প্রতিবছর অক্টোবর মাস আসলেই সারা বিশ্বের বিজ্ঞানীদের বুকে ধুকপুক ধুকপুক শুরু হয়ে যায়।
কারণ সেটা নোবেল জয়ের মাস।
কার ভাগ্যে কবে শিকা ছিড়ে, কে জানে!
খুব কাছ থেকে দেখা এমন একজন বিজ্ঞানী ছিলেন আমার পিএইচডির সময়কার ইউনিভার্সিটি অফ ইলিনয় এট আরবানা শ্যাম্পেইনের নিক হলোনিয়াক। তিনি ছিলেন লাইট এমিটিং ডায়োড বা LED এর আবিষ্কর্তা। নোবেল বাদে সব পুরস্কার পেয়েছেন, এটাই খালি বাকি। তাই অক্টোবর এলেই ধরা হয় উনি পাবেন হয়তো। কিন্তু এখনো এবারেও তার ভাগ্যে সেটা জুটলো না।
কিন্তু জুটেছে নীল রঙের এলিডি বাতির আবিষ্কারক তিনজনের কপালে।
LED বাল্বের নানা সুবিধা আছে, খুব ছোট, অনেক কম বিদ্যুৎ খরচ, আর আলো অনেক বেশি। কিন্তু নব্বই এর দশক পর্যন্ত ৩০ বছর ধরে গবেষণা করেও কেউ নীল LED বানাতে পারেনি। কেবল লাল সবুজই হতো। ফলে বাসায় ব্যবহার করার মতো সাদা আলোর জন্য LED বানাতে পারেনি কেউ। অনেকে তো এটাকে রীতিমতো অসম্ভব বলে রায় দিয়ে দিয়েছিলেন।
কিন্তু জাপানের এক বিশ্ববিদ্যালয়ের দুইজন বিজ্ঞানী নব্বই এর দশকের শুরুতে অনেক খেটে খুটে নীল LED বাতি বানাবার কৌশল বের করলেন। তবে সেটা ঠিক সস্তায় সহজে বানানো যায় না। এগিয়ে এলেন এক ছোট্ট ইলেকট্রনিক্স কোম্পানির একজন প্রকৌশলী। বাঘা বাঘা বিজ্ঞানীরা "এইটা করা সম্ভব না" বলে যে ঘোষণা দিয়েছেন, তার তোয়াক্কা না করে তিনি বানিয়ে ফেললেন খুব সস্তায় নীল LED বাতি। আর সব গুলা প্রাথমিক রঙ দিয়ে সাদা আলোর বাল্ব বানাতে আর বাধা রইলো না।
সেই নীল LED বাতির জয়জয়কার তখন থেকেই, সেটা নীল লেজার বানাতে, ব্লু রে ডিভিডি বানাতে, কিংবা অন্য নানা কাজে। আজকের LED টিভি থেকে শুরু করে LED বাল্ব, সেগুলার কোনোটাই সম্ভব হতো না, যদি এই দুইজন বিজ্ঞানী আর এক প্রকৌশলী তাদের স্বপ্ন থেকে যেতেন পিছিয়ে, "বাঘা বাঘা বিশেষজ্ঞ" দের কথাকে বিশ্বাস করে এই কাজ করা অসম্ভব, তা ভেবে বসতেন।
অসম্ভবকে সম্ভব করাই, আপনার, আমার, মানুষের কাজ।
আজ এই বিজ্ঞানী তিনজন পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। নাগয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসামু আকাসাকি, হিরোশি আমানো, এবং বর্তমানে ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়ার সান্তা বারবারা ক্যাম্পাসের অধ্যাপক শুজি নাকামুরা।
কিন্তু আমি আশা করছি অন্য।
জাপানীদের চাইতে আমাদের মেধা তো কম নয়।
গত ৬ বছরে দুইবার জাপানীরা পদার্থবিজ্ঞানের নোবেল জয় করেছে।
আমরা করবো কবে? জ্ঞানে বিজ্ঞানে কবে জয় করবো দুনিয়াকে?
মেধার তো অভাব নাই, তাহলে অভাবটা কী আত্মবিশ্বাসের, চেষ্টার?
আসুন, আমাদের নিজেদের শোনাই, আর শিশুদের শেখাই, জোর গলায়,
-- অসম্ভবকে সম্ভব করাই আমাদের সবার কাজ। --
[মূল লেখা - ফেইসবুক - অক্টোবর ৭, ২০১৪]