somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সূর্যমুখী ফুলের মত দেখি তোমায় দূরে থেকে, দলগুলি মোর রেঙে ওঠে তোমার হাসির কিরণ মেখে....

০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ দুপুর ১:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


সূর্যমুখী
অন্যান্য ও আঞ্চলিক নাম : রাধাপদ্ম, সুরজমুখী (হিন্দি)
সংস্কৃত নাম : আদিত্যভক্তা, সূর্যকান্তি, সূর্যকান্তিপুষ্প
Common Name : Sunflower, Common sunflower
Scientific Name : Helianthus annuus

সূর্যমুখী একটি বর্ষজীবী ফুলগাছ। সূর্যমুখীকে শুধু ফুলগাছ বলাটা ঠিক হবে না, বরং এটি ভোজ্য তৈলবীজ ফসল এবং ভেষজ উদ্ভিদ বটে। ১৯৭৫ সাল থেকে সূর্যমুখী ভোজ্য তেল ফসল হিসেবে বাংলাদেশে চাষ করা হচ্ছে।


সযতনে যবে সূর্যমুখীর অর্ঘ্যটি
আনে নিশান্তে, সেও নিতান্ত মন্দ না।
এও ভালো যবে ঘরের কোণের স্বর্গটি
মুখরিত করি তানে মানে করে বন্দনা।

----- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর -----




সূর্যমুখী গাছ ৪ থেকে ৯ ফুট পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। এর গাছের কান্ড রুক্ষ লোমযুক্ত হয়। পাতাগুলি রুক্ষ এবং মোটা, বেশ বড় বড় ৩ থেকে ১২ ইঞ্চি পর্যন্ত হয়। পাতার প্রান্তগুলি করাতের মতো দাঁতযুক্ত। গাছের নিচের দিকের পাতাগুলি বড় এবং উপরের দিকের পাতাগুলি তুলনামূলক ছোট হয়।


সূর্যমুখী ফুলের রং উজ্জ্বল হলুদ। আকারে বেশ বড়, ব্যাস প্রায় ১২ ইঞ্চি পর্যন্ত হয়। সূর্যমুখী ফুল দেখতে কিরণ ছড়ানো সূর্যের প্রতিকের মত। তাছাড়া ফুলটি সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে বলে এর নামকরণ করা হয়েছে সূর্যমূখী ফুল।

সূর্যমুখী ফুলের বীজের ভিতরের সাদা শাস অনেকেই খেয়ে থাকেন। তাছাড়া এর বীজ হাঁস মুরগি এবং বেশ কিছু শৌখিন পাখির খাদ্য।





সখি এবার আমার প্রেম নিবেদন গোপনে,
সূর্যমুখী চাহে যেমন তপনে।
কুমুদিনী চাঁদে ভালোবাসে
তাই চিরদিন অশ্রুর সায়রে ভাসে,
চির জীবন জানি কাঁদিতে হবে তাহারে চেয়েছি যবে॥

----- কাজী নজরুল ইসলাম -----



সূর্যমুখী ফুলের বীজ যন্ত্রে মাড়াই করে তেল বের করা হয়। বাংলাদেশে উৎপাদিতো এবং আমদানিকৃত প্রায় সকল ভোজ্য তেলের চেয়ে সূর্যমুখী তেল অনেক ভালো এবং উপকারী। এতে কোলেস্টেরলের মাত্রা অত্যন্ত কম। এছাড়া এতে ভিটামিন এ, ডি ও ই রয়েছে। সূর্যমুখীর তেল বনস্পতি তেল হিসেবেও পরিচিত।

ভোজ্য তেলের জন্য পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ সূর্যমুখী চাষ করে থাকে।
বাংলাদেশের রাজশাহী, যশোর, কুষ্টিয়া, নাটোর জেলা, পাবনা, দিনাজপুর, গাজীপুর, টাংগাইল প্রভৃতি জেলাতে এর চাষ হয়। সমভূমি এলাকায় শীতকালে ও বসন্তকালে, আর উঁচু লালমাটি এলাকায় বর্ষাকালীন শস্য হিসাবে এর চাষ হয়।




সূর্যমুখীর বর্ণে বসন
লই রাঙায়ে,
অরুণ আলোর ঝংকার মোর
লাগলো গায়ে।
অঞ্চলে মোর কদমফুলের ভাষা
বক্ষে জড়ায় আসন্ন কোন্‌ আশা,
কৃষ্ণকলির হেমাঞ্জলির
চঞ্চলতা
কঞ্চুলিকার স্বর্ণলিখায়
মিলায় কথা।

----- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর -----


সূর্যমুখীর বীজের প্যাটার্ন ও ফিবোনাক্কি রাশি
ফিবোনাক্কি রাশি হচ্ছে - রাশির কোনো একটি পদ তার পূর্বের দুইটি পদের যোগফলের সমান।
যেমন : ০, ১, ১, ২, ৩, ৫, ৮, ১৩, ২১, ৩৪…

বিজ্ঞানী এবং ফুল গবেষক যারা সূর্যমুখী ফুল নিয়ে গবেষণা করেছেন তাঁরা নিশ্চিত হয়েছেন যে সূর্যমুখী বীজে যে সর্পিলাকার প্যাটার্ন দেখা যায় তা ফিবোনাক্কি সংখ্যায় সাজানো থাকে।




সূর্যমুখী ফুলের মত দেখি তোমায় দূরে থেকে
দলগুলি মোর রেঙে ওঠে তোমার হাসির কিরণ মেখে’।।
নিত্য জানাই পেম-আরতি
যে পথে, নাথ, তোমার গতি
ওগো আমার ধ্রুব-জ্যোতি সাধ মেটে না তোমায় দেখে’।।

