাকি?

তাই লালনের এই গান যতটা না জাত-অজাতের বিরোধ মিটাইতে চায় তার চেয়ে বেশি সকল জাতের প্রতি সেক্যুলার বিরোধিতার জয়গান গায়।

লালন বলতেছেন, “আসা কিংবা যাওয়ার কালে জাতের চিহ্ন রয় কি রে।” বস্তুত, যাওয়া আসার সকল সময়ই জাতের সকল চিহ্নই মানব দেহরে ধারণ করতে হয়। গানের খাতিরে এই সব ব্যাপার অস্বীকার করা যাইতে পারে মনে হয়।

অন্য জাতের ভেদ বা পার্থক্যের প্রতি শ্রদ্ধা বা মাইনা নেওয়ার মধ্যেই জাতের সমস্যার সমাধান আছে। সকল জাতের ভেদ মিটাইয়া চিহ্নহীন কৃষ্টিহীন হওয়ার মধ্যে সেক্যুলার হওয়ার বা আধুনিক খৃষ্টান বা আধুনিক মানুষ হওয়ার বাইরে আর কী কী হওয়ার আছে? বরং “জাতের ফাতা বিকাইছি সাধ-বাজারে” বলার মধ্যে এক ফ্যাসিবাদী নাস্তিকতার দেখা মেলে। সব জাতের চিহ্ন ঘুচাইয়া দেওয়ার আহবানকারী লালনের নিজের লোকরা লালনের মতোই তাদের জাতিচিহ্ন তো ধইরাই আছেন এখনতরি। তাদেরে সাধুবাদ। তারা লালনের গানরে সেক্যুলারদের মতো ইতর বস্তুবাদিতায় পাঠ করেন না হয়তো। নাইলে খিলকা পইরা পরে বামনের পৈতা আর মুসলমানের তসবিহ ছাড়নের কথা বলা যাইতো না।

আমি মনে করি অত্যাচারী হিন্দু আর অত্যাচারী মুসলমানের কবল থিকা বাঁচনের জন্য সেই কালে লালনের এই গানের একটা নিরাপত্তাগত সামাজিক মূল্য আছিল। এই কালে অত্যাচারী খৃষ্টান আর ইহুদিদের হাত থিকা রক্ষা পাইতে হইলে নিপীড়িত মুসলমানের তসবিহ ছাড়াটা কাজের কাজ হবে না। হিন্দুর লগে ইহুদির যেহেতু সামরিক বন্ধুত্ব সাধন হইছেই ওনারা পৈতা আর না পরলেও পারবেন! জয় গুরু।

২৬ নভেম্বর ২০১০

ফেসবুকের একই লেখার লিংক: http://on.fb.me/eqhGuG
৯টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×