অতোটা সোজা নয় বুঝলেন। প্রথমেই ব্যাপারটা টের পাইনি। সাথের সবাই যতই হিংসা ঈর্ষা করুক আমি ছিলাম এসব থেকে দূরে। প্রথম ঘৃণা করা শিখেছিলাম আমি যখন উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ি। দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র তখন। এর আগে ঘৃণা ছিলো না। ভয় অল্প স্বল্প ছিলো। একুশে ফেব্রুয়ারির দিন হঠাৎ ঘৃণার প্রকট অস্তিত্ব টের পেতে লাগলাম। দেখলাম পাকিস্তানকে আমি ঘৃণাই করি। তাদের সাপোর্টারদের প্রতিও একই অবস্থান আমার মনের।
অল্প বয়স ছিলো বুঝলেন। এখন তো ওদের বাসিন্দাদের প্রতি মায়াই হয়। এরপর টের পেলাম আমার সব ঘৃণা ছিনতাইকারীদের প্রতি। মনে মনে চাইতাম ওদেরকে আমি পেছনে মাংস ঝোলানো হুকে ঝুলিয়ে রাস্তার মোড়ে টাংগিয়ে রাখবো। অন্তত দশ হাজার জন কে রাখলেই হলো। কারণ যেদিন ঢাকা প্রথম গিয়েছিলাম এর পরের দিনই আমার ছিনতাই হয়েছিলো। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গিয়েছিলো। হোস্টেলে আসার রাস্তা ভুলে গিয়েছিলাম।
পরবর্তীতে ওদের প্রতিও মায়া জন্মে গেছে। কাপুরষ তো নয়। চোখে চোখ রেখে সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট থিওরি মোতাবেক ছিনিয়ে নিচ্ছে। আর যারা কলমের খোচায় নিচ্ছে তাদের ব্যাপারটা? ঘুষখোরদের কথাই বলছি। এদের প্রতি ঘৃণাটা টিকে আছে আজ অব্দি। ভয়ংকর ঘৃণা। এদের একেকজনের কোন সর্বনাশে আমার বাংলাদেশের ম্যাচ জিতে যাওয়ার পরের অনুভুতি হয়। অনেক্ষণ থাকে। আমার অভিশাপে যদি কিছু হতো তাহলে এতদিনে অনেকেই শেষ হয়ে যেতো।
আর কাদের ঘৃণা করি? ছাত্রাবস্থায় থাকাকালীন কিছু বড়ভাই আমার ঘৃণা থেকে রেহাই পায়নি। পরে ওদের প্রতিও ঘৃণা ধরে রাখতে পারিনি। বই টই পড়ছিলাম কিনা। এডাল্ট হবার খুব যন্ত্রণা। হিংসা, ঈর্ষা এসব এসে পড়ে। আর চারদিকে কতো বঞ্চিত অলস মানুষ। ঐ বড় ভাইদের মধ্যে কারো কারো ভালো চেহারার অভাব ছিলো। অবশ্যই তাদের মতে। কারো অর্থাভাব। কারো ভালোবাসার অভাব ছিলো। ফলে কি হলো ওরা একেকজন আরেকজনের উন্নতি দেখে চুপসে যেতো। এখন ভাবি আরে এতো পুরো মানবসম্প্রদায়ের চিত্র। শুধু শুধু ঘৃণার অপচয়।
বন্ধুদের কেউ কেউ ছিলো তালিকায়। অস্বীকার করবো না। চাকরি ক্ষেত্রে কিছু সিনিয়র কলিগেরাও আছেন। ভাইয়ের মধ্যে কেউ কেউ আছে। কিছু বন্ধু কখনোই তাদের হৃদয়টা খুলতো না। এতো মাথা খাটালে বন্ধুত্ব হয়? আমি সব ছেড়ে ছুড়ে চলে যেতাম ডাকলে । কিন্তু তারাও তো মানুষ। ফলাফল ভালবাসা না পেয়ে ঘৃণা। প্রেমিকাদের প্রতি ঘৃণা ছিলো না। তাদের ক্ষুদ্রতায় খুব মজাই লাগতো। ক্ষোভ হয়তো ছিলো কিছু। সমাজের প্রতি আছে। তা খুব ক্ষীণ।
