somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শুভ্র ও মুনিয়ার গল্প

২৪ শে এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বাইরে হুলুস্থুল কান্ড হয়ে গেছে। সকাল ১০টা থেকে আমার বাবা বাথরুমে আটকা পড়ে আছেন, এখন ঘড়িতে ১২ টা ২৫ বাজে। দুই ঘন্টা ২৫ মিনিট যাবৎ তিনি বাথরুমে আটকে আছেন, বাড়িতে হুলুস্থুল কান্ড লেগে যাওয়াই স্বাভাবিক। অথচ আমি দরজা আটকে খাটে উপুর হয়ে শুয়ে আছি, আর ল্যাপটপে এ্যানিমেশন মুভি দেখছি।

এ পর্যায়ে পরিচয়পর্ব সেরে নেয়া যাক। আমার নাম মুনিয়া। এ নামটা আমার মোটেও পছন্দ না, কিন্তু এই নামটা আমার দাদুর দেয়া, আমার জন্মের দুমাস পর আমার দাদু মারা যান। আমার বাবার নাম মোঃ আনিসুর রহমান। এ্যান্টিকের বিজনেস করেন। দেশের আনাচে কানাচে থেকে এ্যান্টিক কিনে এনে বিক্রি করেন। এছাড়া আমাদের একটা গার্মেন্টসও আছে, মেহনাজ গার্মেন্টস লি.। তবে আমার ধারনা বাবার এ্যান্টিক বিজনেসটা জাষ্ট আইওয়াশ। বাবা ঘুরে বেড়াতে খুব পছন্দ করেন, প্রতিটা ডিলের জন্য ৪-৫ জন বন্ধুবান্ধব সাথে নিয়ে যান। আমার বাবার একটা উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো, তিনি বিদেশী প্রোডাক্টের জন্য একদম পাগল। ফরেন যে কোন প্রোডাক্ট, সেটা চিরুনি হোক আর টুথপেষ্ট হোক, তার অতি পছন্দের বিষয়।
আমার মায়ের নাম মেহনাজ পারভীন। মিনিটে মিনিটে আশ্চর্য হওয়া ও যে কোন তুচ্ছ বিষয়ে চেচামেচি করে বাড়ী মাথায় তোলায় তার জুড়ি মেলা ভার। টিভিতে নতুন রেসিপি দেখে এক্সপেরিমেন্ট করা তার অতি প্রিয় বিষয়। বাসায় আমরা এই তিনজন ছাড়াও আরেকজন আছেন, আমাদের বুয়া। বুয়ার বয়স ৫০ এর মত, সব ব্যাপারেই অতি উৎসাহী এবং গাজাখুরি গল্প বলাতে রীতিমত এক্সপার্ট।

আগেই বলেছি আমার বাবা ফরেন প্রোডাক্টের একদম বড় ফ্যান, ঐযে জাহিদ হাসানের একটা বিজ্ঞাপন ছিল না "ফরেন আজমল"? ঐ রকম। আর এই সুযোগটা নেয় শুভ্র ভাইয়া। কয়দিন পর পর বাবার কাছে একেকটা আইটেম নিয়ে আসে, আর বিদেশী প্রোডক্ট বলে ধরিয়ে দেয়। আমি শিওর এগুলো শুভ্রভাইয়া গুলিস্তান বা বাংলাবাজারের ফুটপাত থেকে জোগাড় করে। এর আগে একবার আফ্রিকান হ্যাট নিয়ে আসছিলো বাবার জন্য। ৭০০/= নিয়ে গেছিল হ্যাটের বদলে। অথচ ঐ একই হ্যাট মতিঝিলের ফুটপাতে মাত্র ৯০ টাকায় বিক্রি হতে দেখেছি।

শুভ্র ভাইয়া আমার দুঃসম্পর্কের খালাত ভাই, খালা-খালু শুভ্র ভাইয়া ছোট থাকতেই রোডএক্সিডেন্টে মারা গেছেন। শুভ্র ভাইয়া আমাদের বাসায় প্রায় সাত বছর ছিল। এখন একটা মেসে উঠেছে অবশ্য, তবে টুকটাক কাজের জন্য বাবা প্রায়ই শুভ্র ভাইয়াকে ডেকে পাঠায়।

