somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আপনি সন্তান নেবার মত যোগ্য?

১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ সকাল ৮:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :






গতকাল কুমিল্লা থাকাকালীন দুটো একই রকমের ঘটনা আমাকে আমার পরিচিত প্রশ্ন মনে করিয়ে দিয়েছে। শিক্ষক হবার দরুন আমি অনেক মানসিক যাতনার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। ঘটনাগুলো আরো উষ্কে দিচ্ছে। এক পিতা হাতে লাগেজ ধরে আছে বাস থেকে নামার পর। বাচ্চা ছেলেটির হাত না ধরে। ফলাফল ছেলেটি বিশ্বরোডের মতো একটি ব্যস্ততম সড়কে দিয়েছে ভো দৌড়। ভাগ্যিস গাড়ির ব্রেক যথাসময়ে কাজ করেছিলো। চালক কে আমি অন্তস্থল থেকে ধন্যবাদ দেই যে আমার মস্তিষ্কে একটি হরর গ্রাফিক সারাজীবনের জন্য সেট হয়ে যেতে দেননি বলে। আমার মস্তিষ্ক এখন পর্যন্ত সব বিভীষিকাময় ঘটনা সযতনে তুলে রেখেছে। আমি ভুলতেই পারিনি এসব।

দ্বিতীয় ঘটনা ধর্মসাগর পাড়ে একজন হুজুর ঘটিয়েছেন। তার বাচ্চা ইতোমধ্যে হারিয়ে ফেলেছেন। কয়েকটি ছেলে মিলে খুজতে বেরিয়েছেন। এক দম্পতি এদিকে বাচ্চাটিকে পেয়ে তার বাবা মা কে খুজে বেড়াচ্ছেন। তাদের আকুলতায় অবাক হবো এমন সময় হুজুর আসলেন। তারপর এমন ভাবে বিহেভ করলেন মনে হয় যেনো কিছুই হয়নি। এক ঝটকায় নিয়ে হাটতে আরম্ভ করলেন। দলের ছেলেগুলো ও বাজে ব্যবহার করলো। দম্পতির স্ত্রীলোকটি পেছন থেকে ডাকতে লাগলেন। কারন সন্দেহ ছিলো হুজুর মহাশয়ই আসল পিতা কিনা। ঠিক ট্রলি ধরে থাকা বিশ্বরোডের পিতার মতো যিনি এতো বড় দুর্ঘটনায় পড়তে যাওয়া ছেলেকে না ধরে শেষমেশ ট্রলিই ধরে ছিলেন। যা হোক এখানে দম্পতির পুরুষ লোকটিকে ফিরে এসে ধন্যবাদ জানানোর সময় হুজুরকে এই বলে তিরস্কার করা হয়েছিলো যে," আপনার ধন্যবাদের আমার প্রয়োজন নেই। আপনি যে বিহেভ করেছেন? এখানে আমার কী? যান!! " স্ত্রীলোকটি বললেন, " এতো ভীড়ে বাচ্চা ছাড়বেন না। ধরে থাকবেন।"

আমি ঐ বিশুদ্ধ হৃদয়ের দম্পতিকে শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। খুব ভালো লাগছে তাদের সন্তানদের ভাগ্যের কথা ভেবে। আমাদের দেশের অনেক সন্তানই ভাগ্যবান নয়। আমার বিদ্যালয়ে থাকার অভিজ্ঞতার ঝুলি দুর্ভাগাদের করুন কাহিনিতে ভরপুর হয়ে যাচ্ছে। গত তিনবছরে আমার অভিজ্ঞতা হলো যে আমার শিক্ষার্থীদের মায়েরা বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে পলায়ন করেছেন অন্যদের হাত ধরে। কিংবা বিবাহ বিচ্ছেদে ফুটফুটে সন্তানদের কথা ভাবেন নি। এক পরিবারে তিনজন মেয়ে যার বড়টি সদ্য প্রাথমিকের গন্ডি পেরিয়েছে। অন্যটিতে দুটো যমজ চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র। আরেকটিতে একটি মেয়ে যে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পরে, একটি ছেলে যে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র আর ছোটটি তিন বছর। যেহেতু মা নেই ওকে তার বাবা প্রাক- প্রাথমিক ক্লাসে বসিয়ে নিজে কাজে যান। অন্য আরেকটি ফ্যামিলিতে মা বিয়ে করেছেন ঢাকায় নিজের প্রাক্তন সংসারের মেয়েকেও নিয়ে যেতে চাইছেন তার সাথে। কি করতে চান বুঝতে পেরে মমতাময়ী প্রধান শিক্ষিকা মেয়েটির নানির সাথে কথা বলে সম্ভবপর শিশু শ্রম ঠেকিয়ে রেখেছেন। কিন্তু ক'দিন?

