
প্রথমে একটা গল্প বলি।
এক দেশে ছিল এক ছেলে। সে একদিন এক গ্রামের মাতবরের বাসায় গেল কাজের খোঁজে। মাতবর তাকে কাজ দিতে রাজি হল, কিন্তু তার আগে খোঁজ নিল ছেলেটার ব্যাপারে তার চুরিচামারির দোষ আছে কিনা। ছেলেটা জানাল মাতবরকে ঐ টাইপের কোন দোষ তার নেই, তার অন্য একটা মহা-দোষ আছে, সে বছরে একটা মিথ্যা কথা বলে। মাতবর আর মাতবরের বউ মহা খুশি- এ তো পুরা সোনার টুকরা কাজের ছেলে

দেখতে দেখতে বছর গেল। ছেলেটাও টেনশনে আছে, গতবছর তার কাজে মাতবর দম্পতি খুশি, তাকে খুব বিশ্বাসও করে ওরা। কিন্তু সে খুশি না, কারণ গত বছর কোন বড়সড় মিথ্যা কথা বলা হয়নি। এইবছরে সে তার বেস্ট শট দেয়ার সিদ্ধান্ত নিল।
একদিন সকালে মাতবর গেছে গ্রামের এক বিচারে। ছেলেটা ঘন্টাখানেক পরে যেয়ে মাতবরের কানে কানে বলল, 'খালু সর্বনাশ হয়ে গেছে, খালা না দৈত্য হয়া গেছে। যারে দেখতাছে তারেই ধইরা পেটা ফুটা কইরা নাড়িভুড়ি সব খায়া ফালাইতাছে। বাসার দুইটা ছাগল শেষ কইরা ফালাইছে! বাসায় সবাইরে কইছে, তোগর বাপেরে এই কথা কইলে তোগরেও খামু, ডরের চোটে কেউ কাউরে কইতে সাহস পাইতাছেনা, আমিও জান নিয়া ভাইগা আসছি আপনেরে জানাইতে!' মাতবর বলল, 'যাহ, এইটা কেমনে হয়?' ছেলেটা বলল, 'বিশ্বাস না হইলে চলেন আপনেরে দেখাই!'; বলে মাতবরের বাড়ির পাশের ডোবায় পেট ফুটা হওয়া, নাড়িভুড়িহীন ছাগল দুইটা দেখাল! মাতবর তো ঘটনা দেখে আতংকে হাতপা.... সারাদিন আর বাড়ির ধারেকাছে গেলনা।
এরপর ছেলে গেল মাতবরের বউয়ের কাছে। যেয়ে বলল, 'খালা, খালু না পেটলা দৈত্য হয়া গেছে। ওনার পেটে না দুইটা ফুটা হইছে, ঐটা থিকা দুইটা শুড় বাইর হয়া আসে তারপর যা সামনে পায় তাই ছ্যাড়াব্যাড়া কইরা খায়া ফেলে। সকালে আমি ওনারে নিজের চোখে দেখছি বাসারা ছাগল দুইটারে কেমনে ছ্যাড়াব্যাড়া কইরা ফালাইছে, পিছনের ডোবায় পইড়া আছে এখনো মরা ছাগল দুইটা!' বলে মাতবরের বউকেও নিয়ে সেম ছাগল দুইটা দেখাল। তারপর বলল, 'সকালে আমারে দেইখা ফালাইছিল, দেইখা শুড় বাইর করছিল আমারে খাওনের জন্য, পরে যখন দেখছে আমার শরিলে কিছু নাই আমারে আর খায় নাই, খালি কইছে- বাসার কাউরে কইলে তোরে রাত্রে জালি বানামু! আপনে সাবধানে থাইকেন আর কাউরে কিছু কইয়েন না, কইলে ডরাইব! খালি সাবধান থাইকেন, কেমনে জানি একটা চিল্লানি দেয় তারপরই শুড় দুইটা বাইর হয়া আসে পেট থিকা!' কাহিনী শুনে মাতবরের বউও আতংকে হাতপা......
কাহিনী হয়েছে কি, ঐ ছেলে আগের দিন দুইটা মরা ছাগল পেয়েছিল গ্রামের পাশের নদীর পাড়ে, দেখতে অনেকটা মাতবরের ছাগল দুইটার মত, তখনই এই আইডিয়া তার মাথায় আসে। বাসার ছাগল দুইটা বিক্রি করে দেয় পাশের গ্রামের হাঁটে আর এই মহা কুবুদ্ধির পরিকল্পনা করে।
যাই হোক, রাত হয়ে যাওয়াতে মাতবরের ছেলে মাতবরকে অনেক খুঁজে বের করে নিয়ে আসে বাসায়। মাতবরের বাসার লোকজন সবাই অবাক হয়ে দেখে মাতবরের বউ আর মাতবর খেতে চাচ্ছেনা! তারপর ঘুমানোর টামে দেখা গেল তারা ঘুমাতে যেতে চাচ্ছেনা কেন জানি! অনেকটা জোর করেই তাদের ঘুমাতে পাঠান হল।
বিছানায় উঠে আরেক কাহিনী। দুইজন খাটের দুই কোণায়, মাঝখানে বিশাল ফাঁকা! দুইজনই মনে মনে দুইজনের ভয়ে অস্হির!
একটু পরে দুইজনের মনেই সেম বুদ্ধি আসল। দুইজনই ঘুমের ভান করে নাক ডাকানোর সাউন্ড শুরু করল, ঠিক করে রাখল পার্টনারের কোন উল্টাপাল্টা মুভ দেখলেই ঝেড়ে দৌড় দেবে।
কিন্তু মাতবরের বউ বেশিক্ষণ নিজের অদম্য জানার আগ্রহ চেপে রাখতে পারল না। আলগোছে উঠে, মাতবরের জামা তুলে পেটের দিকে উঁকি মারল দেখতে- কোন জায়গা দিয়ে শুড়টা বের হয়! এই উঁকি মারা দেখে মাতবর মনে করল, বউ মনে হয় পেট ফুঁটা করে নাড়িভুড়ি খেতে উঁকি মেরেছে। একটা চিৎকার দিয়ে লাফিয়ে উঠল মাতবর।
আর মাতবরের চিৎকার শুনে মাতবরের বউ মনে করল এবার মনে হয় মাতবরের পেট থেকে শুড় দুইটা বের হয়ে আসবে তাকে ছ্যাড়াব্যাড়া করতে।
পরের দৃশ্যে দেখা গেল দুইজন দুইদিকে চিৎকার করতে করতে ঝেড়ে দৌড়ে পালাচ্ছে.....মাতবরের চিৎকার শুনে বউ মনে করছে শুড় দুইটা আরো বড় হয়ে তাকে ধরতে আসছে, আর মাতবর মনে করছে ওর বউ মনে হয় ওকে ধরে ফেলল প্রায়, পেট ফুঁটা করে নাড়িভুড়ি খেতে..........

