বাংলা বাগধারা-প্রবাদ-প্রবচনের প্রতি আমার আলাদা একটা ভালো লাগা আছে। মাঝে মাঝে আমি কোনো কারণ ছাড়াই বেশ আনন্দ ও আগ্রহ নিয়ে এগুলি পড়ি। ছাত্র অবস্থাতেও পড়তাম, কোনো নম্বর পাওয়ার আশা না করেই পড়তাম। কিছুদিন আগে গাধা নিয়ে ২৮টি প্রবাদ-প্রবচন দিয়ে ছিলাম সামুতে। পরে গাধা নিয়ে আরো ৪৯টি প্রবাদ-প্রবচন চোখে পড়লো। ভাবলাম আপনাদের সাথেও শেয়ার করি।
যদিও এদের অনেকগুলি আবার একই রকম, একই অর্থ বহনকারী। শুধু এক বা একাধিক শব্দের ভিন্নতা আছে।
বাগধারা : কোন শব্দ বা শব্দ-সমষ্টি বাক্যে ব্যবহৃত হয়ে অর্থের দিক দিয়ে যখন বৈশিষ্ট্যময় হয়ে ওঠে, তখন সে সকল শব্দ বা শব্দ-সমষ্টিকে বাগধারা বা বাক্যরীতি বলা হয় ।
প্রবাদ-প্রবচন : অনেকদিন ধরে লোকমুখে প্রচলিত জনপ্রিয় উক্তি যার মধ্যে সরলভাবে জীবনের কোনো গভীরতর সত্য প্রকাশ পায় সেগুলো প্রবাদ বা প্রবচন নামে অভিহিত হয়ে থাকে।
তাহলে দেখে নেই গাধা নিয়ে বাংলা বাগধারা-প্রবাদ-প্রবচন গুলি।
০১। নিজে গাধা হইয়া যে আপনাকে হরিণ ভাবে, সে পগার ডিঙ্গাইবার সময় আপন ভ্রম টের পায়।
০২। গাধা কি জানে মধুর স্বাদ।
০৩। মধু, গাধার মুখের জন্যে নয়।
০৪। গাধার জন্যে মধু নহে।
০৫। গাধা জানে কি কুসুমের মূল্য ?
০৬। গাধা কি জানে মৃগনাভির গন্ধ ?
০৭। গাধা কি জানে মদের সােয়াদ।
০৮। গাধার পিঠে সোনার বোঝা চাপালেও সে গাধাই থাকে।
০৯। গাধাকে ইক্ষু দিয়ে প্রহার করিলে সে কি তার রসাস্বাদন পায় ?
১০। বাধা মানে না গাধা
১১। গাধার যদি তৃষ্ণা না থাকে, তবে তুমি তাহাকে কখনোই জল খাওয়াইতে পার না।
১২। এক লাঙ্গলে, গাধা ও বলদের ভালো যোগ হয় না।
১৩। চিরকাল গাধায় চড়া অপেক্ষা, এক বৎসর ভাল ঘোড়তে চড়াও ভাল।
১৪। গাধার পিঠে জোয়াল দিবার সময় কি অনুমতি নিতে হবে।
১৫। গাধাকে প্রশ্ন কোরো না সে মোট বইবে কিনা।
১৬। যে গাধা প্রতিবাদ করে না, তারই উপর ওজন চাপে
১৭। গাধা সাধারণের সম্পত্তি হইলে বােঝাইয়ের বেলা বড় শক্তাশক্তিতে পড়ে।
১৮। গাধার উপর চড়ে আবার সেই গাধারই তল্লাস।
১৯। গাধা পিটে কখন ঘোড়া হয় ?
