-- আপনার নাম তাহমিদ আর উনি সহন,,তাই না?
-- জ্বী। আবার আসতে হলো। স্মোক?
-- অবশ্যই আসতে হতো।
-- ঘটনাটা বলবেন?
-- তার আগে একটা কথা বলি কিছু মনে করবেন না তো?
-- বলুন।
-- সহন সাহেবকেই আপনার বস হিসেবে মানাতো। উলটো লাগছে একটু। আর উনাকে ধমকে দিয়েছেন মনে হচ্ছে। বেচারা দূরে দাঁড়িয়ে আছেন আগের চেয়ে। কিছু মনে করলেন?
-- না। আমারো তাই মনে হয় মাঝে মাঝে। কিন্তু জিনিয়াসেরাও ওভারকনফিডেন্সে ভুল করে ফেলে।
-- স্যাডি ড্রাগস নিতো খুব। যেকোন কেউই ভাববে ওভারডোজে গেছে সে। ওর বাবা-মা পর্যন্ত টু শব্দ করেননি।
-- প্রথম থেকে ঘটনাটা বলবেন?
-- কি দরকার? কোথায় সাইন করতে হবে বলুন।
-- মাথায় জট পাকিয়ে গেছে। ও একটা স্টোরি বলেছে। মেলানোর জন্য আপনার ভার্সন টা,,,দেখি মিলে কিনা?
-- মজার তো। লিখে ফেলতে বলুন। পরে আমি দেখবো। কতটুকু,,,,,,
-- বিশ্বাস করতে পারেন। বলুন।
সানজিদা সিগারেট টা নিয়ে কিছুটা পেছনে গা এলিয়ে মাথাটা তির্যকভাবে রেখে বলা শুরু করলো,
-- আমি খুন করতামই আগে পরে। আমার মাকে। আমার বাবার মতো মানুষকে রেখে আরেকজনের হাত ধরে যে চলে যেতে পারে তাকে তো,,,বাবা আমার চেহারার দিকে তাকান না। আমার চেহারা দেখলে তার মায়ের কথা মনে পড়ে বোধয়। ঘৃণাটা টের পাওয়া যায় বুঝলেন। আবার আমি ঘুমিয়ে পড়লে এসে বিছানার পাশে এসে কাদেন। মাথায় হাত বুলিয়ে দেন। ক্ষমা চান। ভান করে পড়ে থাকি ঘুমের। যাই হোক সে অন্য কথা। বাবা খুবই অসুস্থতার মধ্যে দিয়ে গেছেন। ভেংগে পড়েছিলেন। লাভ ম্যারিজ ছিলো কিনা। আমার চেহারা তার আর দেখতে ইচ্ছে করলো না বোধয়। ব্যাবসার নাম করে বাইরে থাকা শুরু করলেন। ভিডিও কল করেন মাঝে মাঝে। এছাড়া আমি একা থাকাটা পছন্দও করি। যাই হোক। মাকে ক্ষমা করা গেলো না। প্ল্যান করলাম৷ খুজে বের করে প্রথম সুযোগেই খুন করবো। ডিসিশন টা নেবার পর খুব হালকা লাগতে শুরু করলো। খোজাখুজি শুরু হলো। জার্মানির কোথাও আছেন। যার সাথে ভেগেছেন তার সাথে নেই এখন। আরেকজনের সাথে আছেন। নিজেকে প্রস্তুত করতে লাগলাম। প্রত্যেক সকালে নতুন নতুন প্ল্যান,,,,,
এরপর অর্ধেক ভর্তি পানির গ্লাসটা নিয়ে পানি খেয়ে আবার শুরু করলো সানজিদা।
