-- আপনাদের বলা হয়নি। আমি খুব সহজেই বোরড হয়ে যাই। আমার আর কিছু বলার নেই।
-- শেষটা ঝুলিয়ে রেখে যাবেন?
সানজিদা একটা লম্বা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। এরপর বিরক্তিমাখা চেহারায় দুজন কে দেখলো। কিছু একটা মিসিং পুরো ব্যপারটায়। একটু পরেই মুচকি হাসলো।
-- আজ সিগারেট দেবেন না? ওকে।
তাহমিদ আর সহন একে অপরের দিকে এক বারের জন্য তাকালো। সহন মাথা নাড়লো। এরপর তাহমিদ জিজ্ঞেস করলো?
-- জুই কবে আপনার বাসা থেকে বের হয়ে নিজের বাসায় গিয়েছে?
-- স্যাডি মরবার ৭ দিন পরেই।
-- এই সাতদিনে কী করেছে? আই মিন কোন অদ্ভুত আচরণ,,,,,
-- বই না পড়াই অদ্ভুত আচরণ ওর জন্যে। একদৃষ্টে চেয়ে থাকতো। কখনো কখনো কাদতো।
-- স্যাডির কোন অস্বাভাবিক আচরণ দেখেছেন?
-- আড্ডাতে একটা কল আসতো মাঝে মাঝে। আর স্যাডি ঐ কলটা স্ক্রিনে দেখলেই একটু সময়ের জন্য অফ হয়ে যেতো। আড্ডা বলতে ওরা দুজন কথা বলতো আর আমি পাশে বসে দুজনকে দেখতাম। আর অবাক হতাম এই মেয়ে এতো কথা বলে,,,,,
-- স্যাডি যে ওভারডোজে মারা যায়নি কিভাবে বুঝলেন?
-- আই ডোন্ট নো। হাঞ্চ । সিউর ছিলাম না। ঐ কলটাই গন্ডগোল মনে হয়েছিলো। তারকাটা বা চোখে ঢুকতেই ও খুব কোঅপারেট করেছে। স্যাডি সব ছেড়ে দিয়েছিলো। বোধয় দুমাস আগে থেকেই। আমরা প্রায় একসাথেই থাকতাম। সো,,,
-- আপনি জানতেনও না জুনায়েদ এসবের পেছনে ছিলো কিনা আর এর আগেই,,,,
-- অপ্রয়োজনীয় মানুষের এতো আয়োজন করে বেচে থাকা কী দরকার? কল রেকর্ডে ওর হুমকি ধমকি ছিলো। জুইকে নিয়ে কুতসিত কথাবার্তা আবার থ্রেটস,,,,ওটুকুর জন্যই ওকে জ্যান্ত কোথাও পুতে ফেলার ইচ্ছে হয়েছিলো অস্বীকার করবো না।
-- আপনার চেয়ে জুনায়েদ প্রায় দ্বিগুণ। ড্রাগ ইঞ্জেক্ট করেছিলেন নাকি?
-- মানুষের শরীরে কিছু অদ্ভুত নাজুক জায়গা আছে যেখানে দুবার আঘাত করতে হয়না। তবে তা ঠিক। খুবই ভারী শরীর। অথচ সারাক্ষণ ড্রাগস নিয়ে থাকে। হালকা পাতলা শরীর হলে কাজটা আরো সহজ হতো।
-- সহনের কথাটাই ঠিক মনে হচ্ছে।
-- কোন কথাটা?
-- স্যাডি মারা গেলো। আপনি কিছু করলেন না। যখন জুই আত্মহত্যা করলো,,,,,
সানজিদার সাথে জুইয়ের শেষদিন মনে করার চেস্টা করলো সানজিদা। চশমার পেছনে কালো কালিতে ভরে যাওয়া চোখ গুলো কতো স্পষ্ট সামনে দেখতে পাচ্ছে। অস্থির পায়চারি। তার একমাত্র বন্ধুর শেষ কথা।
-- বাসায় যাবো।
উত্তরে সে বলেছিলো,
-- যা ক'দিন থেকে আয়। তবে এসে পড়িস।
শুধু একবার না বললেই হতো। ভাবলো সে। এই বোকা মেয়েটা শেষদিন পর্যন্ত তার কোন কথা ফেলেনি। কোত্থেকে এলো এই সাহস? ওকে, স্যাডিকে কি সুন্দর মানাতো। কতোবার দূর থেকে দুজনকে দেখেছে ঘন্টার পর ঘন্টা। ডাকলেই শুধু সামনে গিয়ে বসা হতো কেবল। বোকা মেয়েটা। কোনদিন নিজের গা ঘেষে শুয়ে কেনো থাকে এই প্রশ্ন না করা বোকা মেয়েটা,,,,,,ঘামে ভিজে যাওয়ার পরেও ব্যাল্কনিতে বই নিয়ে বসে থাকা সেই বোকা মেয়েটা,,, তার কপালে বই ঠেকিয়ে আপন মনে পড়তে থাকা সাদা শাড়ি পাগল বোকা মেয়েটা,,,
তাহমিদের প্রশ্নে বাস্তবে ফিরে এলো সে।
-- একটা ব্যাপার বলবেন?