২০। গাধাকে পরালে সাজ ঘোড়া নাহি হয়।
২১। গাধার কানে ধরে তুমি শিখাও নানা কথা। হোক্কা হোক্কা রব তার না হবে অন্যথা।
২২। এক গাধার অনেক মালিক হলে সে নেকড়ের পেটে যায়।
২৩। গাধার শির-ধােলায়ে সময় ও সাবান ক্ষয়।
২৪। সব গাধাই কান নাড়ে ।
২৫। আদা বেচে গাধা, মিঠে বেচে হারামজাদা।
২৬। কাদা মেখে ধোয় কাদা, তারে কে না বলে গাধা।
২৭। ঘুলিয়ে খায় গাধা, নাম হারামজাদা।
২৮। ঘােড়ার পেট, গাধার পিঠ, খালি থাকে কদাচিৎ।
২৯। গাধা ডাকলে তুমিও তার সাথে ডেকো না।
৩০। গাধার নিকটে রেশম চাওয়া।
৩১। ছােটলােকের কড়ি হলে বুদ্ধি হয় নট। গাধা হয়ে পাহাড়ে ওঠে, পাহাড়কে দেখে ছােট।
৩২। তিন পণ্ডিতে রক্ষা নেই পাঁচ পণ্ডিতে গাধা।
৩৩। দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা যে বুঝলে না, সে বড় গাধা।
৩৪। দাদার নামে গাধা, বাপের নামে আধা। নিজের নামে হারামজাদা।
৩৫। দূর হতে মনে হয় নহবতের বাণী।। বার বাড়ীতে গিয়ে শুনি গাধার চেঁচানি।
৩৬। ধােপার গাধা ভাতের কাঠি বয় না।
৩৭। ভাল ঘােড়ায় পায় না ঘাস, গাধায় চায় বুট আর মাষ।
৩৮। যত ছিল গাধা হল নবাবজাদা।
৩৯। সবাই সতী কবলায়, ধরা পড়েছে রাধা। সব জন্তু মােট বয়, ধরা পড়েছে গাধা।
৪০। সময়গুণে আপন-পর, খোঁড়া গাধা ঘােড়ার দর।
৪১। সেই গাধা জল খায়, তবু গাধা ঘুলিয়ে খায়।
৪২। গাধা সেই জল খায়, তবু হাঁদলে হাঁদলে খায়।
৪৩। সােনার গাধা।
৪৪। হাঁচি-টিকটিকির বাঁধা, যে না মানে সে গাধা।
৪৫। হাতি ঘােড় গেল তল, গাধা বলে আমার হাঁটুজল।
৪৬। কত শত হাতি ঘােড় গেল রসাতল। লেজ নেড়ে গাধা বলে দেখ মাের বল।
৪৭। সারা গ্রাম ঘুরে শাশুড়ি কেমন খুঁজে এনে দিল গাধা, বউটা কোথাও যেতে যদি চায় সদর দরজা বাঁধা।
৪৮। শশুর, শাশুড়ি-দুটোকে খেয়েছে, ঘরজামাইটা যায়নি বাদ, বারােটা গাঁয়ের গাধাও খেয়েছে, তবু বউটার মেটেনি সাধ।
৪৯। দূরের জামাই যত মান পায়, কাছেরটা তার আধা, ঘরে যেটা থাকে ফাইফরমাশ খেটে, বনে যায় গাধা।
শেষ করছি সুকুমার রায়ের একটি কবিতা দিয়ে -
সাধে কি বলে গাধা
বললে গাধা মনের দুঃখে অনেকখানি ভেবে-
“বয়েস গেল খাটতে খাটতে, বৃদ্ধ হলাম এবে,
কেউ না করে তোয়াজ তবু, সংসারের কি রীতি !
ইচ্ছে করে এক্ষুনি দিই কাজে কর্মে ইতি ।
কোথাকার ঐ নোংরা কুকুর, আদর যে তার কত-
যখন তখন ঘুমোচ্ছে সে লাটসাহেবের মত !
ল্যাজ নেড়ে যেই, ঘেউ ঘেউ ঘেউ, লাফিয়ে দাঁড়ায় কোলে,
মনিব আমার বোক্চন্দর, আহ্লাদে যান গলে ।
আমিও যদি সেয়ানা হতুম, আরামে চোখ মুদে
রোজ মনিবের মন ভোলাতুম অম্নি নেচে কুঁদে ।
ঠাং নাচাতুম, ল্যাজ দোলাতুম, গান শোনাতুম সাধা-
এ বুদ্ধিটা হয়নি আমার- সাধে কি বলে গাধা !”
