ছবি : নাদিয়া সোহেন
দিন কয়েক আগেই শেষ হলো একুশে বই মেলা। বিবি বাচ্চাদের নিয়ে গিয়েছিলাম একদিন মেলাতে। বেশ কিছুটা সময় নিয়ে মেলা ঘুরে ঘুরে বই দেখা, বই কেনা হলো। হঠাত করেই চোখে পড়লো পাবলিক লাইন দিয়ে চা কিনছে!! আমিতো অবাক!!! পরে বুঝলাম চা ফ্রী দিচ্ছে বলেই এই লাইন। আরেক যায়গায় দেখতে পেলাম এক প্যাকেট কফি কিনলে আরেক প্যাকেট ফ্রী দিচ্ছে। বিবি সাহেবা সেটা একটা কিনে নিলেন। সাথে কফিও খাওয়া হলো। সন্ধ্যার পরে যখন মেলা থেকে বেরিয়ে যাবো তখন দেখতে পেলাম একটি চায়ের স্টল। নানান ধরনের চা বিক্রি করছে!! বিবি সাহেবা মাটির ভারের কি এক শাহী-চা নিলেন ৭০ টাকায়। আমি আর বাচ্চার খেলাম আইসক্রিম। মাটির ভারের চা ভালো হবে না বলে আমি আগেই ভবিষ্যৎ বানী করলাম। কিন্তু হায়!! আমার ভবিষ্যৎ বানী ফললো না। চা টা নাকি অসাধারণ টেস্টি ছিলো, মুখে স্বদ লেগে থাকার মত টেস্টি!
বেশ কয়েক বছর আগের কথা, সন্ধ্যার সময় কক্সবাজারে সৈকতে বিচ চেয়ারে গা হালিয়ে দিয়ে শুয়ে আছি। একটি বাচ্চা ছেলে এসে বললো কফি খাবেন? আমি না করে দিলাম। পাশে শুয়ে থাকা বিবি সাহেবা বললেন তিনি খাবেন কফি। ছেলেটা ইনেস্টান্ট কফি মিকচার আর গরম পানি একটি প্লাস্টিকের বোতলে ভরে আচ্ছা মতো ঝাকানো শুরু করলো!! তৈরি হয়ে গেলো ফেনা উঠা গরম গরম কফি। স্বাদের কথা নাইবা বললাম। তবে সৈতকে এক চাচা মিয়া তার বড় এক ফ্লাকে করে রং চা নিয়ে এসে ছিলেন। হলকা লিকার আর আদার স্বাদে চাটা ছিলো বেশ ভালো।
দিদারের চায়ের দোকানের কথাতো বলেছি আগেই। ওর অনেক পরে আমাদের এলাকাতেই আরেক জন (কামরুল) চায়ের দোকান দিবে। দিদার কামরুলকে তার গোপন রেসেপি শিখিয়ে দিলো। প্রথম কয়েকদিন দিদার নিজেই সেই বিশেষ দুধ তৈরি করে দিলো। কিন্তু কোনো কারণে আমাদের এলাকার লোকজন সেই দুধ চা খুব একটা পছন্দ করলো না। কিছুদিন পরেই কামরুলের চায়ের দোকানটি উঠে গেলো। চায়ে স্বাদ হাতের উপরেও নির্ভর করে।
ইদানিং বেশ কিছু রং চায়ের দোকানে দেখা যায় চায়ের সাথে লেবু-আদার সাথে সাথে কালো জিরা দিয়ে দেয়। কালো জিরা এমনিতে ভালই তবে চায়ের মধ্যে কালো জিরা আমার কাছে বেশ বিরক্তিকর মনে হয়।
আমাদের মসজিদে রমজানে ২০ রাকাত খতম তারাবি হয়। হুজুরদের জন্য ফ্লাক্সে রং চায়ের ব্যবস্থা করা হতো, দোকান থেকেই তৈরি হয়ে আসতো। কিন্তু তার স্বাদ ততোটা ভালো ছিলো না। বেশ কয়েক বছর ধরে সেই চা আর নেয়া হয় না। কারণ এখন খতিব সাহেব নিজেই তার বাড়ি থেকে ছোট্ট একটি ফ্লাক্সে করে মসলাদার রং চা নিয়ে আসেন। নামাজ শেষ হয়ে গেলে সবাই বেরিয়ে যাওয়ার পরে আমরা কয়েকজন মসজিদ থেকে বের হই। হাফ পেয়ালা করে চা পাই সকলেই, কখনো তারচেয়েও কম। সেই চায়ের স্বাদ তুলনা করার মতো চা অন্য কোথাও পাইনি। আজকেও নামাজ শেষে সেই সুস্বাদু চা পান করে এলাম।