সূর্যমুখী
অন্যান্য ও আঞ্চলিক নাম : রাধাপদ্ম, সুরজমুখী (হিন্দি)
সংস্কৃত নাম : আদিত্যভক্তা, সূর্যকান্তি, সূর্যকান্তিপুষ্প
Common Name : Sunflower, Common sunflower
Scientific Name : Helianthus annuus
সূর্যমুখী একটি বর্ষজীবী ফুলগাছ। সূর্যমুখীকে শুধু ফুলগাছ বলাটা ঠিক হবে না, বরং এটি ভোজ্য তৈলবীজ ফসল এবং ভেষজ উদ্ভিদ বটে। ১৯৭৫ সাল থেকে সূর্যমুখী ভোজ্য তেল ফসল হিসেবে বাংলাদেশে চাষ করা হচ্ছে।
সযতনে যবে সূর্যমুখীর অর্ঘ্যটি
আনে নিশান্তে, সেও নিতান্ত মন্দ না।
এও ভালো যবে ঘরের কোণের স্বর্গটি
মুখরিত করি তানে মানে করে বন্দনা।
----- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর -----
সূর্যমুখী গাছ ৪ থেকে ৯ ফুট পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। এর গাছের কান্ড রুক্ষ লোমযুক্ত হয়। পাতাগুলি রুক্ষ এবং মোটা, বেশ বড় বড় ৩ থেকে ১২ ইঞ্চি পর্যন্ত হয়। পাতার প্রান্তগুলি করাতের মতো দাঁতযুক্ত। গাছের নিচের দিকের পাতাগুলি বড় এবং উপরের দিকের পাতাগুলি তুলনামূলক ছোট হয়।
সূর্যমুখী ফুলের রং উজ্জ্বল হলুদ। আকারে বেশ বড়, ব্যাস প্রায় ১২ ইঞ্চি পর্যন্ত হয়। সূর্যমুখী ফুল দেখতে কিরণ ছড়ানো সূর্যের প্রতিকের মত। তাছাড়া ফুলটি সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে বলে এর নামকরণ করা হয়েছে সূর্যমূখী ফুল।
সূর্যমুখী ফুলের বীজের ভিতরের সাদা শাস অনেকেই খেয়ে থাকেন। তাছাড়া এর বীজ হাঁস মুরগি এবং বেশ কিছু শৌখিন পাখির খাদ্য।
সখি এবার আমার প্রেম নিবেদন গোপনে,
সূর্যমুখী চাহে যেমন তপনে।
কুমুদিনী চাঁদে ভালোবাসে
তাই চিরদিন অশ্রুর সায়রে ভাসে,
চির জীবন জানি কাঁদিতে হবে তাহারে চেয়েছি যবে॥
----- কাজী নজরুল ইসলাম -----
সূর্যমুখী ফুলের বীজ যন্ত্রে মাড়াই করে তেল বের করা হয়। বাংলাদেশে উৎপাদিতো এবং আমদানিকৃত প্রায় সকল ভোজ্য তেলের চেয়ে সূর্যমুখী তেল অনেক ভালো এবং উপকারী। এতে কোলেস্টেরলের মাত্রা অত্যন্ত কম। এছাড়া এতে ভিটামিন এ, ডি ও ই রয়েছে। সূর্যমুখীর তেল বনস্পতি তেল হিসেবেও পরিচিত।
ভোজ্য তেলের জন্য পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ সূর্যমুখী চাষ করে থাকে।
বাংলাদেশের রাজশাহী, যশোর, কুষ্টিয়া, নাটোর জেলা, পাবনা, দিনাজপুর, গাজীপুর, টাংগাইল প্রভৃতি জেলাতে এর চাষ হয়। সমভূমি এলাকায় শীতকালে ও বসন্তকালে, আর উঁচু লালমাটি এলাকায় বর্ষাকালীন শস্য হিসাবে এর চাষ হয়।
সূর্যমুখীর বর্ণে বসন
লই রাঙায়ে,
