আজকের ঘটনাগুলো আমার কলেজ লাইফের, একটা অন্যের, বাকিদুটা সরাসরি আমার নিজের


**********************
ফার্স্ট ইয়ারে ফিজিক্সের এক অতি মহান(!) শিক্ষকের (নামটা আর বললাম না) কাছে পড়তে যেয়ে পরিচয় হয়েছিল রাইফেলস পাবলিকের এক অসাধারণ বাঁদরের সাথে (মোট ২জন অন্য কলেজের ছিল ঢাকা কলেজের ব্যাচে, অন্য কোথাও এলোকেট করতে না পারায় তাদের জায়গা হয়েছিল এই অভাগাদের ব্যাচে

ধরলাম ওর নাম সবুজ। তো ও আমার এক স্পেশাল স্কুলফ্রেন্ডের সাথে সবুজ পরিচিত হয়েছিল একবার আমাদের কলেজে এসে! আমার স্কুল ছিল মতিঝিল মডেল হাইস্কুল। আমার সেই বিশেষ স্কুলফ্রেন্ডটা ছিল বিশালদেহী, ৬ফিট ২/৩ হবে, চওড়াও মাশাল্লাহ সেরকমই। ও ছিল আরেক ঘাঘু পাবলিক, ওকে বাঁদর/শিয়াল/খাটাস/ইতর/ইচড়েপাকা/......কোন ক্লাসেই ফেলা সম্ভব না, এরকম একজন, দুনিয়ার যাবতীয় কর্মকান্ডের সাথে পরিচিত। তো পোস্টে ওর নাম ধরলাম আসাদ! তো রাইফেলসের সবুজ যখন গার্জিয়ান নিয়ে যাওয়ার সমস্যায় পড়ল ও আমার কাছে সাহায্য চাইল আসাদকে ম্যানেজ করে দেয়ার জন্য, ওকে বড় ভাই বানিয়ে নিয়ে যাবে কলেজে, টিচারের কাছে


কলেজে টিচার ওকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনার ছোট ভাই?
জ্বি স্যার!
এতদিন কলেজ কামাই কেন?
স্যার আর বলবেন না! কলেজে উঠে এমন পাংখা গজাইছে, কলেজ ছুটি হয় দুপুরে, আর হে বাসায় যায় সন্ধ্যার পরে। সারাদিন রাস্তায় টু টু কইরা ঘুরে! এমনেই তো টাইফয়েডটা হইল, এর পরে কলেজে কি না কি কয়, সেই ডরে আরো ৩/৪দিন হয়, ঘর থেকে বাইর হয়নাই!!
এরকম হলে তো এই কলেজে পড়া যাবে না। ভর্তির সময়ই আমরা বলে দেই, টানা ** দিনের বেশি এবসেন্ট থাকলে টিসি দেয়া হয়। এরকম ভয়ের জন্য আসবে না, আবার সারাদিন রোদে রোদে ঘুরবে এটা কি ঠিক?
স্যার, আর বইলেন না, বাসায় আমরা সারাদিন ঝাড়ি তাও সোজা হয় না। এই জন্যই রাইফেলসে ভর্তি করছি, এখন এখানে ডরের চোটে আসতে চায় না! স্যার আপনে কোন টেনশন নিয়েন না, আমি তো সারাদিন নানা ঝামেলায় বিজি থাকি, এর কোন খবর রাখতাম না, এখন থেকে রেগুলার আমি এর পড়াশুনা কি অবস্হা খবর রাখব!
হ্যাঁ, হ্যাঁ, আর নাহলে এইচএসসিতে সমস্যা হবে, এমনিতেই সিলেবাস বিশাল, ফাঁকি দিলে তো পাসও করতে পারবেনা!
কিরে শুনছস স্যার কি কয়? আর কলেজ কামাই দিবিনা, রাস্তায় আরেকদিন ঘুইরা জ্বর বানাবি, সোজা আব্বারে কইয়া দিমু! স্যার আমি আজকে আসি, আমার একটু ডিপার্টমেন্টে যাইতে হবে! আব্বা হার্টের রুগী, এর যন্ত্রণায় এমনিতেই সারাক্ষণ রেগে থাকেন। টাইফয়েড হইছে শুইনা কয়েকদিন কিছু বলে নাই, ব্যাস ডরাইছে বইলা কলেজে আসে নাই কয়েকদিন!
আপনি কি করেন?
স্যার, আমি ঢাকা ভার্সিটিতে পড়ি, সয়েল এন্ড এনভায়রনমেন্ট থেকে এইবার অনার্স ফাইনাল দিলাম


