জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে গণহত্যাকারী হাসিনার পতনের পেছনে নাকি র্যাপার আর এলজিবিটিরা জড়িত! যাদের নাকি ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট নামে একটি মার্কিন সাহায্য সংস্থা অর্থায়ন করেছিল! আর এতেই নাকি প্রমাণ হয় যে হাসিনার পতনের পেছনে আমেরিকা জড়িত ছিল। এমনটাই দাবি করেছেন আওয়ামীপন্থী ব্লগার কলাবাগান১। তার ভাষায় - "যেমনটা এতদিন সোনাগাজী বলে এসেছেন"!

সোনাগাজী এবং তার অনুসারীরা এতদিন বলে আসছিলেন, এটি জামাত-শিবির, সিআইএ, আর পাকিস্তানি গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই এর কাজ। এখন সেখানে র্যাপার আর এলজিবিটিদের যুক্ত করা হয়েছে! জামাত-শিবির যে বৈচিত্র্য, সমতা এবং অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে এতদূর এগিয়ে গেছে - এটা বোধহয় কোন পাগলও কল্পনা করতে পারবে না! কিন্তু এখন এরকম আজগুবি গল্প ছড়াতে ব্যস্ত খড়কুটো আঁকড়ে ধরা আওয়ামীলীগাররা।
তার আগে বলে রাখি, ব্লগে যে তিনজন কট্টর আওয়ামীলীগার আছেন, তাদের মধ্যে ব্লগের গোয়েবলস হিসেবে পরিচিত হাসান কালবৈশাখীর পড়ালেখার করুণ দশা আমি বুঝেছিলাম যখন তিনি শেখ হাসিনাকে নিয়ে টাইমস পত্রিকার একটি প্রচ্ছদ প্রতিবেদন নিয়ে একটি লেখা প্রকাশ করেন। টাইমস-এ প্রকাশিত সেই ইংরেজি প্রতিবেদনটি না পড়েই তিনি ধরে নিয়েছিলেন যে, যেহেতু টাইমসের মতো একটি পত্রিকা হাসিনাকে নিয়ে প্রচ্ছদ করেছে, নিশ্চয়ই সেখানে তার প্রশংসায় ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে! আর ব্লগের গোয়েবলস হিসেবে তার দায়িত্ব ছিল এটি সবাইকে জানানো।
আওয়ামী দলান্ধ হিসেবে সুবিখ্যাত ও চিরস্থায়ীভাবে ব্যান হওয়া সোনাগাজীর লেখা পড়লে প্রায়ই সন্দেহ হতো, তিনি ঠিকমতো বাংলা পড়তে জানেন তো? তার বাংলা লেখার বাক্যগঠন ও বানান আমাদের দেশের তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণির বাচ্চাদের মতো। সেই লোক যখন ব্লগের অন্য লেখকদের "প্রশ্নফাঁস জেনারেশন" বলে গালি দিতেন, তখন সত্যিই হতাশ লাগত।
তবে আওয়ামী দলীয় কর্মী কলাবাগান১ একজন শিক্ষিত ও মার্জিত ব্যক্তি। তার লেখাগুলো থেকে জানা যায়, তিনি আমেরিকার কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন। ফলে তার পড়াশোনা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই। যদিও তার গুটিকয়েক দলীয় পোস্ট - যেমন বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট নিয়ে উচ্ছ্বাস বা পুতুলের ডব্লিউএইচওতে কাজ- এসব কিছু বাদ দিলে তিনি বিজ্ঞান বিষয়ে ভালো কিছু পোস্ট দিয়েছেন।
কিন্তু সেই একই লোক যখন র্যাপার ও এলজিবিটিদের অর্থায়ন বিষয়ে ফাঁস হওয়া মার্কিন নথিটি না পড়েই - "হায় হায়, এটা কী দেখলাম!" বা "এই জন্যই ইউনুস সাহেব বলেছিলেন, 'meticulous plan' করে ৩১৭ জনকে সিলেক্ট করেছিল দেশকে destabilize করার জন্য!" এমন কথা বলেন, তখন তার মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সন্দেহ না করে পারা যায় না!
এখন দেখা যাক, সেই ফাঁস হওয়া নথিতে আসলে কী আছে।
নথিটির মূল বক্তব্য হলো, ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (IRI) নামের সাহায্য সংস্থাটি ২০১৯-২০ সালে র্যাপার ও এলজিবিটিদের অর্থায়ন ও প্রশিক্ষণ দেয়। এটি রিপাবলিকান পার্টি-পরিচালিত একটি এনজিও, যার কাজ গণতন্ত্রের উন্নয়ন!

সংস্থাটি মার্চ ২০১৯ থেকে ডিসেম্বর ২০২০-এর মধ্যে শিল্পী, সংখ্যালঘু গোষ্ঠী এবং এলজিবিটিদের বিভিন্ন অনুদান দিয়েছিল। এগুলো মূলত গান রেকর্ড করা, এলজিবিটিদের নাচের অনুষ্ঠান আয়োজন এবং সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর জন্য কিছু সাধারণ প্রশিক্ষণ, যেমন, কীভাবে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে হয়।
নথিটিতে উল্লেখ আছে যে, হাসিনা অভিযোগ করেছেন, বাংলাদেশে মার্কিন সামরিক ঘাঁটি স্থাপনের অনুমতি না দেওয়ার কারণেই আমেরিকা তাকে ক্ষমতা থেকে সরিয়েছে। তবে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর হাসিনার এই দাবি হেসেই উড়িয়ে দিয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল সাংবাদিকদের বলেন, "শেখ হাসিনার পদত্যাগের সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জড়িত ছিল এমন যেকোনো ইঙ্গিত সম্পূর্ণ মিথ্যা।"
নথিটির লিংক:view this link
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ সকাল ১১:২৩