রাঙ্গামাটি, বাংলাদেশের তিন পার্বত্য জেলার অন্যতম এই স্হানটি শুধু কাপ্তাই লেক বা চন্দ্রঘোনা পেপার মিলটির জন্যই আমাদের সবার কাছে ব্যপক পরিচিত। সাধারন-জ্ঞানের বইয়ে ছাপা লেকের ঝকঝকে পানি ও ঝুলন্ত সেতুর ছবি দেখেনি এমন কাউকে খুজে পাওয়াই মুশকিল। ভূমি-আয়তনে বাংলাদেশের সর্ববৃহত এই জেলাটি পাহাড়, নদী, লেক ও উপজাতীয়দের বৈচিত্রপূর্ন জীবন ধারার পসরা সাজিয়ে নিজেকে করে তুলেছে অপরূপ। ভ্রমণ পিপাসু যে কেউ তাই নিশ্চিন্তে পা বাড়াতে পারেন রাঙ্গামাটির উদ্দেশ্যে, কথা দিচ্ছি ভ্রমণের ক্লান্তি বেমালুম উবে যাবে নৈশর্গিক আবহে।
কর্পোরেট জীবনে অবসর খুজে পাওয়া আর হাতে আসমনের চাঁদ পাওয়া প্রায় সমার্থক। আর কর্মক্ষেত্র বেসরকারী আইটি ফার্ম হলে অবস্থা কী দাড়ায় তা ভুক্তভোগী মাত্রই জানেন। অবশ্য এবারের ঈদ অসাধ্য সাধন করেছে টানা ৫ দিনের ছুটি পেয়ে তাই স্ববান্ধবে বেড়িয়ে পড়লাম প্রকৃতি দর্শনে।
ঈদের পরদিন রাত ১১ টা নাগাদ রওনা হলাম রাঙ্গামাটির উদ্দেশ্য, বাহন ইউনিক পরিবহনের নন-এসি চেয়ার-কোচ। কপাল মন্দ হয়ে যা হয় আরকি ঢাকা- রাঙ্গামাটি রুটে কোন এসি সার্ভিস নেই, তাই এটাই ভরসা; পড়ে অবশ্য জানতে পারলাম যে, এই রুটের সেরা সার্ভিসই নাকি এটি
ঢাকা থেকে প্রায় চোখের পলকে চলে এলাম মেঘনা-ব্রিজ টোল প্লাজায় অথচ আমরা ৯ জন এখন ও ঠিক ভাবে জাকিয়ে বসতেই পারলাম না ! কুমিল্লায় রাতের খাবার সেরে আরার শুরু হল যাত্রা। ঈদ পরবর্তি সময় বলে স্বভাবতই বাসের সবাই আমার মত পর্যটক, সুতারাং সদ্য-পরিচিত ও বন্ধু-বান্ধবদের সাথে আড্ডা চলল প্রায় ৪ টা পর্যন্ত। ক্লান্ত দেহগুল যখন নিদ্রা দেবীর আরাধনায় ব্যাস্ত তখনই শুরু হল আবুল সাহেবের অত্যাচার। আরে চিনতে পারলেন না ? আমাদের সৈয়দ প্লাস পীর বংশিয় জামাতা - যোগাযোগ মন্ত্রী আবুল সাহেব রাস্তার যা অবস্থা করেছেন তাতে মুরুব্বী শ্রেণীর পাবলিকেরও মুখে লাগাম টানা দায়, আর এখানে বাসভর্তি সব তরুণ-যুবার দল। অবস্হা কোথায় পৌছে ছিল তা না লিখলেও নিশ্চই আপনারা বুঝতে পারছেন, দুঃখ শুধু এই যে আবুল সাহেব কে শুভেচ্ছা বাণীগুল পৌছে দেয়া গেল না। অবশ্য তার পরেই ওনি পদত্যাগ করতেন কিনা আল্লাহ মালুম...........।
ভোর ৬ টার মধ্যে নিজেদের রাঙ্গামাটি শহরে আবিষ্কার করলাম; চট্রগ্রামের পড় বুড়ো ড্রাইভার যেন বুলেট ট্রেন চালিয়েছে। মূলত মহাসড়কের দু-পাশে গড়ে উঠেছে ছোট্ট শহর রাঙ্গামাটি, যাকে চারদিক দিয়ে ঘিরে রেখেছে কাপ্তাই লেক। প্রাতরাস সেরে তাই নেমে পরলাম হোটেলের খোজে। প্রায় ৪৫ মিনিটের খোঁজাখুজি শেষে মিলল মহার্ঘ হোটেল-রুমের চাবি। এক ঘন্টার মধ্যে সবাই গোসল সেরে চলে এলাম স্থানীয় ফিসারী ঘাটে। ১৮শ টাকা চুক্তিতে সারাদিনের জন্য ইন্জিনবোট নিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম লেকের জলে।
প্রথম গন্তব্য বৌদ্ধ মঠ ও রাজার বাড়ি। জুম ফসল তোলার মৌসুম শুরু হয়ে গেছে তাই পূজা-আচনায়ও সেই জৌলুস ঠিকরে বেরুচ্ছিল।
স্বর্গীয় সিড়ি
কিছুদিন আগে রাজবাড়ীটি পুড়ে যাওয়ায় রাজার বর্তমান নিবাস এখন এটি।
পরবর্তি গন্তব্য শুভলাং। রোদ আর বৃষ্টির খেলা ভালই জমে উঠেছে- এই রোদ তো এই বৃষ্টি। শুভলং এ পৌছতেই শুরু হল ঝুম বৃষ্টি....