শুভ্র ভাইয়ার একটা বিশেষ গুন আছে। সে যে কোন মানুষকে অতি সহজেই বশ করে ফেলতে পারে। বাবাকে ভূয়া সব জিনিষপত্র ফরেন প্রোডাক্ট বলে গছিয়ে দিলেও বাবার কাছে সে ফেরেশতার মত। আর মার কথা কি বলবো, টিভি দেখে একেকটা রেসিপি বানাবে, খেতে চরম অখাদ্য, আমরা কেউ ছুয়েও দেখি না। অথচ শুভ্র ভাইয়া পুরো বাটি খেয়ে মাকে প্রসংশার তোড়ে ভাসিয়ে দিবে। এজন্য মায়ের কাছে শুভ্র ভাইয়ার মত ভালো ছেলেই হয় না।

আমার কাছে শুভ্র ভাইয়া একটা ফ্রড, চিটার। আমি তাকে তেমন পছন্দ করি না। কিন্তু সমস্যা হলো শুভ্র ভাইয়া আমার সাইকোলজিটা কিভাবে যেন ক্যাচ করে ফেলে। আমি কখন কি ভাবছি, কি বলতে চাচ্ছি আগেই বুঝে ফেলে।

বাবা টয়লেটে আটকে আছেন, এই ঘটনাটার পেছনেও শুভ্র ভাইয়ার দোষ আছে। গত সপ্তাহে একটা দরজার লক এনে বাবাকে দিয়ে বলেছে ইটালীর তৈরী লক। সাড়ে তিন হাজার টাকায় গছিয়ে দিয়ে গেছে। এবং আমি শিওর এই লকটা সে কোন ভাঙারীর কাছ থেকে কালেক্ট করেছে। বাবা ঐ "ইটালিয়ান" লক বাথরুমে লাগিয়েছেন। এখন নিজেই আটকে বসে আছেন।

শুভ্র ভাইয়াকে তলব করা হয়েছে, এবং সে আড়াই ঘন্টা পরে চাবিওয়ালা সাথে করে নিয়ে এসেছে।

দুপুর বেলাঃ
শুভ্র ভাইয়াকে পুরো জামাই আদর করা হচ্ছে। বাবার কাছে শুভ্র ভাইয়া এখন ত্রান কর্তা সুপারম্যান। মা নতুন রেসিপি বানাচ্ছে, লাউ দিয়ে চিংড়ির থাই স্যুপ। বাসার সবার নজর এখন তার দিকে, আমার খুব হিংসা হচ্ছে।

হিংসা হওয়াটাই কি স্বাভাবিক না? আজ আমার ১৮ তম জন্মদিন, অথচ কারো মনেই নেই। থাকবেই বা কি করে? সকাল থেকে যা হচ্ছে, সবার নজর এখন রাজপুত্র দখল করে নিয়েছে!

রাত্রে শুভ্র ভাইয়া চলে যাবার সময় আমি গেট পর্যন্ত সাথে সাথে যাচ্ছি। জানি না কেন, কিন্তু যাচ্ছি। যাবার আগে হঠাৎ শুভ্র ভাইয়া আমার হাতে একটা প্যাকেট দিয়ে দিয়ে বলল, "শুভ জন্মদিন! ভেতরে একটা নীল শাড়ি আছে। তুই বলেছিলি তোর নীল শাড়ি খুব পছন্দ।"

আশ্চর্য! চোখে পানি চলে আসছে। এই ফ্রডটা কি সেটা বুঝতে পেরেই আমার দিকে তাকাচ্ছে না?
শুভ্র! ইউ ফ্রড, চিটার আই হেট ইউ।


© রাবণ রাজ
--------------------------------------------------------------

(লেখাটা মনে হয় অগোছালো হয়ে গেল! প্লট পাচ্ছিলাম না। এই প্লটটা মাথায় আসতেই লিখে ফেললাম। সাজানোর তেমন সময় পাইনি। ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।)
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ১১:০৫
১২টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×