আজকের ঘটনাগুলো আমার কলেজ লাইফের, একটা অন্যের, বাকিদুটা সরাসরি আমার নিজের! টিচারদের বাসায় ঢাকা কলেজের স্টুডেন্টদের ব্যাচে পড়ার সময়কার কয়েকটা মজার ঘটনা নিয়েই আজকের পোস্ট!
**********************
ফার্স্ট ইয়ারে ফিজিক্সের এক অতি মহান(!) শিক্ষকের (নামটা আর বললাম না) কাছে পড়তে যেয়ে পরিচয় হয়েছিল রাইফেলস পাবলিকের এক অসাধারণ বাঁদরের সাথে (মোট ২জন অন্য কলেজের ছিল ঢাকা কলেজের ব্যাচে, অন্য কোথাও এলোকেট করতে না পারায় তাদের জায়গা হয়েছিল এই অভাগাদের ব্যাচে)। এত কড়া কলেজ, সে তারপরও টানা ২০দিন কলেজ পালিয়েছিল। ২০দিন পরে যখন কলেজে গেল পায়ের ধুলা দিয়ে ধন্য করতে, ক্লাশটিচার ওকে সোজা নোটিশ দিয়ে দিলেন, গার্জিয়ান নিয়ে যেতে, অন্যথায় নাম কাটা যাবে!
ধরলাম ওর নাম সবুজ। তো ও আমার এক স্পেশাল স্কুলফ্রেন্ডের সাথে সবুজ পরিচিত হয়েছিল একবার আমাদের কলেজে এসে! আমার স্কুল ছিল মতিঝিল মডেল হাইস্কুল। আমার সেই বিশেষ স্কুলফ্রেন্ডটা ছিল বিশালদেহী, ৬ফিট ২/৩ হবে, চওড়াও মাশাল্লাহ সেরকমই। ও ছিল আরেক ঘাঘু পাবলিক, ওকে বাঁদর/শিয়াল/খাটাস/ইতর/ইচড়েপাকা/......কোন ক্লাসেই ফেলা সম্ভব না, এরকম একজন, দুনিয়ার যাবতীয় কর্মকান্ডের সাথে পরিচিত। তো পোস্টে ওর নাম ধরলাম আসাদ! তো রাইফেলসের সবুজ যখন গার্জিয়ান নিয়ে যাওয়ার সমস্যায় পড়ল ও আমার কাছে সাহায্য চাইল আসাদকে ম্যানেজ করে দেয়ার জন্য, ওকে বড় ভাই বানিয়ে নিয়ে যাবে কলেজে, টিচারের কাছে। আসাদের ফিগার, বেশভুষা দেখলে ওরকম মনে করাটা অস্বাভাবিক কিছু না, পড়ত বিশলা কার্বন ফ্রেমের চশমা, কথা-বার্তা তো মাশাল্লাহ আছেই!! আসাদ রাজি হল বড়ভাই সাজতে (ও আসলে এই ধরণের কাজ এনজয় করত)! রাইফেলসে গিয়ে কি ঘটল সেটা বলি!!
কলেজে টিচার ওকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনার ছোট ভাই?
জ্বি স্যার!
এতদিন কলেজ কামাই কেন?
স্যার আর বলবেন না! কলেজে উঠে এমন পাংখা গজাইছে, কলেজ ছুটি হয় দুপুরে, আর হে বাসায় যায় সন্ধ্যার পরে। সারাদিন রাস্তায় টু টু কইরা ঘুরে! এমনেই তো টাইফয়েডটা হইল, এর পরে কলেজে কি না কি কয়, সেই ডরে আরো ৩/৪দিন হয়, ঘর থেকে বাইর হয়নাই!!
এরকম হলে তো এই কলেজে পড়া যাবে না। ভর্তির সময়ই আমরা বলে দেই, টানা ** দিনের বেশি এবসেন্ট থাকলে টিসি দেয়া হয়। এরকম ভয়ের জন্য আসবে না, আবার সারাদিন রোদে রোদে ঘুরবে এটা কি ঠিক?