-- কী?
-- জুই আপনার কে ছিলো?
-- ঘুম। I was at peace when I was with her. যান্ত্রিক শব্দহীন গহীন জংগলে একা থাকার অনুভুতি। আপনাদের দুজনের মতই। পুরোটা না হলেও কাছাকাছি।
-- আমরা সব রেডি করে আনছি কাল। আপনি সাইন করে দিলেই হবে।
-- তাই? শাস্তি কী হবে? দৃষ্টান্তমূলক? হি হি হি
-- মানবিক দিক বিবেচনায় এনে যদি,,
-- হা হা হা। ঝোলানোর ব্যবস্থা করুন বরং। জুইয়ের মতো,,কি অসাধারণ ঘোর লাগা পয়েটিক সিন। কি মজার চাকরি আপনাদের।
-- হু, খুব মজার।
-- আপনাদের কে একটা ইনফরমেশন দেবার ছিলো।
-- জ্বী।
-- কোথাও আমার কোন ফিংগার প্রিন্ট নেই।
তাহমিদ আর সহন রুম থেকে বের হলো। তাহমিদের ভ্রু কুচকেই আছে। বলল,
-- নেই, সহন?
-- না স্যার
-- মানে উনার বয়ান ছাড়া কিছুই নেই?
-- না স্যার।
-- হোয়াট রাবিশ! তাহলে?
-- সাইন না দিলে কেস উড়ে যাবে স্যার।
-- তাইতো দেখছি। তোমার ঝামেলাটা ও হবে না।
-- কোনটা স্যার?
-- উপরে বলিনি স্যাডি যে খুন হয়েছে। আর কে বলবে? জুনায়েদ?,,,,,,আর তুমি অনেস্টিটা তোমার ইয়ের ভিতরে ঢুকিয়ে রেখো আপাতত বুঝছো? সিগারেট দাও।
-- নেই স্যার। আমিও খাবো না স্যার। দৌড়াতে গিয়ে দম পাচ্ছি না। স্যার?
-- হয়েছে ধন্যবাদ দিতে হবে না।
-- না স্যার।,,,,,,,,স্যার?
-- আরে কী?
-- উনার চোখে কোনসময় গিল্ট দেখেছেন? এই যে বলল এতসব।
-- হু। কোন আবেগই নাই। জুইয়ের বডিটা যখন দেখলো, এত কিছু যার জন্যে তার বডি দেখলে তো তুমি কান্নাই করতে কিন্তু এর অবস্থা দেখে মনে হলো মুগ্ধ হয়ে চেয়ে আছে। বিরাট সাইকো। বিয়ে করে ফেলো একে। ইন্টারেস্টিং হবে।
-- কি যে বলেন স্যার। হা হা হা। স্যার যদি সাইন না করে,,রেকর্ডিং ও নেই।
-- না ও করতে পারে। মাথার নেই ঠিক। মনে আছে, কী বলেছে প্রথমদিন?
-- জ্বী স্যার। ঘুম থেকে উঠেই উনি দেখলেন যে তার বাদামী চোখ আগের চেয়ে একটু বেশি জ্বলজ্বল করছে এবং সেদিনই খুন করতে হবে বুঝে গেলেন।
-- বোঝো। ওর প্রবলেম টা কী একচুয়ালি?
-- একাকীত্ব স্যার।
বাইরে প্রচন্ড শীত। ওভারকোট টা পাশের দেয়ালের হুকে ঝুলিয়ে ফায়ারপ্লেসে আরেকটা লগ গুজে দিলেন আফসানা বেগম। জিনিসপত্র গুলো একে একে নামিয়ে কফি মেশিন থেকে কফির মগটা নিয়ে বেডরুমে ঢুকে লাইট জ্বালাতেই এক মেয়েলি কন্ঠ শুনতে পেলেন। কন্ঠস্বরের মালিক দেখতে তার মতোই দেখতে। ঠিক যেনো ১৮ বছর আগের আফসানা তারই সামনে বসে আছে। হাতে ছুরি দেখে অবাক হবার আগেই ট্রাকিয়া থেকে সামান্য কয়েক মিলিমিটার পেছনে পরপর দুবার গেথে দেওয়া হলো ছুরিটা । তৃতীয় বারে ওখানেই রইল ওটা। আফসানা বেগমের কানে যাওয়া শেষ শব্দ দুটি ছিলো,
-- হ্যালো মামণি!!(সমাপ্ত)
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৪৯