ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহের কথা। আশ্রমের পাশেই কারা যেনো বস্তায় ভরে ৭টি কুকুর ছানা ফেলে দিয়ে গেছে। ছানাগুলি তখনো মায়ের দুধ পান করতো। অন্য খাবার খাওয়া তখনো শেখেনি। বন্ধু হীরা আর আশ্রমের কেয়ার টেকার বাচ্চা গুলিকে নিয়ে আসে আশ্রমে। থাকার জন্য একটা খুপরি মতো তৈরি করে দেয়। খাবার দেয়। ওরা সময়ের আগেই সেই সব খাবার খাওয়ার চেষ্টা করে। কেউ কেউ কয়েকটি খাবার থেকে কোনো একটি খাবার হয়তো সামান্য খেতো, কেউ কেউ সেটিও পারতো না। সেই সময় আশ্রমে প্রচন্ড শীত ছিলো। মায়ের ওম আর দুধ ছাড়া প্রচন্ড শীতে ধীরে ধীরে তারা দূর্বল হয়ে পরতে থাকে। ওদের মধ্যে একটি ছানা কিছুটা তরতাজা ও অন্যদের চেয়ে সামান্য বড় ছিলো। সে কোনো রকম বাজবিচার করা ছাড়াই প্রায় সব ধরনের খাবারই খেতে চেষ্টা করতো। ফলে সে দ্রুতই খাওয়া শিখে গেলো এবং সতেজ রইলো। বাকিরা একে একে মরতে শুরু করলো। ঠান্ডা থেকে বাচানোর জন্য ওদেরকে চুলার পাশেই থাকার ব্যবস্থা করা হলো। কিন্তু কোনো লাভ হলো না। সময়ের সাথে সাথে একটি ছাড়া বাকি সকলেই মারা পরতে শুরু করলো। আমরাও ততো দিনে বুঝে গেছি ওদের বাঁচানো যাবে না। একমাত্র বেঁচে যাওয়া কুকুর ছানাটির নাম রাখা হলো লালু।
লালু সেই ছোট অবস্থাতেই বেশ অ্যাক্টিভ ছিলো। খাবারের প্রতি ওর খুবই ঝোঁক। ড্রাইকেক ওর খুবই পছন্দ। অচেনা লোক আশ্রমের কাছে আসলেই ঘেউ ঘেউ করে উঠে। সকলের সাথেই খেলতে খুব পছন্দ করে। বিরক্ত করলে যখন ওকে পা দিয়ে লাথি দেয়ার ভয় দেখাই অথবা লাঠি দিয়ে বাড়ি দেয়ার ভয় দেখাই, তখন লালু চার পা ছড়িয়ে দিয়ে উলটে মাটিতে গড়িয়ে পরে। ভাবখানা এমন- "মারলে মারো আমি যাচ্ছি না"।
লালু এখন কিছুটা বড় হয়েছে, বেশ তরতাজাই আছে। ওর বাকি ভাই-বোনেরা সবাই মারা গেছে। লালু যাতে একজন খেলার সঙ্গী পায় এবং রাতে কোনো কিছু এলে যাতে একা একা ভয় না পায় সেই জন্যে কয়েক দিন আগে আরো একজনকে নিয়ে আসা হয়েছে আশ্রমে। নাম তার ভুলু। দুজনের খুব ভাব হয়েছে। সারাদিনই তারা খেলাম মাঝেই থাকে।
ভুলুকে আনার খবর আমার জানার ছিলো না। তাই গতকাল যখন আমি আশ্রমে গিয়েছি তখন আমার ছোট কন্যা নুয়াইরা লালুর জন্য একটি গলার বেল্ট দিয়ে দেয়। নুয়াইরা দুটি বেল্ট কিনে এনেছে একটি লাল অন্যটি নীল রঙ্গের। আমাকে নীলটি দিয়ে বলেছে লালুকে গলায় পরিয়ে ভিডিও কল করে ওকে দেখাতে। তাই শুধু লালুর গলাতেই বেল্ট আছে। ভুলুর গলায় লাল বেল্ট নুয়াইরা নিজেই পরাবে।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জানুয়ারি, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:২২