স্যার, আর বইলেন না, বাসায় আমরা সারাদিন ঝাড়ি তাও সোজা হয় না। এই জন্যই রাইফেলসে ভর্তি করছি, এখন এখানে ডরের চোটে আসতে চায় না! স্যার আপনে কোন টেনশন নিয়েন না, আমি তো সারাদিন নানা ঝামেলায় বিজি থাকি, এর কোন খবর রাখতাম না, এখন থেকে রেগুলার আমি এর পড়াশুনা কি অবস্হা খবর রাখব!
হ্যাঁ, হ্যাঁ, আর নাহলে এইচএসসিতে সমস্যা হবে, এমনিতেই সিলেবাস বিশাল, ফাঁকি দিলে তো পাসও করতে পারবেনা!
কিরে শুনছস স্যার কি কয়? আর কলেজ কামাই দিবিনা, রাস্তায় আরেকদিন ঘুইরা জ্বর বানাবি, সোজা আব্বারে কইয়া দিমু! স্যার আমি আজকে আসি, আমার একটু ডিপার্টমেন্টে যাইতে হবে! আব্বা হার্টের রুগী, এর যন্ত্রণায় এমনিতেই সারাক্ষণ রেগে থাকেন। টাইফয়েড হইছে শুইনা কয়েকদিন কিছু বলে নাই, ব্যাস ডরাইছে বইলা কলেজে আসে নাই কয়েকদিন!
আপনি কি করেন?
স্যার, আমি ঢাকা ভার্সিটিতে পড়ি, সয়েল এন্ড এনভায়রনমেন্ট থেকে এইবার অনার্স ফাইনাল দিলাম । ডিপার্টমেন্টের এক স্যার আজকে দেখা করতে বলছেন একটা কাজে, মাঝখানে এই শয়তানটার জন্য কলেজে আসলাম।
আচ্ছা, ঠিক আছে, আসেন তাহলে!
জ্বি স্যার, আসি তাইলে, ঐ তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরিস, স্যার আসি, স্লামালাইকুম!
এখন ঘটনা হয়েছে কি, ঐ সেকশনে আমাদের মডেলের বেশ কিছু ফ্রেন্ড ছিল, ওরা আসাদকে চিনত, এবং ওর কথাবার্তা শুনে অনেক কষ্টে হাসি চেপে রাখছিল! আসাদ অবশ্য যাওয়ার আগে এক্স-মডেল দুইজনের উদ্দেশ্য স্যারের অলক্ষ্যে চোখ টিপ মেরে বের হয়েছিল। ও বের হওয়ার পর মডেলের যে ৪/৫জন ছিল, হো হো করে হেসে স্যারের ঝাড়ি খেয়েছিল! সত্যি ঘটনা জানলে কি হত, কে জানে?