ভরা বর্ষায় শুভলং এর ঝড়না হতাশ করলেও আশ-পাশে বেশ বড় কিছু ঝড়না রয়েছে তবে সমস্যা একটাই ঐগুলতে গোসল করা যায় না।
ফেরার পথে পেদা-টিংটিং এ সাড়লাম দুপুরের খাবার। এখানকার স্পেশাল হল বেম্বু-চিকেন ও কলাপাতা-রুই। তেমন আহামরি কিছু নয়, রান্না করা মাছ ও মাংস শুধু বেম্বু ও কলাপাতায় সার্ভ করা হয়। খেয়ে তৃপ্ত না হলেও দাম চুকিয়ে তৃপ্ত হবেন যাকে বলে রিতিমত বেম্বু খাওয়া আরকি
জুম ক্ষেত
বিকেলে চলে আসলার রাঙ্গামাটির ট্রেডমার্ক হয়ে যাওয়া জুলন্ত সেতুতে
সন্ধা কেটেছে শহরের বিভিন্ন দোকানে ঘোড়াঘুরি করে। রাতের খাবার শেষ করেই দে ঘুম কারন ব্যাস্ততম দিন অপেক্ষা করেছে আগামীকাল।
আজকের গন্তব্য কাপ্তাই জল-বিদ্যুৎ কেন্দ্র। ইউএনডিপির অর্থায়নে সদ্ব-নির্মিত সড়ক পথে কাপ্তাই-এর দূরত্ব ১৮ কিলো তবে রাস্তা খুব একটা প্রসস্ত নয়, শুধু মটর বাইক ও সিএনজি চলে। এক ঘন্টার এই জার্নি প্রায় অবিশ্বাস ! রাস্তা তো নয় যেন রোলার-কোস্টার আর উচু জায়গা থেকে চোখ রাখলেই আর যেতে ইচ্ছে করে না, মনে হয় থেকে যাই এখানেই
কাপ্তাই জল-বিদ্যুৎ কেন্দ্র দেখা হলেও, এখানকার কোন ছবি নেই ! শত হলেও রেসট্রিকটেড এড়িয়া বলে কথা। প্রায় ১ ঘন্টা বন্ধুদের ডিফেন্সে কর্মরত মামা-চাচাদের ফোন করে তবেই প্রবেশের অনুমতি মিলল! এক সময় মনে হল কেন যে ডিফেন্সে চাকরি নিলাম না অবশ্য পথ এখনও একটা আছে বটে বিয়ে যেহেতু করিনি তাই ব্রিগেডিয়ার-কর্নেল দেখে একজন শ্বশুর যোগার করতে পারলে মন্দ হয় না.......।
এত কাছে এসেও যদি কক্সবাজার না-ই গেলাম তবে কেমন হয়, অতএব দে ছুট ..........
কক্সবাজার যায় নি এমন ভ্রমণ বিনাসী খুঁজে পাওয়া দায় কিন্তু তাদের কয় জন কক্সবাজার শহরটি দেখেছেন ? ভোরে রিক্সা নিয়ে বেড়িয়ে পরুন শহর ও মেরিন ড্রাইভ ধরে; দেড়-দুই ঘন্টা ঘুরে আসেতে খরচ মাত্রই ৮০-১০০ টাকা।
প্রয়োজনীয় লিংক :
Click This Link
http://en.wikipedia.org/wiki/Kaptai
http://www.dcrangamati.gov.bd/