----- কাজী নজরুল ইসলাম -----




সূর্যমুখীর গ্রীক মিথলজি

Statue of Clytie (1848), by Joseph-Stanislas Lescorné

গ্রীক পুরাণে ক্লাইটি ছিল একজন জলপরী। ক্লাইটি সূর্যদেবতা হেলিওসকে প্রচন্ড ভালোবাসতো। ক্লাইটি হেলিওসের প্রেমে পাগল
হলেও দুর্ভাগ্যবশত হেলিওস ক্লাইটিকে ভালোবাসতো না। সে ভালোবাসতো অর্কামাসের কন্যা লিউকোথিয়াকে। হেলিওসের ভালোবাসা না পেয়ে ক্লাইটি ক্ষুব্ধ হয়ে অর্কামাসকে তার মেয়ের প্রেমের সম্পর্কের কথা জানিয়ে দেয়। পিতা অর্কামাস তার কন্যা লিউকোথিয়ার উপরে প্রচন্ড রেগে গিয়ে তাকে জীবন্ত কবর দিয়ে মৃত্যুদণ্ড দেন।

ক্লাইটি ভেবেছিলেন লিউকোথিয়ার মৃত্যু হলে সূর্যদেবতা হেলিওস তার কাছে ফিরে আসবে। কিন্তু সূর্যদেবতা হেলিওস তার দিকে ফিরেও তাকায়নি।

শেষ পর্যন্ত, ক্লাইটি নগ্ন হয়ে পাথরের উপর নয় দিন শুয়ে থেকে কেবল সূর্যের দিকে তাকিয়ে রইলো। এই নয় দিন সে কিছুই খেলোনা, কিছুই পান করলো না। নবম দিনে ক্লাইটি একটি সূর্যমুখী ফুলে রূপান্তরিত হয়ে গেলো, যা এখনো সূর্যের দিকে তাকিয়ে থাকে।

Clytie Turning into a Sunflower (1718-1720), by Charles-Antoine Coypel
সূত্র: Clytie



Ah Sun-flower! weary of time,
Who countest the steps of the Sun:
Seeking after that sweet golden clime
Where the travellers journey is done.

Where the Youth pined away with desire,
And the pale Virgin shrouded in snow:
Arise from their graves and aspire,
Where my Sun-flower wishes to go.

----- William Blake -----




তথ্য সূত্র : অন্তর্জাল
ছবি ও বর্ণনা : নিজ
ছবি তোলার স্থান : চরসিন্দুর, নরসিংদী, বাংলাদেশ।
ছবি তোলার তারিখ : ২১শে ফেব্রুয়ারি ২০২২ খ্রিষ্টাব্দ।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ দুপুর ১:৪৬
১১টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাত্রিজাগর রজনীগন্ধা, করবী রূপসীর অলকানন্দা.....

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৫ ই মার্চ, ২০২৫ বিকাল ৪:২৬



আমাদের দেশে নানান ধরনের ও রং এর অলকানন্দা দেখা যায়। এরা আমাদের দেশীয় ফুল না। তবে বৈজ্ঞানিক নামের প্রথম অংশ 'Allamanda'-র সাথে মিল রেখে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা নামকরণ করেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধ হোক এই ফ্যসিবাদী ব্যক্তিপুজার রেওয়াজ

লিখেছেন মেঠোপথ২৩, ১৫ ই মার্চ, ২০২৫ বিকাল ৪:৩৯

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের মৃত্যুতে এক দিনের ছুটি ঘোষণা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। আজ শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের রেওয়াজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিক্ষিত ভারতীয়রা হতাশ, কমশিক্ষিত ভারতীয়রা রাগান্বিত।

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ১৫ ই মার্চ, ২০২৫ রাত ৮:০৬






অমর্ত্য সেন বাংগালী মানুষ, ব্লগিং'এ তেমন ভালো নন; কিন্তু বাংগালীদের আর্থ-সামাজিক-রাজনৈ্তিক অবস্হা বুঝেন ও বাংলাদেশের জন্য চিন্তিত ও বর্তমান অবস্হা নিয়ে হতাশ। আসলে, উনি মহাজাগতিক ও যেকোন ভুয়া বাংগালী থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিবিরের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাবেন না।

লিখেছেন জাদিদ, ১৫ ই মার্চ, ২০২৫ রাত ৮:১১

সাম্প্রতিক সময়ে শিবির নিয়ে অনেক মিথ্যাচার হচ্ছে। ইসলাম রক্ষা এবং দ্বীনের প্রচারে যে দায়িত্ব শিবির পালন করে যাচ্ছে সেটা অতুলনীয়। অতীতেও আমরা দেখেছি, বাংলাদেশের স্বাধীনতা লগ্নে ইসলামী ছাত্র সংঘ তথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি যদি বিয়ে না করি, তাহলে সন্তান হবে না। এখনই যদি এই অবস্থা হয়, তাহলে বৃদ্ধ অবস্থায় কি হবে? তখন আমাকে সেবা করবে কে?

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৫ ই মার্চ, ২০২৫ রাত ১১:০২

একাকীত্ব, অসুস্থতা ও রোবটের প্রয়োজনীয়তা


আগে আমি আমার নানা-নানীর সাথে থাকতাম। কেন থাকতাম, সে গল্প আপনারা জানেন। সময় বদলায়, জীবনও নতুন মোড় নেয়। বিয়ের পর আমি, আব্বু, আম্মু ও স্ত্রী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×