অরুণ আলোর ঝংকার মোর
লাগলো গায়ে।
অঞ্চলে মোর কদমফুলের ভাষা
বক্ষে জড়ায় আসন্ন কোন্ আশা,
কৃষ্ণকলির হেমাঞ্জলির
চঞ্চলতা
কঞ্চুলিকার স্বর্ণলিখায়
মিলায় কথা।
----- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর -----
সূর্যমুখীর বীজের প্যাটার্ন ও ফিবোনাক্কি রাশি
ফিবোনাক্কি রাশি হচ্ছে - রাশির কোনো একটি পদ তার পূর্বের দুইটি পদের যোগফলের সমান।
যেমন : ০, ১, ১, ২, ৩, ৫, ৮, ১৩, ২১, ৩৪…
বিজ্ঞানী এবং ফুল গবেষক যারা সূর্যমুখী ফুল নিয়ে গবেষণা করেছেন তাঁরা নিশ্চিত হয়েছেন যে সূর্যমুখী বীজে যে সর্পিলাকার প্যাটার্ন দেখা যায় তা ফিবোনাক্কি সংখ্যায় সাজানো থাকে।
সূর্যমুখী ফুলের মত দেখি তোমায় দূরে থেকে
দলগুলি মোর রেঙে ওঠে তোমার হাসির কিরণ মেখে’।।
নিত্য জানাই পেম-আরতি
যে পথে, নাথ, তোমার গতি
ওগো আমার ধ্রুব-জ্যোতি সাধ মেটে না তোমায় দেখে’।।
----- কাজী নজরুল ইসলাম -----
সূর্যমুখীর গ্রীক মিথলজি
গ্রীক পুরাণে ক্লাইটি ছিল একজন জলপরী। ক্লাইটি সূর্যদেবতা হেলিওসকে প্রচন্ড ভালোবাসতো। ক্লাইটি হেলিওসের প্রেমে পাগল
হলেও দুর্ভাগ্যবশত হেলিওস ক্লাইটিকে ভালোবাসতো না। সে ভালোবাসতো অর্কামাসের কন্যা লিউকোথিয়াকে। হেলিওসের ভালোবাসা না পেয়ে ক্লাইটি ক্ষুব্ধ হয়ে অর্কামাসকে তার মেয়ের প্রেমের সম্পর্কের কথা জানিয়ে দেয়। পিতা অর্কামাস তার কন্যা লিউকোথিয়ার উপরে প্রচন্ড রেগে গিয়ে তাকে জীবন্ত কবর দিয়ে মৃত্যুদণ্ড দেন।
ক্লাইটি ভেবেছিলেন লিউকোথিয়ার মৃত্যু হলে সূর্যদেবতা হেলিওস তার কাছে ফিরে আসবে। কিন্তু সূর্যদেবতা হেলিওস তার দিকে ফিরেও তাকায়নি।
শেষ পর্যন্ত, ক্লাইটি নগ্ন হয়ে পাথরের উপর নয় দিন শুয়ে থেকে কেবল সূর্যের দিকে তাকিয়ে রইলো। এই নয় দিন সে কিছুই খেলোনা, কিছুই পান করলো না। নবম দিনে ক্লাইটি একটি সূর্যমুখী ফুলে রূপান্তরিত হয়ে গেলো, যা এখনো সূর্যের দিকে তাকিয়ে থাকে।
সূত্র: Clytie
Ah Sun-flower! weary of time,
Who countest the steps of the Sun:
Seeking after that sweet golden clime
Where the travellers journey is done.
Where the Youth pined away with desire,
And the pale Virgin shrouded in snow:
Arise from their graves and aspire,
Where my Sun-flower wishes to go.
----- William Blake -----
তথ্য সূত্র : অন্তর্জাল
ছবি ও বর্ণনা : নিজ
ছবি তোলার স্থান : চরসিন্দুর, নরসিংদী, বাংলাদেশ।
ছবি তোলার তারিখ : ২১শে ফেব্রুয়ারি ২০২২ খ্রিষ্টাব্দ।