*******************
আরেকটা বলি। এটা আমার নিজের ঘটনা অবশ্য। এক টিচার, ফিজিক্সের, ক্লাশে বড় বেশি হম্বিতম্বি করতেন ফার্স্ট ইয়ারে, সেকেন্ড ইয়ারে ওনার কোন ক্লাশ ছিলনা আমাদের সাথে। ওনার বাসায় একদিন বাথরুম করতে গিয়েছিলাম! এলিফ্যান্ট রোড থেকে হেঁটে নিলক্ষেত আসছিলাম, বেশ বাথরুম পাওয়ায় ভাবলাম, স্যারের সাথে একটু শয়তানি করে যাই (আমি তখন রানা স্যারের কাছে পড়ি, সেকেন্ড ইয়ারে ঢুকেছিলাম স্যারের এক ব্যাচে)। তো সোজা স্যারের বাসায় (রাস্তায় সাইনবোর্ড দেখে বাসা বের করেছিলাম!!) যেয়ে বললাম স্যার আমি সিটি কলেজের, আমি আপনার কাছে পড়তে চাই, শনি/সোম/বুধের কোন ব্যাচে জায়গা হবে কি? স্যার বললেন, বিকালের ব্যাচে ফাঁকা আছে, কিন্তু প্রথম দিকের অনেক কিছু পড়ানো শেষ (সম্ভবত কারেন্টের চাপ্টারগুলো!)। ঢাকা কলেজের ব্যাচ, চাইলে আসতে পার! আমি বললাম, জ্বি স্যার, কি আর করা, ওটাতেই ঢুকব! তো স্যার আমাকে নাম/ঠিকানা লিখার ফরম দিলেন। আমি নাম লিখে ঠিকানা লিখার আগে বললাম, স্যার, একটু টয়লেটে যাওয়া যাবে? স্যার বললেন, হ্যাঁ, হ্যাঁ, একটু দাঁড়াও, বলে ব্যবস্হা করে দিলেন। আমি টয়লেট থেকে বের হয়ে ঠিকানার ঘরে গুলশানের এক বানানো ঠিকানা দিয়ে চিরতরে গায়েব হয়ে গেলাম, কলেজেও স্যারের সামনে আর পরিনি পরের ৪মাসে উল্লেখ্য, নামের মত ঠিকানাটাও ভুয়া ছিল, জানি না শুনলে আপনারা কি বলবেন, নাম লিখেছিলাম, এরশাদুর রহমান (জয়)!!
**************************
এর পরেরটা আমার এক মহা কুকীর্তি! ইমাম স্যার, দেবনাথ স্যার দুই স্যারের ব্যাচেই বেশ কিছু মেয়ে ছিল। আমার ঢাকা কলেজ মেগাসিরিয়ালের ৭ম পর্বে বলা আমার সেই বিখ্যাত চাঁপা বন্ধু, চাঁপা কবির আমাকে একদিন ধরল, 'দোস্ত, তোমার এত মেয়ের সাথে পরিচয়, আর আমারে দেখ, কোন ব্যাচেই কোন মেয়ে নাই। তুই, আমারে কোন মেয়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দে না, প্লীজ!' আমি মানুষের সাথে কিছু কিছু ইন্টারএকশন খুব একটা সহজে করতে পারিনা, তার মাঝে একটা হল একজনের সাথে আরেকজনকে পরিচয় করিয়ে দেয়া। আমি নিজেই মেয়েদের সাথে তেমন একটা কথাটথা বলতাম না, কলেজের ছেলেগুলোর সাথেই যা একটু সখ্যতা ছিল, আর সময় কই? মেয়েদের সাথে সম্পর্ক ছিল অনেকটা হাই-হ্যালো টাইপের! এখন চাঁপাও দেখি নাছোড়বান্দা। তো ওকে আমি দিচ্ছি দেব বলে ঘুরাতে লাগলাম। একদিন আমাকে সরাসরি ধরল, পরিচয় করিয়ে দিলে তোর সমস্যা কি? এরপর তো আর পারা যায়না, তো আমি বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে পুরানো টেকনিকটার সাহায্য নিলাম! এই জমানায় ম্যাক্সিমাম কেসেই এটা কাজ করেনা, কিন্তু চাঁপার নিজের একটু ফুটানি রোগ ছিল, ওর বেলায় জোস কাজ করল!!
