ক্যান্টনমেন্টের বাড়িটি ছাড়তে খালেদার এত ভয় কিসের? বাড়িটি তিনি কিভাবে পেয়েছেন তা আজ আর কারও অজানা নয়। প্রথম দিকে আমি বাড়ি ছাড়ার কেসটাকে বাংলাদেশের প্রতিহিংসাপরায়ণ রাজনীতির অংশ ভেবে ভুল করেছিলাম। কিন্তু পরবর্তীতে এটা নিয়ে বিএনপির বিনা যুদ্ধে নাহি দেব সূচাগ্র মেদেনী ভাব দেখে বিষয়টির ভেতরের ইতিহাস জানার আগ্রহ হলো। কিছু নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে যা জানলাম তা এরকম।
মইনুল রোডের সেই বাড়িটিতে জেনারেল জিয়াউর রহমান সস্ত্রীক উঠেছিলেন ১৯৭২ সালে। তখন তিনি সেনবাহিনীর উপপ্রধান ছিলেন। তিন বছর পর ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর তিনি সহসেনাপ্রধান হলেন। একই বছর ২৪ আগস্ট জেনারেল শফিউল্লাহকে সেনাপ্রধানের পদ থেকে সরিয়ে রাষ্ট্রদূত করে বিদেশে পাঠিয়ে দিয়ে নতুন সেনাপ্রধান নিয়োগ করা হলো জেনারেল জিয়াকে। নিয়ম মোতাবেক সেনাপ্রধানের জন্য বরাদ্দকৃত বাসায় তিনি উঠবেন। কিন্তু তিনি উঠলেন না। উপপ্রধানের বাসায় রয়ে গেলেন। তাছাড়া উপপ্রধান পদে কাউকে নিয়োগও দেয়া হয়নি। দিলে হয়ত বাড়িটি ছেড়ে দেওয়ার প্রশ্ন উঠত। অবস্থাটা দাঁড়ালো ব্যক্তি একজন, সরকারী বাড়ি দুটি। একটি সেনপ্রধানের অপরটি উপপ্রধানের।
তারও কিছুদিন পর জেনারেল জিয়া সেনপ্রধান থাকা অবস্থায় যখন প্রেসিডেন্ট বিচারপতি সায়েমকে সরিয়ে নিজেই প্রেসিডেন্ট হলেন তখন তার জন্য আরও একটি বাড়ি বরাদ্দ হলো, বঙ্গভবন। কিন্তু সেখানে তিনি উঠলেন না। আগের বাড়িতেই রয়ে গেলেন। বন্দুকের জোরে ক্ষমতা দখল করেও অন্তত এই ভবনটি যে তিনি দখল করেননি এই জন্য ধন্যবাদ পাবার যোগ্য। অবস্থটা এরকম একব্যক্তির নামে তিনটি সরকারী বাড়ি। প্রথমটিই দখলে রাখলেন। এতে প্রতীয়মান হয়, মইনুল রোডের এই বাড়িটি দখলে রাখার মানসিকতা জেনারেল জিয়া নিজেই পোষণ করতেন। পরে অবশ্য জেনারেল এরশাদ সেনপ্রধানের বাসায় উঠেছিলেন সেনাপ্রধান নিযুক্ত হবার পর।
১৯৮১ সালে জেনারেল জিয়ার অবশ্যম্ভাবী পরিণতির পর তৎকালীন সরকার বাড়িটির দখল অব্যাহত রাখার লক্ষ্য নিয়ে খালেদাকে লিজ হিসেবে বরাদ্দ দেয়। ১৯৭২ সাল থেকে বাড়িটি অদ্যাবধি দখলে রাখার পিছনে রহস্যটি কি? সেখানে কি জিয়া পরিবারের গুপ্তধন লুকায়িত আছে? নাকি জিয়া যে সকল দেশপ্রেমিক সেনাসদস্যদের হত্যা করেছেন তাদের গণকবর আছে? নাকি খালেদা এবং তার পুত্রদ্বয়ের আকাম-কুকামের চিহ্ন আছে? বাড়িটি প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরকে দেয়া হোক। দেখা হোক মাটির নিচে তথাকথিত ভাঙা সুটকেসের মালিকের উত্তরসূরীদের কত সোনা-দানা, মণি-মুক্তা?
বিএনপি রাজনৈতিক ও সাংগঠনিকভাবে এই বাড়িটি রক্ষার জন্য কোমর বেঁধে নেমেছে। নামবেই তো। কারণ এই বাড়িটিই তো বিএনপির জন্মস্থান।জন্মভূমি রক্ষায় তারা শহীদ হতেই চাইবে। রাজপথ উত্তপ্ত করতেই চাইবে। কিন্তু দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং সেনাবাহিনীকে রাজনৈতিক বিতর্কের উর্ধ্বে রাখতে চাইলে গোটা জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে বিএনপিকে এই আত্বঘাতী পথ থেকে ফেরাতেই হবে।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জুন, ২০০৯ রাত ১২:৫৬