ঘৃণা শ্বাশত আবেগ। আপনাকে চর্চায় রাখতে হবে ব্যাপারটা। না হয় ঘৃণা চলে গিয়ে যেটা তৈরি হবে তা হলো অনাগ্রহ। আমি শিখিয়ে দিচ্ছি কিভাবে ঘৃণা করবেন। আপনি যদি অলস হন তাহলে সোজা হবে। আপনি কাজগুলো সময় মতো করবেন না। অন্যরা করে এগিয়ে যাবে। তাহলে কী দাড়ালো? আপনি জীবনের স্কেলে পেছানো শুরু করবেন। যারা এগিয়ে যাচ্ছে তাদের প্রতি ঈর্ষা আগে তৈরি হবে। এরপর হিংসা, ঘৃণা। খুবই সহজ প্রক্রিয়া। ফিজিক্যালি ইনেক্টিভ থাকবেন প্রথমে। তাহলেই হলো।
এখন আপনি বহুত ঘৃণায় লোডেড। ধরে নিলাম অর্থাভাব, ভালোবাসায় প্রত্যাখ্যান কিংবা জীবনে অসফল হয়ে আপনার এই অবস্থা। এখন এই পাহাড়সম ঘৃণা নিয়ে আপনার চিন্তা একটাই হবে। কারো ক্ষতি হোক তা চাওয়া বা করা। এরও সহজ সমাধান আছে। ফেসবুকে মুর্খের অভাব নেই। চলে যান ওখানে ধর্মীয় দাংগা লাগে এমন কোন ইস্যু বা স্পর্শকাতর কোন ইস্যু দেখে লিখে দিলেন কয়েক লাইন। কিংবা কাউকে ট্রল করলেন, কোন বন্ধুর পিকে হা হা রিএক্ট করা কি খুব কঠিন?
আবার আড্ডায় কাউকে মনে কস্ট দিয়ে কথা বললেন, হয়ে গেলো। কারো প্রিয় কাউকে কটুক্তি করাও যেতে পারে। রেইপ করে ফেলে অনেকে। সিরিয়াল কিলিং, মাস কিলিং, যুদ্ধ বাধানো এগুলো দেখছেন তো। ভালোবাসায় হচ্ছে বলে মনে হয়? কোথাও না কোথাও বঞ্চিত না হলে কী করা যায়? ঘৃণা যদি ভেতরে থাকে তা কিন্তু বাহিরে বের করতেই হয়। অন্য কোন উপায় নেই। লজ্জা পাবেন না। অপেক্ষাকৃত খুবই সহজ। নিজের উপর বিশ্বাস রাখুন। আপনিই পারবেন। সবাই পারছে আপনি পারবেন না? আপনি মানুষ। আপনার হবেই।
কেউ যদি বুঝে ফেলে? হু। ভালোবাসা মাঝে মাঝে বোঝা যায়না। ঘৃণা যদি করেন তাহলে লোকে বুঝে ফেলবে। এর ও উপায় বলে দিচ্ছি। কুচকুচে কালো রোদচশমা পড়নে থাকলে কেউ আর বুঝতে পারবে না। চোখে ধরা পড়ে বুঝলেন। খেয়াল রাখবেন। ঘৃণা ভালোবাসার চেয়ে শক্তিশালী আবেগ। চোখে ভালোবাসা ধরা না পড়তেই পারে কিন্তু ঘৃণা ধরা পড়ে। ওসব ছবি, বইয়ের কথায় কান দিবেন না। মানবসসম্প্রদায়ের ইতিহাস সাক্ষী।
ঘৃণা করুন, ছড়িয়ে দিন, নিজেকে শ্রেষ্ঠ ঘৃণা উদ্রেককারী হিসেবে গড়ে তুলুন। গর্বের সাথে বলুন, "আমি মানুষ। আমি ঘৃণা করি। করতেই হয়।"
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১২:০৭