somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কথায় কথায় ইসরায়েলি পণ্য বর্জন কতটা যুক্তিযুক্ত?

০৬ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১১:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কথায় কথায় ইসরায়েলি পণ্য বর্জন কতটা যুক্তিযুক্ত?

যে বা যারা কথায় কথায় "ইসরায়েলি পণ্য বর্জন" করার ডাক দেন, তারা হয়তো অত্যন্ত আবেগপ্রবণ, না হয় বাস্তবতা ও তথ্য সম্পর্কে অজ্ঞ (জ্ঞানপাপী)। কারণ, তারা নিজেরাই জানেন না ইসরায়েলি পণ্য বলতে আসলে কী বোঝায়, এবং সেই পণ্যগুলো বাস্তবে কতটা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে গেছে।

ইসরায়েলি প্রযুক্তি আজকের আধুনিক বিশ্বের প্রায় সব খাতে ছড়িয়ে আছে যেমন:

স্মার্টফোন ও ল্যাপটপের চিপ

চিকিৎসা যন্ত্রপাতি ও ওষুধ

সাইবার নিরাপত্তা সিস্টেম

কৃষি ও পানির প্রযুক্তি

এই পণ্য বা প্রযুক্তি সম্পূর্ণভাবে বর্জন করা বাস্তবে প্রায় অসম্ভব কারণ এগুলোর বড় অংশ মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী ব্যবহৃত হচ্ছে।

সুতরাং, না বুঝে শুধু আবেগ দিয়ে “বয়কট” বলাটা যতটা না প্রতিবাদ, তার চেয়ে বেশি নিজেকে বিভ্রান্ত করার নামান্তর। তাই প্রয়োজন, সচেতনতা ও জ্ঞান দিয়ে বিচার করা কোন প্রতিষ্ঠান অবিচারকে সরাসরি সমর্থন করছে এবং কোনটা কেবল প্রযুক্তিগত অংশীদার।


"ইসরায়েল জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে অনেক দূর এগিয়ে গেছে। তাদের কঠোর পরিশ্রম, গবেষণা ও উদ্ভাবনী চিন্তার ফলেই তারা উন্নতির শিখরে পৌঁছেছে। বর্তমানে বিশ্বের বহু উন্নত প্রযুক্তি, সফটওয়্যার, মেডিকেল যন্ত্রপাতি, সামরিক সরঞ্জাম এবং আধুনিক মেশিনারিতে ইসরায়েলি অবদান অপরিহার্য। বলা যায়, অনেক ক্ষেত্রেই ইসরায়েলি প্রযুক্তি ছাড়া আধুনিক পৃথিবীর অনেক কার্যক্রম অচল হয়ে পড়বে।

অথচ, কিছু কিছু মানুষ না বুঝেই ‘বয়কট’ শব্দটি ব্যবহার করে। তারা বোঝে না, যেসব পণ্য ও প্রযুক্তি বর্জন করার কথা বলা হচ্ছে, সেগুলোর অনেকগুলো ইসরায়েলি উদ্ভাবন হলেও বিশ্বের বহু দেশ ও কোম্পানি তা ব্যবহার করছে বা উন্নয়ন করছে যা বাস্তবিকভাবে বর্জন করা প্রায় অসম্ভব। তাই, বয়কটের আগে প্রয়োজন জ্ঞান ও বাস্তবতা বোঝা।"


যুক্তিসম্মত বিশ্লেষণ: ইসরায়েলি পণ্য বয়কট কতটা বাস্তবসম্মত?
ইসরায়েল একটি ছোট দেশ হলেও বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনে তাদের ভূমিকা বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত। তারা বহু আন্তর্জাতিক কোম্পানি, স্টার্টআপ, এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করে। নিচে যুক্তিসহ কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরা হলো:.প্রযুক্তিতে ইসরায়েলের অবদান অপরিহার্য

১।ইসরায়েল চিপ প্রযুক্তি, সাইবার সিকিউরিটি, চিকিৎসা ডিভাইস, কৃষি প্রযুক্তি ও সামরিক সরঞ্জামে অনেক দেশকেই ছাপিয়ে গেছে।
যেমন: Intel, Microsoft, Apple, Google এরা সবাই ইসরায়েলে বড় বড় গবেষণা কেন্দ্র পরিচালনা করে। আপনি যদি স্মার্টফোন ব্যবহার করেন, কিংবা আধুনিক কম্পিউটার তাতে কোনো না কোনোভাবে ইসরায়েলি প্রযুক্তি জড়িত।

২.বয়কটের বাস্তবতা কী?
কেউ যদি বলে "ইসরায়েলি পণ্য বর্জন করো", তাহলে তাকে আগে জানতে হবে কোন পণ্যটি আসলেই ইসরায়েলি?
অনেক কোম্পানি ইসরায়েলি প্রযুক্তি ব্যবহার করলেও তারা নিজস্ব আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড। যেমন: Intel বা HP এরা ইসরায়েলে উৎপাদন করে, কিন্তু মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি।
তাই আপনি যদি সত্যিকারের বয়কট করতে চান, তাহলে আপনাকে স্মার্টফোন, ল্যাপটপ, আধুনিক চিকিৎসা, এমনকি খাদ্য প্রযুক্তি থেকেও সরে যেতে হবে যা প্রায় অসম্ভব।

৩.বয়কট নয়, বরং সচেতন প্রয়োগ প্রয়োজন
বাস্তবতাকে অস্বীকার করে আবেগ দিয়ে সিদ্ধান্ত নিলে ক্ষতি হয় নিজেরই।
বরং আমাদের উচিত:
কোন কোম্পানি অবিচারকে সরাসরি অর্থায়ন করছে কি না, তা যাচাই করা।
অন্ধভাবে নয়, তথ্যভিত্তিকভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া।

৪.জ্ঞান অর্জনই মুসলিমদের প্রকৃত শক্তি
ইতিহাসে মুসলিমরাও এক সময় বিজ্ঞানে নেতৃত্ব দিয়েছিল আলজেবরা, চিকিৎসা, জ্যোতির্বিজ্ঞান, দার্শনিক চিন্তা।
আজ আমাদের পিছিয়ে পড়ার মূল কারণ জ্ঞানচর্চা থেকে সরে আসা। তাই অন্যকে ঘৃণা না করে, নিজেদের মেধা ও প্রযুক্তিতে এগিয়ে নেওয়াই উচিত।
উপসংহার:
ইসরায়েলি পণ্য বর্জন করা এক জটিল বিষয়। না জেনে, না বুঝে আবেগ দিয়ে সিদ্ধান্ত নিলে সেটা আমাদের নিজেদের উন্নতির পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। বরং আমাদের উচিত জ্ঞানচর্চা, উদ্ভাবন, নৈতিকতা ও তথ্যভিত্তিক সচেতনতা দিয়ে এগিয়ে যাওয়া।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১১:৪৬
৮টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব রাজ্যে উত্তেজনা: হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪২

রোম যখন পুড়ছিল নিরো নাকি তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল; গতরাতের ঘটনায় ইউনুস কে কি বাংলার নিরো বলা যায়?



বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদটি সবসময় ছিল চ্যালেঞ্জিং।‌ "আল্লাহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×