ভুমিকম্প সবসময় আমার একটা স্মৃতি মনে করিয়ে দেয়। তিন বন্ধু তিনটি ভূমিকম্পে একই ছাদের নিচে ছিলাম। এইবার একজন কল দিয়েছে। আমি ঠিক আছি কিনা। আর আমি তখন নদীর ধারে। ঠিক তখনই আসিনি। আগেই বেরুবো বলে ভেবে রেখেছিলাম। আমি বেরুতে চাইলে ভূমিকম্প, মিধিলি এসব আমার কাছে কিছুই না।
তাকে ফ্রেমে বন্দী করতে গিয়ে পিছলে পড়ে গেছি।
এখানে আমি ১৬ বছর আগে এসেছিলাম। সাইকেলে। তখন প্রচন্ড ঝড় ছিলো মনে আছে। আমার সাইকেল উড়িয়ে নিয়ে পাশের ক্ষেতে ফেলেছিলো এক দমকা বাতাস। খুব ভয়ে পেয়েছিলাম। কিন্ত দেখলাম, এক মাঝি এই ঝড়ের মাঝেও জাল বিছিয়ে চলেছেন। আর তার নৌকা প্রচন্ডভাবে দুলছে। আজকের গুলো শান্ত।
এই জায়গার নাম মতির হাট। নারকেল গাছে ভর্তি চারপাশ। কিন্তু এই গাছটা একা।
এখানকার মানুষ খুবই পরিশ্রমী। লক্ষ্য করলাম তাদের হাসিটাও অনেকক্ষন তাদের ঠোঁটে ঝুলে থাকে। ঠিক দেখানো নয়। তারা আসলেই ভাল হাসে। কায়িকশ্রমের হাসি দীর্ঘ হয়।
এখানে নৌকার পাশের যে ছোট্ট বাচ্চাটি দেখা যাচ্ছে খুব ক্ষীণভাবে আর তার মা শাসনে ব্যস্ত। এই দৃশ্যটার কোন অলৌকিক কিছু আছে। ভিন্ন ভিন্ন চরিত্র, ভিন্ন ভিন্ন পরিবেশেও কি শক্তিশালী ছবি। আমি তেমন ধরতে পারিনি। কিন্তু দেখতে পেয়েছিলাম ভালোভাবেই।
ভাটায় আটকে পড়া নৌকার সাথে মানুষের জীবনের কিছু কিছু অধ্যায় ভীষণ মিলে যায়। নির্মম, গতিহীন।
জায়গার নাম চর ভৈরবী। নামের মতোই সুন্দর। কোলাহল না থাকলেও মনযোগ দিলে একটা রাগ শোনা যায় চারদিকে। অলস নৌকা জলের ছোট ছোট ঢেউয়ের সাথে মিলে সে সুরের জন্ম দেয়।
জায়গার নাম রাহুলের ঘাট। আহ! শৈশব! বাধাহীন, সময়হীন, স্বাধীন শৈশব। আরেকবার পাওয়া যাবে? ওদের মতো হবে?
ওরা এগারোজন। প্রায় ত্রিশ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে এখানে এসেছে। তাদেরকে দেখে খুব ভালো লাগলো। একজন এসে হ্যান্ডশেক করল। সবাই নাইনে পড়ে। মমতাজ মেমোরিয়াল স্কুলের ছাত্র। কাকতালীয় ভাবে ১৬ বছর আগে আমিও নাইনেই পড়তাম। কোনদিন জোর করে কারো ছবি তুলিনি। এইবার তুললাম সাথে ইমেইল আইডিও নিয়ে নিলাম শেয়ার করবো বলে। কাকতালীয় ব্যাপার গুলো আরো ঘটুক। হয়তো ওদের কেউ কেউ অনেক বছর পর আসবে এখানে। আমার মতো। ঐ দিন পাচজন বন্ধু এসেছিলাম। ভীষণ ঝড়ে। আজ ভুমিকম্প। আজ একা। তারা এগারো জন এসেছে। ষোল বছর পর কোন এক ভুমিকম্পের দিনে এদের মধ্যে দলছুট হয়ে যেকোন একজনের একা আসার সম্ভাবনা কতটুকু? এই জায়গার কী কোন রহস্য আছে? আসলে কী সাইকেল নিয়ে আসতে হয়? ক্লাস নাইনে পড়ুয়া কিশোরই হতে হয়? রহস্যে ১৬ বছর কী কিছু একটা হয়ে দাঁড়াবে? মতির হাট লিখে খুজলে ওদেরকে দেখতে পাবে ওরা। আমি রহস্যটা জমে কিনা দেখতে জায়গার ছবিগুলোর সাথে এই ছবিটাও আপলোড করে রাখবো অবশ্যই।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা ডিসেম্বর, ২০২৩ রাত ১০:১৬