আমি চাঁপাকে মোহাম্মদপুর থানার ফোন নাম্বার দিলাম। দিয়ে বললাম, এই নাম্বারটা হলিক্রসের একটা মেয়ের,নাম তিশমা (তখনও এই গজব বাংলাদেশে পরিচিত না! কি বুঝে তখন এই নাম বলেছিলাম কে জানে?)। সন্ধ্যার পর ওর বাবা সাধারণত থাকেনা বাসায়, তখন ফোন করিস, সেটাই ভাল হবে, এমনিতেও ওর বাবা কিছু মন করেন না ফোন করলে, আমি দুয়েকদিন করেছি, ওর বাবাই ধরেছিল! আর তোর আসল নাম বলিনি, যদি পরে কোন ঝগড়া হয়, তোর আসল নাম তোর ব্যাকাপ হিসেবে নতুন ফ্রেন্ডশীপ করতে কাজে দেবে। তোর নাম বলেছি কাসিম খান, নটরড্যামে পড়িস! ও কিছুটা রেগে গেল নামের ধরণ শুনে। তো আমি বুঝালাম, আমি তিশমাকে বুঝয়েছি, তোদের ফ্যামিলিতে একটু পুরান ট্রেন্ডের নাম রাখারই ধারা! তো চাঁপা মানল, বলল দুয়েকদিনের মাঝেই ফোন করে কথা বলবে! (খা, গাধা কুনখানকার!)
৪/৫দিন পরে ওকে জিজ্ঞেস করলাম কিরে ঘটনা কি? ফোন করেছিলি? ও বলল , হ্যাঁ করেছিলাম। মেয়েটা খুব ভাল, অনেকক্ষণ কথা হল একদিন। কাল আবার করব! ওদের পড়াশুনার অনেক চাপ, বাসাতেও নানা ঝামেলা, এসব নিয়েই কথা হল! দোস্ত, তোরে অনেক থ্যাংকস। বলে একটা চপও খাওয়াল!!
আমি কিঞ্চিত চিন্তায় পড়লাম! এটা কেমনে সম্ভব, আমি নিজে মোহাম্মদপুর থানার ফোন নাম্বার নিজে ফোন করে শিওর হয়ে দিয়েছি! পরেরদিন আসল ঘটনা বের হল। ও ওর আরেক ফ্রেন্ডের বাসা থেকে ফোন করেছিল। লাউডস্পীকার চালু রেখে ফোন করেছিল, ঐ ফ্রেন্ডকে দেখাতে চেয়েছিল, কেমনে মেয়েদের সাথে ইন্ট্রোডিউস করতে হয়। ১ঘন্টা ট্রাই করেছে, কেউ ধরেনি। ১ঘন্টা পরে একজন ধরে জানতে চেয়েছিল, হ্যাঁলো, কে? ও খুব ভদ্র ভাষায় জানতে চেয়েছিল এটা কি তিশমাদের বাসা? ওপাশ থেকে বাজখাই গলায় উত্তর এসেছিল, না। ও তখন রেখে আবার ডায়াল করে তিশমাকে চাইলে ওপাশ থেকে জঘন্য একটা গলি দিয়ে বলেছিল, এইটা থানা, এইখানে মাইয়া নিয়া ব্যবসা করি নাকি? হালা, দালাল পাইছ আমগরে? ***** ***। নাম্বার শিওর না হয়া বারবার ফোন করেন কে? তারপর রাখতে রাখতে বলেছিল 'হালা পাবলিক!'
পরে শুনে আমরা হাসতে হাসতে শেষ! মানুষ নিজের চাঁপা ঢাকার জন্য কত ট্রাই-না করে! এরপরও বেশ কিছুদিন জানতে চাইল বলত, এখনো ফোনে কথা হয় মাঝে মাঝে। আমাকেও করেছে একদিন। ওর এই নেচারগুলো এখনো আছে, অনেকটা আগের মতই!
বি.দ্র: আমার সব পোস্টের মত এখানেও সবকটাই ছদ্মনাম ব্যবহার করেছি (আসল নাম দিয়ে গণধোলাই খেতে চাইনা)। আর, আরেকটা কথা, এই পোস্ট আসলে লিখেছিলাম আমার ঢাকা কলেজ মেগাসিরিয়ালটার জন্য, কিন্তু লিখে অনেক চিন্তা করে দেখলাম, এটা আসলে ঐ মেগাসিরিয়ালের বিষয়বস্তুর সাথে খাপ খাচ্ছেনা! তাই ফাউ একটা ফান পোস্ট সৃষ্টি হয়ে গেল
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মার্চ, ২০১২ সকাল ৭:৫২