মানবতা কোথায় হারিয়ে গেছে?
আজকের দিনে কাশ্মীরের পহেলগাঁওতে যে নৃশংস হামলা হয়েছে, সেখানে ২৬ জন নিরীহ পর্যটক প্রাণ হারিয়েছেন। হামলাটি সংঘটিত করেছে তথাকথিত ধর্মের নামে চলা মুসলিম জঙ্গিগোষ্ঠী। এটি নিঃসন্দেহে একটি বর্বরোচিত, কাপুরুষোচিত ও অমানবিক কাজ, যার কোনো ধর্ম, কোনো যুক্তি, কোনো মানবিক ব্যাখ্যা নেই। কিন্তু যতটা না স্তম্ভিত আমরা এই হত্যাকাণ্ডে, তার চেয়ে বেশি হতবাক আমরা হয়ে পড়েছি বাংলাদেশের সামাজিক মাধ্যমে কিছু মানুষের প্রতিক্রিয়ায়।
ফেসবুকে যখন দেখা যায় যে শত শত, হাজার হাজার মানুষ এই হত্যাযজ্ঞে “আলহামদুলিল্লাহ” বলে রিয়্যাক্ট করছে, তখন বোঝা যায় আমাদের সমাজের এক বিরাট অংশ নৈতিকতা, বিবেক এবং মানবতাবোধ থেকে কতটা বিচ্যুত হয়ে গেছে। মানুষ মরছে শুধু ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে আর আমরা আনন্দ প্রকাশ করছি? এটা কি ইসলাম? এটা কি সভ্যতা? এটা কি মানুষ হওয়া?
ধর্ম কখনোই অমানবিকতা শেখায় না। ইসলাম তো আরও স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছে, “একজন নির্দোষ মানুষকে হত্যা করা গোটা মানবজাতিকে হত্যা করার সমান।” তাহলে এইসব মানুষ যারা নিরীহ পর্যটকদের মৃত্যুকে উৎসব হিসেবে দেখছে, তারা কিসের অনুসারী? ধর্মের না বিকৃত ঘৃণার?
আরও ভয়াবহ ব্যাপার হচ্ছে, এই প্রতিক্রিয়াগুলোর বেশিরভাগ এসেছে তরুণ প্রজন্ম থেকে। যারা আগামী দিনের বাংলাদেশ গড়বে, তারা যদি আজ এতটা বিকৃত মানসিকতার শিকার হয়, তবে ভবিষ্যতের সমাজ হবে আরেকটি আফগানিস্তান, আরেকটি সিরিয়া যেখানে বইয়ের চেয়ে বন্দুক, কোরআনের চেয়ে কুপিয়ে মারা, শান্তির চেয়ে সংঘাত থাকবে বেশি।
এই সমাজে আজ মানবতা নিখোঁজ। সহানুভূতি খুঁজতে গেলে পাওয়া যায় হিংস্রতা। প্রতিবেশীর জন্য কাঁদার চেয়ে প্রতিপক্ষের জন্য তালি বাজানোতে্ যেন বেশি আনন্দ। আজ আমরা যদি এই মানসিকতাকে রুখে না দাঁড়াই, তাহলে কাল আমরাও সেই আগুনে পুড়ে যাবো, যেটা আজকে আমরা চুপচাপ দেখে যাচ্ছি।
প্রশাসন নিশ্চুপ, সমাজপতিরা নির্বাক, বুদ্ধিজীবীরা নিরব এই পরিস্থিতি চলতে দেওয়া মানেই মানবতাবিরোধী মানসিকতাকে প্রশ্রয় দেওয়া। এখনই সময় মুখ খুলে বলার, লেখার, প্রতিবাদ করার। আমাদের দরকার কঠোর আইন, প্রয়োজন শিক্ষার মাধ্যম দিয়ে নৈতিকতার চর্চা, এবং সবচেয়ে বেশি দরকার মানুষ হিসেবে মানুষকে দেখার চেতনা।
ধর্মের পরিচয়ে বিচার নয়—মানবতার দৃষ্টিভঙ্গিই হোক আমাদের সমাজের মূল মাপকাঠি। তাহলেই আমরা সভ্যতা ফিরিয়ে আনতে পারব।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১১:৪৭