somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সাহিত্যে নোবেল পেলেন চীনের মো ইয়ান

১২ ই অক্টোবর, ২০১২ সকাল ৯:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অনেক প্রতীক্ষা আর জল্পনাকল্পনার অবসান ঘটিয়ে ২০১২ সালে সাহিত্যে নোবেল জয় করলেন চীনের মো ইয়ান। গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় বিকেল ৫টায় দ্য রয়াল সুইডিশ একাডেমীর স্থায়ী সেক্রেটারি পিতর অ্যাংলুন্দ ঘোষণা করেন তাঁর নাম।

২০০০ সালেও সাহিত্যে নোবেল পেয়েছিলেন একজন চীনা- গাও শিংচিয়ান। তবে তিনি সরাসরি চীনের প্রতিনিধিত্ব করেননি। তিনি তখন ফরাসি নাগরিক। এত অল্প সময়ের ব্যবধানে একই দেশের আরেক সাহিত্যিকের নোবেল জেতার কথা কেউ ভাবেননি; যদিও এ বছর নোবেল পুরস্কারের ইতিহাসের সর্বোচ্চসংখ্যক ২১০ জন মনোনীত সাহিত্যিকের মধ্যে মো ইয়ানের নাম শোনা যাচ্ছিল বেশ জোরেশোরেই। ৫৭ বছর বয়সী মো ইয়ান সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী প্রথম চীনা নাগরিক।
মো ইয়ান শব্দের অর্থ ‘কথা বলবেন না’। এটি তাঁর ছদ্মনাম। তাঁর প্রকৃত নাম গুয়ান মোয়ে।
সুইডিশ একাডেমীর পিতর অ্যাংলুন্দ ইয়ানের নোবেল বিজয়ের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে বলেন, '...অলীক অনুসন্ধিৎসু দৃষ্টির সুতীক্ষ্ন তির্যকতা দিয়ে তিনি ইতিহাস, পৌরাণিকতা আর আধুনিকতার সম্মিলন ঘটিয়েছেন। তাঁর লেখা অনন্য এক উপায়ে আমাদের অন্তর্দৃষ্টিকে নিয়ে যায় অনন্য এক জগতে। তাঁর লেখা জটিলতায় পরিপূর্ণ। তিনি উদ্ভট কল্পনা এবং বাস্তবতার মিশ্রণ ঘটিয়ে অন্য এক জগতে আমাদের নিয়ে যান।'
সুইডিশ একাডেমী টেলিফোনে যোগাযোগ করলে মো ইয়ান খুব সংক্ষেপে তাঁর অনুভূতি প্রকাশ করে বলেন, 'আমি অভিভূত, আনন্দে আত্মহারা এবং সেই সঙ্গে আতঙ্কগ্রস্তও।'
মো ইয়ান জন্মগ্রহণ করেন ১৯৫৫ সালে। বেড়ে ওঠেন চীনের শানদং প্রদেশের গাওমি গ্রামে। তিনি একজন কৃষকের সন্তান। তাঁর স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছিল ১২ বছর বয়সে, যখন চীনে সাংস্কৃতিক বিপ্লবের ঝঞ্ঝা বইছিল। স্কুল ছেড়ে কিছুদিন তিনি কৃষিকাজ করেন এবং পরে কারখানার কাজে যোগ দেন। ১৯৭৬ সালে তিনি চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মিতে যোগ দেন এবং মূলত সেখান থেকেই শুরু হয় তাঁর হাঁটিহাঁটি পা পা করে লেখার অভ্যাস। ইয়ানের লেখার মূল অবলম্বন তাঁর অন্তর্দৃষ্টির অসাধারণ প্রাখর্য, তির্যকতা। এটা তিনি লেখনীতে ফুটিয়ে তোলেন এক অসাধারণ, বিস্ময়কর উপায়ে। এমনটা শুধু সম্ভব হয় প্রতিভাধর শিল্পীর পক্ষেই। সাহিত্য পত্রিকায় তাঁর প্রথম ছোট গল্প প্রকাশিত হয় ১৯৮১ সালে।
