somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ব্লগার কালীদাসের রান্না সংক্রান্ত কিছু অদ্ভুত অভিজ্ঞতা :(( X((

৩০ শে মার্চ, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



রাঁধতে ভাল লাগে না বেশিরভাগ সময়ই। আল্লাহপাক অসীম দয়ালু আমার প্রতি, লাকিলি প্রায়ই ছোটখাট খানাপিনার আয়োজন হয়ে যায় ডিপার্টমেন্টে, ভরপেট খেয়ে একবেলা রান্না থেকে বেঁচে যাই আর বাসায় ফেরার সময় উদাস হয়ে ভাবি, মানুষের কেন একটাই পেট! কবে যে বিজ্ঞান দেবে একটা স্পেয়ার পাকস্হলির ব্যবস্হা :-* বা গরুর মত জাবর কাটার ক্ষমতা :((


আদিকালের কথা!!!
পয়লা পয়লা ভাত রেঁধে খাওয়া শুরু করেছি। ফ্রিজে বাক্স ভর্তি মুরগীর ফ্রাই ছিল বাসা থেকে নেয়া, ভাতের সাথে ইয়োগার্ট/সস/কেচাপ, এমনকি মোজ্জারেল্লা মিশিয়ে খেয়ে ফেলি। এরপর মুরগী/মাছ রাঁধা শিখলাম। ভুন্ডাবার। একদিন টের পেলাম পেটে সবজি যাচ্ছে না বেশ কিছুদিন হয়। ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে বাসার কাছের সুপারমার্কেটে গেলাম, সবচেয়ে পছন্দের সবজিগুলোর একটা, বড়সড় একটা ফুলকপি নিয়ে আসলাম। কি সোন্দর, টাটকা, ফেরেশ দেখতে।

সন্ধ্যা সময় ছুরি নিয়ে বিসমিল্লাহ বলে সাইজ করতে বসলাম। আল্লাহরে। সাইজ বড় হলে যে কি বিপদ টের পেলাম কাটার সময়। আধাঘন্টা লাগিয়ে কেটেকুরে ছোট পিসে নিয়ে আসার পর আবিষ্কার করলাম সারা ফ্লোর সাদা গুড়ায় ছেয়ে আছে ফুলকপির। অনেক কষ্ট করে ফ্লোর পরিষ্কার করলাম। এরপর দেখি ফ্লোর আঠা আঠা লাগে। মুছাও সম্ভব না।



সকাল বেলা পাস্তার সাথে ফুলকপির একটা সিম্পল প্রেপ দেখেছিলাম। ভেবেছিলাম সেটাই করব। এরমধ্যে আম্মার কল স্কাইপে। সেটা রিসিভ করতে যেয়ে তামশার চূড়ান্ত, পাস্তার খোলা প্যাকেট থেকে পাস্তা ছড়িয়ে পড়ল সারা ফ্লোরে আবার। দশ মিনিট লাগল সব টোকাতে। মেজাজ চুড়ান্ত খারাপ, আম্মাকে বলেও ফেলেছিলাম স্কাইপে, বিশাল মিসটেক কৈরা ফালাইচি!!

নাহ, সে রাত্রে পরে ভাতই রেঁধেছিলাম। ফুলকপি সেদ্ধ করেছিলাম, খাওয়ার সময় আবিষ্কার করলাম লবণ দিতে ভুলে গিয়েছিলাম /:)


টফু ডিপ ফ্রাই!!!
অতিরিক্ত ভাত খাওয়া ছাড়াও বাংলাদেশি রান্নার দুইটা জিনিষ আনহাইজেনিক। এক; অতিরিক্ত মশলার ব্যবহার, আর দুই অতি ভাজাপোড়া। দুইটাই বাদ দিয়েছি। কারণ: পারিনা ভালমত। মাছ/মাংস যেটাই রাঁধি, দেখি ঝোলে মশলা ভাসে; দেখলেও হাউমাউ করে কাঁদতে ইচ্ছা করে। আর ভাজার সময় ধৈর্য্য/সাহস কোনটাই নেই আগুন লাগার ভয়ে। তবু গত বছর একবার এটেম্পট নিয়ে ফেললাম, টফু ডিপফ্রাই করব। সিআইএ থেকে কঠোর ট্রেনিং নিলাম কিভাবে ডিপফ্রাই করতে হয়। শিখলাম আসল টেকনিক মাস্টার টফুকে টর্চারের ;)

কোনমতেই পানির চিণ্হও আছে এরকম কোন কিছু ডিপফ্রাই করা যাবেনা:: খুবই কনফিউজিং কথাবার্তা। মাছ তো সারাজীবন পানিতেই থাকে!

টফু নিয়া চিপড়াইতে চিপড়াইতে ভাইঙ্গা চুরমার কৈরা ফালাইলাম। এরপর দেখি ময়দা মাখানোর মত টুকরা একটাও আস্তা নাই। তো এই ছোট ছোট দলাগুলোই সাবানের দলার মত হাতের চাপে একসাথে করে ময়দা মাখালাম ভাল করে। এরপর বিসমিল্লাহ বলে ছাড়লাম প্রথম দলাটা......