-- বেল্ট আছে আমার। কুশু কুংফু। লির বহুত বড় ভক্ত আমি। এগুলো ছাড়া ভার্সিটিতে গিয়ে ক্লাস আর স্টকিং ছাড়া আমার কোন কাজ রইলো না। হবি বলতে পারেন। প্র্যাক্টিস ও বলতে পারেন। একেকবার একেক জন কে। পনেরো দিন ধরে অবজার্ভ করতাম। আর কারো জীবন কেমন হতে পারে গেস করা। একধরনের মজাদার অবসেশন। স্যাডিকে স্টক করছিলাম। Not interesting. কেকদিন একেকটা মেয়ে নামতো ওর গাড়ি থেকে। ক্যাম্পাস থেকে যাওয়ার সময় একটা গ্রুপ উঠতো । ড্রাগস বাডিজ। একদিন হঠাৎ তার গাড়ি থেকে কোন মেয়ে নামলো না। নিজেও ইয়ো-ইয়ো টি শার্ট ছেড়ে পাঞ্জাবি তে। এভাবেই আসতে থাকলো। অনেকদিন পর মজাদার সাবজেক্ট পেয়ে গেলাম। ব্যাপার কী দেখতে ইচ্ছে হলো। আপনি হলেও চমকে যেতেন। দেখতাম ও একটা বেঞ্চে একা বসে থাকতো। হঠাত বই দেখতে পেলাম ওর হাতে ক'দিন যেতে না যেতে। আমার মগজে তখন নতুন আলোড়ন। বই? স্যাডি? মেলাতে হিমশিম খেয়েছে অনেকেই। অনেকেই তাকিয়ে থাকতো, হাসতো। একটা ছেলে কী এমন পরিবর্তন হতে পারে? নতুন নাটক কিনা সবাই বুঝতে চেস্টা করলো। থাকতে না পেরে একদিন ওর পাশের বেঞ্চেই বসে পড়লাম কানে হেডফোন গুজে। এরপর বেরুলো ঘটনার আসল মানুষ। জুই। যিনি স্যাডির সামনের বেঞ্চে মোটা ক্যাটস আই পড়ে বইয়ের ভেতর ডুবে থাকতেন। একবার ক্যাম্পাসে ককটেল ফুটলো। ওর কোন নড়চড় নেই জায়গা থেকে। সবাই দৌড়াচ্ছে আর ও,,,,
একটা বড় দম নিয়ে আবার শুরু করলো।
-- চুপচাপ ছিলো মেয়েটা। একমনে বই পড়তে থাকতো। কোনদিকে খেয়াল নেই। প্রথমে দেখলেই মনে হবে কোন স্কুলের শিক্ষিকা। সাদা আর কালো শাড়ি পড়ে বসে আছে বই নিয়ে বেঞ্চের এক কর্ণারে। পুরো দৃশ্যটা এতটা সম্পুর্ণ যে কেউ সামনে হেটে এলেই বিগড়ে যাবে মনে হয়। একদিন অনেকক্ষন দাঁড়িয়ে ছিলাম দূরে। ওয়াও। কখন জোরে বলে ফেলেছি বুঝতেও পারিনি। স্যাডি আমার স্টকলিস্ট থেকে বাদ পড়ে গেলো। ঐ দিন থেকে। ওর পনেরো দিন তখনো হয় নি। আমি এই রুল ব্রেক করি না। আপনার এই হ্যান্ডসাম অফিসারটা কে বসতে বলুন। আর আপনি ভীষণ কাশছেন।
-- সরি,,,বাদ দিয়ে দেব। খুব বাজে ভাবে ভুগছি। এই সহন,, বসো চেয়ার টা টেনে। তারপর কি হলো?
-- আপনাদের সত্যিই আর কোন কেস নেই?
-- আমি মুলত আগ্রহ হারিয়ে ফেলি, ও শোনে সারাংশ বলে। কিন্তু,,,
-- জুই। ধবধবে সাদা হাসের বাচ্চাটা তাই না? ওকে ঘেমে গেলে মনে হতো শাওয়ার নিয়ে এসেছে। ওকে ইগ্নোর করা পসিবল না।
-- আহেম,,,,এরপর কী হলো?