আমার জীবনে প্রথম ভাইবা বোর্ডে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিলো যে দুজনের চাকরি না হলে এখন সংসার চলবে কিভাবে? ফলাফল বাচ্চাকে তো রেখে যেতেই হয়। কি করা উচিত? আমি বলেছিলাম, One of them should be there. আমি জানিনা তবে একজনকে থাকতেই হবে। আমি নিজেকে প্রস্তুত মনে করিনা। তাই এখনো সংসারে নেই। কিন্তু সন্তান পিতা-মাতার সর্বোচ্চ দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। আপনি সন্তান নিয়েছেন মানে আপনি কমিটেড। তাহলে অবহেলা করার মতো স্পর্ধা আপনার করা উচিৎ নয়।

আমার কাছে সন্তানের ধারণাটা বোধয় সবচেয়ে জটিল এবং সুক্ষ্ম। আমি মনে করি ভবিষ্যৎ শিশুর জন্য বাসযোগ্য পৃথিবী দেয়া আর সম্ভব নয়। আমরা বিপদসীমা পেরিয়ে গেছি অনেক আগেই। তারপরেও আমি চাই সন্তান নেবার আগে নিজেকে প্রশ্ন করা উচিৎ। বাবা-মায়ের দুজন দুজনকেই করা উচিৎ। আমরা প্রস্তুত তো?

যাদের মা-বাবা হবার যোগ্যতা নেই বলে আমি মনে করি তাদের একটি সম্ভাব্য তালিকা নিম্নে প্রদত্ত হলো-

১.মানসিক বিকারগস্ত কোন রোগী।
২.যারা টাকার মেশিন হিসেবে সন্তানকে গড়ে তুলতে চান।
৩.মৌলিক চাহিদা পূরনে ব্যর্থ মানুষ।
৪.ভোগ-বিলাসী, লালসাকামনা যুক্ত পিতামাতা।
৫.সন্তানদের পর্যাপ্ত সময় দিতে অপারগ ব্যাক্তি।
৬. অসুস্থ পরিবেশে জীবনযাপন করা দম্পতি।

বুঝতেই পারছেন। খুবই জটিল এবং দুরুহ ব্যাপার। কোনাভাবেই মজার ব্যাপার নয়। সন্তান আপনাদেরকে অনুরোধ করে এ ধরায় আসেনি। You're the reason. ব্যত্যয় ঘটলে বৃদ্ধাশ্রম গিয়ে কান্নাকাটি করবেন কেন? কেমন দেখাবে? সন্তানদের সময় দিন তাহলে বার্ধক্যের অর্থহীন আদো আদো কথাও বসে বসে শুনবে। আর না হয় পরিণতির জন্য অপেক্ষা করতে হবে।

সন্তান নেবার আগে প্রশ্নটা করুন আপনি কি আসলেই সন্তান নেবার মত যোগ্য?



সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ সকাল ৯:০০
১১টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলমানেরা ভাগ্যন্নোয়নের জন্য পশ্চিমে গিয়ে, পশ্চিমের সংস্কৃতিকে হেয় করে ধর্মের নামে।

লিখেছেন জেনারেশন৭১, ০৩ রা জানুয়ারি, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:২০



এখন পশ্চিম চাহে যে, মুসলমানেরা যেন "ভাগ্যান্নষন"এর জন্য তাদের দেশে আর না যায়; কারণ, মুসলমানেরা পশ্চিমের সংস্কৃতিকে হেয় করার জন্য ধর্মকে ব্যবহার করে। একই আব্রাহামিক ধর্মের লোকজন হলেও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। অতঃপর সচিবালয়ের সেই পুড়ে যাওয়া কুকুর

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৩ রা জানুয়ারি, ২০২৫ রাত ৮:০০




সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের পর ষড়যন্ত্র তত্ত্ব আর পাল্টাপাল্টি দোষারোপের কারণে তদন্ত রিপোর্টে কী উঠে আসে সেটি নিয়ে বিশেষ আগ্রহ ছিল অনেকের। দুই দিকের আলাদা কক্ষে আগুন লাগা, কুকুরের মৃতদেহ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭২-এর স্বাধীনতার ঘোষণা পত্র ২০২৪-এর অর্জন না

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০২৫ ভোর ৫:৩৯


৭২-এর রক্তস্নাত সংবিধান বাতিল করে । নিজেদের আদর্শের সংবিধান রচনা করতে চায় এরা‼️বাংলাদেশের পতাকা বদলে দিতে চায়! বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত ভালো লাগেনা এদের!জাতিয় শ্লোগানে গায়ে ফোস্কা পরা প্রজন্ম... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আয়নাঘর শুধু ক্যান্টনমেন্টেই নয়, বিশ্ববিদ্যালয়েও ছিল

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



নৌপরিবহন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, আয়নাঘর শুধু ক্যান্টনমেন্টেই ছিল না। বিশ্ববিদ্যালয়, হোটেল এমনকি ব্যক্তিগত বাড়িতেও ছিল। আপনারা শুধু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা সব শিশুরই অন্তরে.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০২৫ সকাল ১১:০০

প্রতিযোগিতার এই দুনিয়ায় এখন আর কেউ নিজের মতো হতে চাই না, হতে চাই বিশ্ববরেণ্যদের মতো। শিশুকাল থেকেই শুরু হয় প্রতিযোগিতা। সব ছাত্রদের মাথায় জিপিএ ৫, গোল্ডেন পেতে হবে! সবাইকেই ডাক্তার,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×