পয়লা তেলের ছিটাটা পড়ল চশমার কাঁচে :((







আমার এশিয়ান দোস্তরা!!!
এরকম হাজারো অঘটনের পর মুটামুটি কিছু একটা শিখেছি। সব কিছু একসাথে চুলায় পাতিলে ইনপুট দিলে আউটপুট একটা কিছু আসবে। লোকাল বাংলাদেশিরা যখন আমার রান্নার কাহিনী শুনে, আমাকে বর্বর ভাবে। ইউরোপিয়ানরা যখন আমার রান্নার কাহিনী শুনে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থাকে: আমার কথার সাথে বাংলাদেশি খাবারের সাথে মিল পায় না। পুরাই রোবোকপ টাইপের কিছু একটা মনে করে দুই পার্টিই। মুসিবত! যাকগে, আমি খেয়ে পড়ে বেঁচে আছি সেটাই বড় কথা।

ক্যাচাল বাঁধল এ মাসের শুরুতে আবার। পেশাগত কারণে ইউরোপের সুখের জীবন ছেড়ে দুনিয়ার সম্পূর্ণ আরেক মাথায় আসতে হল। ইউরোপের শুভ্র শীতের বদলে সবুজ শরৎ ;) বাসা শেয়ার করি কয়েকজন এশিয়ানের সাথে, লাইফে পয়লাবারের মত। এই এশিয়ানরা তাদের কুইজিনের জন্য ভালই পরিচিত (কোন দেশ জিগায়েন না)। আমার প্রফেসররা আমাকে বলল, তুমি তো লাকি মিয়া, এদের খাওন দাওন তো সেরকম। কিয়ের কি। সন্ধ্যা সময় এরা রাঁধতে বসে। কি রান্ধে এগর খোদায় জানে, সবকিছুতেই পঁচা শামুকের গন্ধ করে। একদিন সন্ধ্যায় আগ্রহের চোটে একটারে বলে ফেললাম মামু কি রান্ধ? কয় মুরগী!!! কৈলাম মুরগী রান্ধ ভাল কথা, পঁচা চাপিলা মাছের গন্ধ করে কেন? ছেমড়া দেখি দাঁত বাইর কৈরা মোনালিসার হাসি হাসে।




সেইদিনই ঠিক করলাম ইউরোপে ফেরার আগে আর রাঁধার দরকার নেই!!



বিব্রতকর উক্তি!!
কয়েক বছর আগের কথা, এক দক্ষিণ ইউরোপিয়ান দেশে গেছি একটা প্রজেক্টে কাজ করতে। যে প্রফেসরের কাছে রিপোর্ট করতে হয়, একদিন আমাকে আর আমার এক কলিগকে ইনভাইট করল দুপুরে তার সাথে লাঞ্চ করতে। রমজান মাস, বিনয়ের সাথে না করলাম কারণ বলে। প্রফেসর বুঝলেন জিনিষটা, কারণ ঐ দেশে মুসলিম কম্যুনিটির সাইজ ভালই। বুঝল না আমার কলিগ। পরের দিন বলল; মিয়া তুমি একটা ছোটলোক, তোমারে ইনভাইট করছে আর তুমি মুখের উপ্রে না করলা। ছিহ।

কেমনে বুঝাই :|


হেল্প লাইন: থামেন, থামেন!! এইটা কুনু স্পাই থ্রিলার না, সিআইএ মানে কালিনারি ইন্সটিটিউট অফ আমেরিকা :D
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে মার্চ, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:০৭
১৩৭টি মন্তব্য ১২৫টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় দেশনায়ক তারেক রহমানকে সম্পৃক্ত করার নেপথ্যে  

লিখেছেন এম টি উল্লাহ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:০৮


আগেই বলেছি ওয়ান ইলেভেনের সরকার এবং আওয়ামীলীগের যবনায় জনাব তারেক রহমানের বিরুদ্ধে পৌনে একশ মামলা হলেও মূলত অভিযোগ দুইটি। প্রথমত, ওই সময়ে এই প্রজন্মের নিকট উপস্থাপন করা হয়েছিল দেশনায়ক তারেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্পকে নিয়ে ব্লগারদের রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



**** এডমিন টিমের ব্লগারেরা আমাকে বরাবরের মতোই টার্গেট করে চলেছে, এভাবেই সামু চলবে। ****

ট্রাম্পের বিজয়ে ইউরোপের লোকজন আমেরিকানদের চেয়ে অনেক অনেক বেশী শংকিত; ট্রাম্প কিভাবে আচরণ করবে ইউরোপিয়ানরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্পের বিজয়, বিশ্ব রাজনীতি এবং বাংলাদেশ প্রসংগ

লিখেছেন সরলপাঠ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২১

ট্রাম্পের বিজয়ে বাংলাদেশে বা দেশের বাহিরে যে সব বাংলাদশীরা উল্লাস করছেন বা কমলার হেরে যাওয়াতে যারা মিম বানাচ্ছেন, তারাই বিগত দিনের বাংলাদেশের ফ্যাসিস্টের সহযোগী। তারা আশায় আছেন ট্রাম্প তাদের ফ্যাসিস্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঠেলার নাম বাবাজী !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩১

এক গ্রামীণ কৃষক জমিদার বাড়িতে খাজনা দিতে যাবে। লোকটি ছিলো ঠোটকাটা যখন তখন বেফাস কথা বা অপ্রিয় বাক্য উচ্চারণ করে ক্যাচাল বাধিয়ে ফেলতে সে ছিলো মহাউস্তাদ। এ জন্য তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৮


পেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×