গল্প বললাম। এবার লেটেস্ট দুয়েকটা এরকম আজগুবি কাহিনী বলি, গুজব বলাই শ্রেয়, প্রত্যেকটাই বিভিন্নজনের কাছে শোনা। প্রত্যেকটা শুনেই অনেকক্ষণ মনে মনে হেসেছি, সামনে হাসলে মাইন্ড করতে পারে বলে সামনে হাসিনি


** এই কাহিনীটা বাসার ছোট মেটালফ্রিকটা কয়েকদিন আগে শুনে এসেছে। বড়ই আজগুবি, শুনে বাসার সবার হাসতে হাসতে পেট ব্যাথা হওয়ার দশা। এক কলোনীতে কোন এক বাসায় একজন কমোডে বসেছিল, তখন নাকি কমোডে মানুষের কাটা হাত ভেসে উঠেছিল। যে দেখেছে সে নাকি আতংকে বেশ কিছুদিন টয়লেট ইউজ করতে পারিনি।
** পুরান ঢাকার এক বাসায় নাকি, একই চেহারার লোক কয়েকজন দেখতে পাওয়া যায়। ইভেন নিজের চেহারার সেম লোকও নাকি দেখা যায়! (ঠিকানা পেলে আমার নিজের সেখানে যাওয়ার ইচ্ছা আছে

** ঢাকার এক অনেক পুরান মিষ্টির দোকানে (নামটা ইচ্ছা করেই বলছিনা) নাকি রাত ঠিক ১টায় ভূত আসে মিষ্টি খেতে! ঐ দোকানে কোন কাস্টোমার না থাকলেও তাই তারা রাত ১টার আগে দোকান বন্ধ করেনা, এবং কম্পোলসারি কেউ নাকি আসে প্রতিদিন রাত ১টায়।
** আরেক কলোনীর কাহিনী শুনলাম, সন্ধ্যার পর কোন সুন্দরী মেয়ে ঐ কলোনী একটা নির্দিষ্ট রাস্তা দিয়ে হাঁটলে নাকি একটা ধবধবে সাদা বিড়াল তাকে ফলো করে এবং মানুষের গলায় নাকি কথা বলে, শিষ মারে (লুল ভূত

** এটা ঠিক আজগুবি না, আমার একটা শয়তানি! আমার এক আত্মীয় আছেন, কঠিন কুসংস্কারাচ্ছন্ন, তাকে মানুষ বানানোর ধান্দা আমরা বাদ দিয়েছি অনেক বছর হয়! তার বদ্ধমূল ধারণা কেউ মারা গেলে মৃত ব্যক্তির আত্মা তার বাসার আশেপাশে ঘুরঘুর করে অনেক দিন! এরকম এক বাসায়, তার চোখের সামনে পয়েন্টারের আলো (প্রচলিত ভাষায় লেজার লাইট) খুব ফাস্ট মুভ করিয়েছিলাম সন্ধ্যার দিকে বাসার বারান্দায়, কাজটা যে আমার তিনি টের পাননি।
পরেরদিন তিনি সবাইকে বললেন, আগেরদিন সন্ধ্যায় তিনি নিজের চোখে ঐ ব্যক্তির আত্মাকে বারান্দা দিয়ে যেতে দেখেছেন, ছোট একটা লাল আলোর কণা, সাই করে চলে গিয়েছিল তার চোখের সামনে দিয়ে!
যাই হোক, এই পোস্টের উদ্দেশ্য হচ্ছে বাংলাদেশের আনাচে কানাচে আপনাদের শোনা এরকম উদ্ভট যত গুজব, আজগুবি কাহিনী আছে তাদের একটা কালেকশন বানানো। এই পোস্টের কনসেপ্ট প্রথম মাথায় আসে ব্লগার নাফিজ মুনতাসিরের "রহস্যময় বাংলাদেশ" নামের ইউনিক পোস্টটা দেখার পর, স্পেশালি কয়েকজন কমেন্ট পড়ে আমি পুরা হাহাপগে!
প্রিয় ব্লগারবৃন্দ, শেয়ার করুন নিজেদের জানা এরকম হাস্যকর, উদ্ভট যত গুজব/আজগুবি কাহিনী আছে।

সর্বশেষ এডিট : ২০ শে অক্টোবর, ২০১২ রাত ১২:৩০