লেখক হিসেবে তাঁর পরিচিতি ও যশ আসে ১৯৮৬ সালে রেড সোরগাম নামের ছোট গল্পের বইয়ের মাধ্যমে। বইটি ইংরেজিতে অনূদিত হয় ১৯৯৪ সালে। এই বই অবলম্বনে পরে চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছিলেন বিখ্যাত পরিচালক ঝাং ইমোউ এবং সেটি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বেশ সাড়া ফেলেছিল। আধুনিক চীনে ইয়ানই একমাত্র সাহসী লেখক, যাঁর নাম নিতে হয় সর্বাগ্রে। মূল নাম মো ইয়ান হলেও গুয়ান মোয়ে ছদ্মনামে তিনি লিখেছেন বেশকিছু অসাধারণ উপন্যাস ও প্রবন্ধ। সমসাময়িককালে তাঁর কিছু লেখার কথা উল্লেখ করে সুইডিশ একাডেমী বলে, সেগুলো বিধ্বংসী এবং তীক্ষ্ন। চীনের বর্তমান সমাজব্যবস্থার ক্ষুরধার সমালোচনা বলেই এগুলোকে গণ্য করা যায়।
রেড সোরগাম বা লাল জোয়ার/লাল ভুট্টা বইটির পটভূমিই লেখককে এনে দিয়েছে সম্মানজনক নোবেল বিজয়ের গৌরব। গল্পটি বিশের দশকের ঘটনাবহুল বিভিন্নতার সংমিশ্রণে মোট পাঁচটি অংশে গাঁথা, যেখানে ফুটে উঠেছে চীনে জাপানি দখলদারির পাশাপাশি শ্রমিক শ্রেণীর দুর্বিষহ জীবনের গল্প। ১৯৯৬ সালে প্রকাশিত তাঁর আরেকটি গল্পগ্রন্থ ইংরেজিতে অনূদিত হয় ২০০৪ সালে বিগ ব্রেস্ট অ্যান্ড ওয়াইড হিপ নামে। এই গল্পের বর্ণনায় তিনি ফুটিয়ে তুলেছিলেন বিশের দশকের একটি একক পরিবারের জীবনচিত্র।
তাঁর উল্লেখযোগ্য কয়েকটি বইয়ের মধ্যে রয়েছে দ্য গারলিক ব্যালাডস (১৯৯৫), এঙ্প্লোশানস অ্যান্ড আদার স্টোরিজ, দ্য রিপাবলিক অব ওয়াইন (২০০০) এবং লাইফ অ্যান্ড ডেথ আর উইয়ারিং মি আউট (২০০৮)।
ইয়ানের সর্বশেষ উপন্যাস ফ্রগ প্রকাশিত হয়েছে ২০০৯ সালে। জন্মনিয়ন্ত্রণের নামে নির্মম এক সন্তান নীতির প্রবঞ্চনা এবং বন্ধ্যাকরণ ও গর্ভপাতে বাধ্য করেন যে সরকারি কর্মকর্তারা, এ নীতি বাস্তবায়ন করেন তাঁদের গল্পই এই উপন্যাসের উপজীব্য।
এমন সব বিতর্কিত বিষয় নিয়ে লেখালেখি করলেও শাসকগোষ্ঠীর খুব বেশি রোষানলে পড়তে হয়নি ইয়ানকে। কারণ, রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা পাওয়া চীনা লেখক সংঘের ভাইস প্রেসিডেন্ট তিনি। যদিও তাঁর বেশ কয়েকটি বই নিষিদ্ধ করা হয় চীনে।
আগামী ১০ ডিসেম্বর স্টকহোমে মো ইয়ান পুরস্কার গ্রহণ করতে আসবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন। (খবর : কালের কণ্ঠ ও প্রথম আলো)

সেই কবে সাহিত্যে নোবেল পেয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।বাংলায় এরপর আর কেউ নোবেল পাননি।আমরা আশাবাদী, আবারও কোনো বাংলা সাহিত্যিক নোবেল জয় করবেন।হুমায়ূন আহমেদের কথা বারবার মনে পড়ছে।সাহিত্যে নোবেল পাওয়ার যোগ্য ছিলেন তিনি।
কবি ও সাহিত্যিক আল মাহমুদও আছেন নোবেল পাওয়ার মতো।জানি না কবে নোবেল কমিটি এঁদের বিবেচনা করবেন।
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মপোলব্ধি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৫১

আত্মপোলব্ধি......

একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !

লিখেছেন হাসানুর, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩২



হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩৩

আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?

লিখেছেন রাজীব, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৪২

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।

আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×