বুদ্ধি এঁটে বসল গাধা আহ্লাদে ল্যাজ নেড়ে,
নাচ্ল কত, গাইল কত, প্রাণের মায়া ছেড়ে ।
তারপরেতে শেষটা ক্রমে স্ফুর্তি এল প্রাণে
চলল গাধা খোদ্ মনিবের ড্রইংরুমের পানে ।
মনিবসাহেব ঝিমুচ্ছিলেন চেয়ারখানি জুড়ে,
গাধার গলার শব্দে হঠাৎ তন্দ্রা গেল উড়ে ।
চম্কে উঠে গাধার নাচন যেমনি দেখেন চেয়ে,
হাসির চোটে সাহেব বুঝি মরেন বিষম খেয়ে ।
ভাবলে গাধা- এই তো মনিব জল হয়েছেন হেসে
এইবারে যাই আদর নিতে কোলের কাছে ঘেঁষে ।
এই না ভেবে এক্কেবারে আহ্লাদেতে ক্ষেপে
চড়্ল সে তার হাঁটুর উপর দুই পা তুলে চেপে ।
সাহেব ডাকেন ‘ত্রাহি ত্রাহি’ গাধাও ডাকে ‘ঘ্যাঁকো’
(অর্থাৎ কিনা ‘কোলে চড়েছি, এখন আমার দ্যাখো !’)
ডাক শুনে সব দৌড়ে এল ব্যস্ত হয়ে ছুটে,
দৌড়ে এল চাকর বাকর মিস্ত্রী মজুর মুটে,
দৌড়ে এল পাড়ার লোকে, দৌড়ে এল মালী-
কারুর হাতে ডাণ্ডা লাঠি, কারু বা হাত খালি ।
ব্যাপার দেখে অবাক সবাই, চক্ষু ছানাবড়া-
সাহেব বললে, “উচিত মতন শাসনটি চাই কড়া ।”
হাঁ হাঁ ব’লে ভীষন রকম উঠ্ল সবাই চটে
দে দমাদম মারের চোটে গাধার চমক ছোটে ।
ছুটল গাধা প্রাণের ভয়ে গানের তালিম ছেড়ে,
ছুটল পিছে একশো লোকে হুড়মুড়িয়ে তেড়ে ।
তিন পা যেতে দশ ঘা পড়ে, রক্ত ওঠে মুখে-
কষ্টে শেষে রক্ষা পেল কাঁটার ঝোপে ঢুকে ।
কাঁটার ঘায়ে চামড়া গেল, সার হল তার কাঁদা ;
ব্যাপার শুনে বললে সবাই, “সাধে কি বলে গাধা !”
বিশেষ ঘোষণা : প্রবাদ-প্রবচনের এই পোস্টগুলি ধারাবাহিকতার ফসল, বিশেষ কোনো ব্যক্তিকে উদ্দেশ্য করে পোস্ট করা নয়। দয়া করে মন্তব্যে কোনো ব্যক্তিবিশেষের দিকে ইংগিত না করার জন্য অনুরোধ রইলো।
=================================================================
বাংলা ভাষার সৌন্দর্য
ব্যাসবাক্য সহ কতিপয় সমাস
আধুনিক বাক্য সংকোচন
নতুন শব্দার্থ
নতুন বিপরীত শব্দার্থ
অ তে অজগর, A for Apple
প পদ্য.....
এ-পলাশ সে-পলাশ নহে
বিবাহ বিভ্রাট
বিবাহ বিভ্রাট - ২
পরিচিত শব্দের ভিন্ন রকম অর্থ - ১
পরিচিত শব্দের ভিন্ন রকম অর্থ - ২
ঢাকাবাসীকে ডেকে কই, নাক-মুখ ঢাকা কই!!!
হট্টবিলাসিনী (১৮+)
শুক্তিবাক্য
দেখা-দেখি
প্রবাদ-প্রবচনে "অতি"
বাংলা বাগধারা-প্রবাদ-প্রবচনে চাঁদ
বাংলা বাগধারা-প্রবাদ-প্রবচনে তাল
অন্ধ নিয়ে ২০টি প্রবাদ-প্রবচন
কপাল নিয়ে ৫১টি প্রবাদ-প্রবচন
কুকুর নিয়ে ৩৭টি প্রবাদ-প্রবচন
গাধা নিয়ে ২৮টি প্রবাদ-প্রবচন
বানর নিয়ে ৬৭টি প্রবাদ-প্রবচন
=================================================================