-- একি! লজ্জা পাচ্ছেন নাকি? এরপর পনেরো দিনের স্টকিং শেষেও যখন দেখলাম ওর ব্যাপারে কিছুই ধরতে পারছিনা তখন একদিন ওর বেঞ্চের পাশে গিয়ে বসলাম। বললাম,
-- বসি?
-- বসো।
-- কি পড়ছিস?
-- হারুকি মুরাকামির বই। নামটা একটু অদ্ভুত লাগলো বিধায় হেসে উঠলাম। বলল,
-- পড়লে হাসতে না। ঐটুকুই কথা হলো। খালি গিয়ে ওর পাশে বসে থাকতাম। একটা মানুষের সাথে শুধু বসলেই এতো শান্তি লাগে বুঝলেন, বুঝানো সম্ভব না। নেশার মতো হলো। ওভাবেই বসে থাকতাম প্রতিদিন। চুপচাপ। একদিন রান্না করে এনেছে আমার জন্য। বলল,
-- সিগারেট টা ফেলে দাও। আমার খুব মাথা ধরে।
-- এতোদিন বলিস নি কেন?
-- তুমি মন খারাপ করতে পারো তাই।
-- উরি বাবা। যাহ! তোর সামনে খাবো না।
-- পাস্তা খাবে? নিজে বানিয়ে এনেছি। খাবে?
-- রান্না করতে পারিস? আন্টি বানিয়ে দিয়েছে, না?
-- মা বাবা নেই। গিন্নি আছে?
-- সরি। দে খাই।
-- ইটস ওকে।
-- Wait,,,,,গিন্নি?
-- নানাভাই আমার নানীকে গিন্নি ডাকেন।
-- হা হা হা। তোরা তো দেখি কেস একেকটা।
-- গিন্নিবান্নী কে বল তুই আমার সাথে থাকবি এখন থেকে।
-- হু?
-- আমার সাথে উঠে আয়। বাবা দেশের বাইরে। ঘরবাড়ি ফাকা। কদিন থাকবি।
-- আম,,,ম,,
-- আমি কল দিয়ে বলি?
-- গিন্নি খুশিই হবে। আমার বন্ধু হয়েছে দেখলে।কিন্তু ব,,,বইগুলো।
-- You don’t know the half of it. আমার সাথে চল আগে। আর সারাক্ষন বই পড়ে কী করবি?
-- আমি কটা নিয়ে আসি সাথে?
-- তোর কিছুই আনতে হবে না। সব আছে। পড়ে তো থাকিস খালি শাড়ি। তুই আসলেই থাকবি আমার সাথে?
কিছু আর বললো না। মাথা নিচু করে আবার পড়া ধরলো। আমি জীবনে প্রথমবারের মতো একটা সিগারেট ধরাতে গিয়ে ফেলে দিলাম প্যাকেট সহ। পরেরদিনই এক স্যুটকেস বই সহ আসলো। আমার অসুস্থ মগজ পুরো শান্ত হয়ে গেলো। আর দেখুন ও আর নেই। অতো বড় ক্ষতি মানা যায়? ওর জন্য খুনটা করতেই হতো বুঝলেন। আপনার মোবাইলটা বাজছে।
-- হ্যা? ও হ্যা। যেতে হবে। বাকীটা সহন কে বলবেন। সহন, এখন গিয়ে তোমার চাকরি বাচাতে হবে। কিপ মি পোস্টেড।
সহন ও চেয়ার ছেড়ে লাফ দিয় উঠলো। মনে হচ্ছে কাহিনির ট্রেনের ভেতর দিয়ে হেটে যাচ্ছে ওর ব্রেইন। বগির পর বগি।ও ভাবল এবার সময় নেবে বেশি করে। কিছুতেই ইতি টানা যাবে না। বলল,
-- জ্বী স্যার।
-- প্যাকেট টা দাও।
-- নেই স্যার। এনে দিচ্ছি স্যার।
-- লাগবে না,,,,,,,, ইডিয়ট। উনি তো ভাববেন এগুলাই করাই আমি তোমাদের দিয়ে।
-- নো স্যার। সরি স্যার। (চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:২৮