somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাকশাল, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র।

১১ ই এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ১১:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাকশাল, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাকশাল (BAKSAL - Bangladesh Krishak Sramik Awami League) ও সমাজতন্ত্রের মধ্যে বেশ কিছু মৌলিক মিল ছিল, কারণ বাকশাল প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্যই ছিল একটি সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তোলা।
নীচে তাদের মিলগুলো সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো:
১. একদলীয় শাসনব্যবস্থা
সমাজতন্ত্রে: সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোতে সাধারণত একটি রাজনৈতিক দল রাষ্ট্র পরিচালনা করে, যেমন সোভিয়েত ইউনিয়নে কমিউনিস্ট পার্টি।
বাকশালে: বঙ্গবন্ধু ১৯৭৫ সালে সব রাজনৈতিক দল বিলুপ্ত করে একদলীয় বাকশাল গঠন করেন, যেন রাষ্ট্র পরিচালনায় ঐক্য আসে এবং উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়।
২. অর্থনৈতিক সমতা ও বৈষম্য দূরীকরণ
সমাজতন্ত্রে: ধনী-গরিব বিভাজন কমিয়ে সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরি করা হয়।
বাকশালে: বঙ্গবন্ধু দারিদ্র্য বিমোচন, ভূমি সংস্কার, রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পায়ন ইত্যাদির মাধ্যমে অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেন।
৩. রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত উৎপাদন ও সম্পদ
সমাজতন্ত্রে: রাষ্ট্র প্রধান উৎপাদন ও শিল্প খাতের নিয়ন্ত্রণে থাকে।
বাকশালে: অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করা হয়। কৃষি ও শিল্প খাত রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পরিকল্পনা ছিল।
৪. কৃষক-শ্রমিক শ্রেণির প্রাধান্য
সমাজতন্ত্রে: শ্রমিক ও কৃষক শ্রেণি রাষ্ট্রের ভিত্তি।
বাকশালে: নামেই রয়েছে "কৃষক-শ্রমিক", অর্থাৎ এ দুটি শ্রেণির নেতৃত্বে রাষ্ট্র গঠনের কথা বলা হয়েছিল।
সাম্যবাদী আদর্শের প্রতি ঝোঁক
বঙ্গবন্ধু অনেক সময় বলতেন, “আমাদের সমাজতন্ত্র হবে বাঙালি ধরনের,” অর্থাৎ সোভিয়েত মডেলের অনুসরণ নয়, বরং বাঙালি সংস্কৃতি ও বাস্তবতার সঙ্গে মানানসই সমাজতন্ত্র যার উদ্দেশ্য ছিল শোষণমুক্ত সমাজ।
যে মুলনীতিতে স্বাধীন হলাম।
১. জাতীয়তাবাদ (Nationalism)
“আমি বাঙালি, বাঙালি আমার পরিচয়।”
বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতির পরিচয়, সংস্কৃতি, ভাষা ও ঐতিহ্যের ভিত্তিতে একটি ঐক্যবদ্ধ জাতি গঠনের চেষ্টা করেন।
ধর্মীয় বা সাম্প্রদায়িক পরিচয়ের বদলে তিনি বাঙালি জাতীয়তাবাদকে প্রধান করেন।
২. গণতন্ত্র (Democracy)
তিনি বিশ্বাস করতেন জনগণের ভোটের মাধ্যমে সরকার নির্বাচিত হওয়া উচিত।
বাকশাল প্রতিষ্ঠার সময় একদলীয় শাসন এলেও, তিনি বলেন এটি ছিল "অস্থায়ী ব্যবস্থা" উন্নয়নের স্বার্থে, গণতন্ত্রের বিকল্প নয়।
গণতন্ত্রকে তিনি জনগণের অংশগ্রহণ ও মত প্রকাশের অধিকার হিসেবে দেখতেন।
৩. ধর্মনিরপেক্ষতা (Secularism)
“ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার।”
বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন ধর্ম যেন রাজনীতির হাতিয়ার না হয়।
সকল ধর্মের মানুষ যেন শান্তিতে ও সমানভাবে বসবাস করতে পারেএটাই ছিল লক্ষ্য।
৪. সমাজতন্ত্র (Socialism)
“শোষণের হাত থেকে মানুষকে মুক্ত করব।”
ধনী-গরিব বৈষম্য কমানো, দরিদ্র জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন, এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদের ন্যায্য বণ্টন ছিল সমাজতন্ত্রের মূল উদ্দেশ্য।
কৃষক-শ্রমিক শ্রেণির উন্নয়নকে তিনি সবচেয়ে গুরুত্ব দিতেন।
এই চারটি স্তম্ভ জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র ছিল বঙ্গবন্ধুর রাষ্ট্র গঠনের ভিত্তি।
তাঁর সমাজতন্ত্র ছিল বাংলাদেশের বাস্তবতা অনুযায়ী মানবিক ও শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তৈরি এক বিশেষ মডেল।
মুলনীতি থেকে সরে আসার ফল।
ধর্মনিরপেক্ষতা:
বাংলাদেশ ধর্মনিরপেক্ষতা থেকে সরে আসায় যে বড় ক্ষতিগুলো হয়েছে, সেগুলো হলো।
১.সাম্প্রদায়িকতা বৃদ্ধি: ধর্মনিরপেক্ষতা দুর্বল হওয়ায় সমাজে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা বেড়েছে এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।
২.রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার: রাজনৈতিক দল ও গোষ্ঠীগুলো ধর্মকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে, ফলে বিভাজন ও বিদ্বেষ বাড়ছে।
৩.মৌলবাদী গোষ্ঠীর সক্রিয়তা: ধর্মীয় উগ্রবাদী গোষ্ঠীগুলো আরও সক্রিয় হয়েছে, যার ফলে সমাজে সহিংসতা ও জঙ্গিবাদ ছড়াচ্ছে।
৪.শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে একমুখিতা: ধর্মনিরপেক্ষতা হ্রাস পাওয়ায় শিক্ষাব্যবস্থা ও সংস্কৃতিতে বহুমাত্রিকতা কমেছে, বহুত্ববাদ দুর্বল হয়ে পড়েছে।
৫.আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি ক্ষয়: ধর্মনিরপেক্ষতা থেকে সরে আসার ফলে বাংলাদেশ সহনশীল ও উদার রাষ্ট্র হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে আগের মতো গ্রহণযোগ্যতা হারাচ্ছে।
-- সালাউদ্দিন রাব্বী
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক
বাংলাদেশ কৃষকলীগ
মুন্সীগন্জ জেলা।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ১১:৩৯
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বৃথা হে সাধনা ধীমান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৯ ই মে, ২০২৫ রাত ১০:৩২