আচ্ছা, ঠিক আছে, আসেন তাহলে!
জ্বি স্যার, আসি তাইলে, ঐ তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরিস, স্যার আসি, স্লামালাইকুম!
এখন ঘটনা হয়েছে কি, ঐ সেকশনে আমাদের মডেলের বেশ কিছু ফ্রেন্ড ছিল, ওরা আসাদকে চিনত, এবং ওর কথাবার্তা শুনে অনেক কষ্টে হাসি চেপে রাখছিল



*******************
আরেকটা বলি। এটা আমার নিজের ঘটনা অবশ্য। এক টিচার, ফিজিক্সের, ক্লাশে বড় বেশি হম্বিতম্বি করতেন ফার্স্ট ইয়ারে, সেকেন্ড ইয়ারে ওনার কোন ক্লাশ ছিলনা আমাদের সাথে। ওনার বাসায় একদিন বাথরুম করতে গিয়েছিলাম! এলিফ্যান্ট রোড থেকে হেঁটে নিলক্ষেত আসছিলাম, বেশ বাথরুম পাওয়ায় ভাবলাম, স্যারের সাথে একটু শয়তানি করে যাই


**************************
এর পরেরটা আমার এক মহা কুকীর্তি! ইমাম স্যার, দেবনাথ স্যার দুই স্যারের ব্যাচেই বেশ কিছু মেয়ে ছিল। আমার ঢাকা কলেজ মেগাসিরিয়ালের ৭ম পর্বে বলা আমার সেই বিখ্যাত চাঁপা বন্ধু


আমি চাঁপাকে মোহাম্মদপুর থানার ফোন নাম্বার দিলাম। দিয়ে বললাম, এই নাম্বারটা হলিক্রসের একটা মেয়ের,নাম তিশমা



৪/৫দিন পরে ওকে জিজ্ঞেস করলাম কিরে ঘটনা কি? ফোন করেছিলি? ও বলল , হ্যাঁ করেছিলাম। মেয়েটা খুব ভাল, অনেকক্ষণ কথা হল একদিন। কাল আবার করব! ওদের পড়াশুনার অনেক চাপ, বাসাতেও নানা ঝামেলা, এসব নিয়েই কথা হল! দোস্ত, তোরে অনেক থ্যাংকস। বলে একটা চপও খাওয়াল!!
আমি কিঞ্চিত চিন্তায় পড়লাম! এটা কেমনে সম্ভব, আমি নিজে মোহাম্মদপুর থানার ফোন নাম্বার নিজে ফোন করে শিওর হয়ে দিয়েছি! পরেরদিন আসল ঘটনা বের হল। ও ওর আরেক ফ্রেন্ডের বাসা থেকে ফোন করেছিল। লাউডস্পীকার চালু রেখে ফোন করেছিল, ঐ ফ্রেন্ডকে দেখাতে চেয়েছিল, কেমনে মেয়েদের সাথে ইন্ট্রোডিউস করতে হয়। ১ঘন্টা ট্রাই করেছে, কেউ ধরেনি। ১ঘন্টা পরে একজন ধরে জানতে চেয়েছিল, হ্যাঁলো, কে? ও খুব ভদ্র ভাষায় জানতে চেয়েছিল এটা কি তিশমাদের বাসা? ওপাশ থেকে বাজখাই গলায় উত্তর এসেছিল, না। ও তখন রেখে আবার ডায়াল করে তিশমাকে চাইলে ওপাশ থেকে জঘন্য একটা গলি দিয়ে বলেছিল, এইটা থানা, এইখানে মাইয়া নিয়া ব্যবসা করি নাকি? হালা, দালাল পাইছ আমগরে? ***** ***। নাম্বার শিওর না হয়া বারবার ফোন করেন কে? তারপর রাখতে রাখতে বলেছিল 'হালা পাবলিক!'
পরে শুনে আমরা হাসতে হাসতে শেষ! মানুষ নিজের চাঁপা ঢাকার জন্য কত ট্রাই-না করে! এরপরও বেশ কিছুদিন জানতে চাইল বলত, এখনো ফোনে কথা হয় মাঝে মাঝে। আমাকেও করেছে একদিন। ওর এই নেচারগুলো এখনো আছে, অনেকটা আগের মতই!
বি.দ্র: আমার সব পোস্টের মত এখানেও সবকটাই ছদ্মনাম ব্যবহার করেছি (আসল নাম দিয়ে গণধোলাই খেতে চাইনা


সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মার্চ, ২০১২ সকাল ৭:৫২