আমার সবচেয়ে ভালবাসার স্থান গুলোর মধ্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় অন্যতম। জীবনের শ্রেষঠ দিনগুলো কেটেছে এখানে। ক্যাম্পাস ছাড়ার পরও মায়ার টানে বারবার ছুটে যেতাম সেই সবুজ-শ্যামল চত্তরে। এখনও ক্যাম্পাসের সবকিছুকে একান্ত আপন বলে মনে হয়। ‘আমি জাবি’র ছাত্র’ এটা একসময় গরব করে বলতাম, কিন্তু এখন কাওকে জাবি’র কথা বলতে গেলেই কিছু বিব্রতকর প্রশ্নের সম্মুখিন হতে হয়। কি হচ্ছে জাবি’তে এসব একটার পর একটা! ছাত্রী নির্যাতন এর অপবাদ যেতে না যেতেই ছাত্রলীগের দুই গুরুপের কামড়াকামড়ি! হ্যাঁ, কামড়াকামড়িইত, খাওয়ার জন্যইত এরা কাম্পাসে রাজনীতি করে। ক্যান্টিনে ফাও খাওয়া, হলের দোকানে বাকি খাওয়া, চাঁদাবাজির ভাগ খাওয়া আর নেতার পিছন-পিছন সারা ক্যাম্পাস হেঁটে এসে (ওরা বলে সোডাউন)প্রান্তিক বা ডেইরি ফার্ম গেটে ফ্রী এককাপ চা খাওয়া। একমাত্র ঢাকা-আরিচা সড়ক আটকিয়ে গাড়ী পোড়ান ছাড়া জাতীয় রাজনীতিতে এদের কোন পাত্তা নেই। কিন্তু এই ছাত্ররাজনীতির জন্য কত ছাত্রের জীবন যে নষ্ট হচ্ছে তার ইওত্তা নেই। আজ প্রথম*আলোতে এক ছাত্রের আর্তনাদ পড়লাম, এ শুধু একজন ছাত্রের কথা নয়, এটা সব বিবেকবান ছাত্র-ছাত্রীর মনের কথা। হলের ওইসব বিশাল নেতা, একসময় যাদের পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় ভয়ে পা কাপত, মনে হত কত বড়ই না নেতা! পরে যখন ওইসব কিংবদন্তির নেতাদের অনেককে ঢাকা শহরের রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতে দেখেছি, এর-ওর কাছ থেকে টাকা ধার (অফেরতেযোগ্য) নিয়ে ফকিরের মত জীবন যাপন করতে দেখেছি- খুব মায়া লাগত!
আমার লেখায় যদি কেও মনে আঘাত পান, আমি ক্ষমা চাচ্ছি, কাওকে কষ্ট দেওয়া আমার উদ্দেশ নয়। এগুলো অত্যান্ত বাস্তব কথা যা ক্যাম্পাস লাইফ এ বুঝা যাইনা। আমি দেখেছি কত তুচ্ছ কারনে ছাত্ররা রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ে। কাম্পাসে একটু দাপট দেখান বা হলে একটা সীট পাওয়া অথবা আরও তুচ্ছ কিছু। কাম্পাসে পরিচিত হওয়ার আরও অনেক ভাল উপায় আছে যা পরবর্তী জীবনকেও সুন্দর করে দিতে পারে, সেসব কাজে সময় দাও, প্লিজ আলগা ভাবের পথ ছাড়।
উচ্চশিক্ষার জন্য একটা বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছি ক’য়েক মাস হল। কি সুন্দর একাডেমিক পরিবেশ! মিছিল, মারামারি, দলাদলি এখানে অকল্পনীয়, কেও ক্লাস করছে, কেও ল্যাবএ রিসার্চ নিয়ে ব্যস্ত, কেও কেও আবার দল বেধে কেণ্টিনে আড্ডা দিচ্ছে। খুব কষ্ট লাগে, আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংজ্ঞাটাই পালটিয়ে ফেলেছি। সারা দেশের কথা বাদ দিলাম, বিশ্ববিদ্যালয়ে তো বাছাই করা সব ভালমানুষ গুলোর থাকার কথা, এভাবে চলবে আর কতদিন?
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ সন্ধ্যা ৬:৩১