বৃথা হে সাধনা ধীমান.....

বিএনপি মিডিয়া সেল এর সদস্য সচিব ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদউদ্দীন চৌধুরী এ্যানী সকল পত্রিকা কতৃপক্ষের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ কর্মসূচি শুরু করেছেন- বিএনপির এ উদ্যোগ নিঃসন্দেহে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি কি দু’জন ভারতীয়র আচরণ দিয়ে পুরো ভারতকে বিচার করব?

লিখেছেন প্রগতি বিশ্বাস, ০৯ ই মে, ২০২৫ রাত ১০:৩৬

সাম্প্রতিককালে একটি আন্তর্জাতিক কমিউনিটিতে যুক্ত হয়ে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনার সুযোগ হয়েছে। এই আন্তর্জাতিক কমিউনিটিতে ভারত এবং চীনের জনসংখ্যাগত আনুপাতিক কারণে অংশগ্রহণ বেশি। এই কমিউনিটিতে ভারত, চীন ছাড়াও পাকিস্তান, নেপাল, ইউক্রেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুদ্ধের মঞ্চে রাজনীতির খেলা: জনগণের বেদনা ও শাসকের বিজয়গাথা

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১০ ই মে, ২০২৫ রাত ১২:০৮


দীর্ঘ তিন বছরের কূটনৈতিক আলোচনার পর ৬ মে ভারত ও যুক্তরাজ্য একটি ঐতিহাসিক বাণিজ্য চুক্তি সাক্ষর করে, যা উভয় দেশের অর্থনীতিতে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে। বৈশ্বিক অর্থনীতির অনিশ্চয়তার মাঝে... ...বাকিটুকু পড়ুন

"মা বড় নাকি বউ বড়", প্রসঙ্গ এএসপি পলাশ সাহার মৃত্যু

লিখেছেন সোহানী, ১০ ই মে, ২০২৫ সকাল ৭:৫৮



এএসপি পলাশ সাহার আত্মহত্যা নিয়ে অনলাইন গরম। কেউ মা'কে দোষারোপ করছে কেউ বউকে। আর কেউ অভাগা পলাশকে দোষ দিচ্ছে। অনেকটা শাবানা জসিমের বাংলা ছবির মতো, "মা বড়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপির রাজনৈতিক ভবিষ্যত কি?

লিখেছেন মেঠোপথ২৩, ১০ ই মে, ২০২৫ বিকাল ৩:৪৯

শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বিএনপি নামে যে দল গঠন করেছিলেন, তা থেকে বিএনপির অবস্থান যোজন যোজন দুরত্বে। তবে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি ক্ষমতায় গিয়ে সুশাষন প্রতিষ্ঠিত না করলেও বিএনপির বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×