আমার দেখা অসাধারন একটি সিনেমা ফরেস্ট গাম্প (প্রথম অংশ) এবং আমার দেখা অসাধারন একটি সিনেমা ফরেস্ট গাম্প (দ্বিতীয় অংশের) পর থেকে --
ফরেস্টের কাছে খবর আসে ওর মা অসুস্থ, তার ক্যানসার ধরা পড়েছে। ফরেস্ট সব কিছু ছেড়ে ছুড়ে দিয়ে তার মায়ের কাছে চলে যায়। কিছুদিন পর ওর মা মারা যায়। এরপর ফরেস্ট আর চিংড়ি ব্যবসায় ফিরে যায় না। ওর বাড়ির কাছে ফরেস্ট একটি মাঠের ঘাস কাটার চাকুরির অফার পায়। যদিও ফরেস্টের টাকার সমস্যা ছিলো না তবুও সে বিনা বেতনে সেই ঘাস কাটার চাকরিটি নিয়ে নেয়। কিছুদিন পর লেফটেন্যান্ট ড্যানের চিঠি আসে ফরেস্টের কাছে। চিঠিতে জানা যায় লেফটেন্যান্ট ড্যান ওদের ব্যবসার আয়ের সব টাকা অ্যাপেল মোবাইল কোম্পানিতে ইনভেস্ট করেছে। যেখান থেকে প্রচুর পরিমাণে লাভ হয়েছে। বিশাল সেই লাভের আংশ ফরেস্টের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছে। ফরেস্ট সেই টাকা থেকে কিছু টাকা প্রদান করে একটা হাপাতালে। কিছুটাকা দিয়ে একটি চার্চ তৈরি করে। আরো নানান রকম সেবামূলক যায়গায় ফরেস্ট তার টাকা দান করে। আর তার প্রিয় বন্ধু বুবার মায়ের কাছেও একটা মোটা অংকের টাকা পাঠিয়ে দেয়। সেই টাকায় তাদের ভাগ্য ফিরে যায়।
এতো কিছুর পরেও ফরেস্টের কোনো বন্ধু ছিলো না। ফরেস্টে জেনিকে খুব মিস করতো। হঠাৎ একদিন জানি ফরেস্টের কাছে ফিরে আসে। ফরেস্ট খুব খুশী হয়, সে সারাদিন জেনির সাথে গল্প করত। জেনি ফরেস্টকে একজোড়া নাইকি জুতা উপহার দেয়। একদিন ফরেস্ট জেনিকে বিয়ে করার প্রস্তাব দেয়। কিন্তু জেনি বলে ফরেস্ট জেনির চেয়ে অনেক ভালো কোনো মেয়েকে ডিজার্ভ করে। এই কথা শুনে ফরেস্টের খুবই মন খারাপ হয়ে যায়। সেদিন রাতে জেনি ফরেস্টের রুমে আসে এবং এক সময় দুজনে মিলিত হয়। পরদিন সকালে ফরেস্টকে কিছু না জানিয়ে জেনি আবারও চলে যায়।
জেনি কিছু না বলে চলে যাওয়ার পরে ফরেস্ট আবার একা হয়ে যায়। কোনো কিছুতেই মন বসতোনা তাঁর। মন খুবই খারাপ হয়ে থাকে সব সময়। এসবের মধ্যে হঠাত করেই ফরেস্টের খুব দৌড়াতে ইচ্ছে করে। ফরেস্ট কোনো কিছু না ভেবেই দৌড়াতে শুরু করে। তখন তার পরনে ছিল জেনির দেয়া সেই নাইকির জুতা জোড়া। দৌড়াতে ওর খুবই ভালো লাগছিল। সেদিন ফরেস্ট সারাটাদিন দৌড়াতে লাগলো। ফরেস্ট কোনো কিছু না ভেবেই, উদ্যেশ্যহীন ভাবে দৌড়তে থাকলো। শুধু মাত্র ঘুমানো, খাওয়া আর টয়লেটে যাওয়ার সময়টুকু বাদে মাসের পর মাস দৌড়ে যাচ্ছিল। এই রহস্যময় দৌড়ের জন্য ফরেস্ট আবার ফেমাস হয়ে যায়। মিডিয়া গুলো ওকে কাভার করতে থাকে। সবাই মনে করত ফরেস্টে দৌড়ানো পিছনে কোন একটা উদ্দেশ্য আছে অথবা ফরেস্ট কোনো প্রতিবাদ জানানোর জন্য এমন দৌড়চ্ছে। অথচো কেউ জানতো না ফরেস্টের এই দৌড়ানোর পেছনে কোনো উদ্দেশ্যই নেই। ওর দৌড়তে ইচ্ছে হচ্ছিল বলেই ও দৌড়াচ্ছিল।
এক সময় দেখা যায় ফরেস্টের সাঙ্গে আরো অনেকেই দৌড়চ্ছে। এইভাবে একটানা তিন বছর দুই মাসেরও বেশী সময় দৌড়ানোর পরে ফরেস্ট হঠাৎ থেমে যায়। দৌড়ানো বন্ধ করে ফরেস্ট ওখান থেকে বাড়ি চলে আসে। বাড়ি ফেরার পরে ফরেস্টে জেনির একটি চিঠি পায়। জেনি ফরেস্টকে চিঠিতে তার ঠিকানা দিয়ে দেখা করতে বলেছে। জেনির বাড়িতে যাওয়ার জন্যই এখন ফরেস্টে এই বাস-স্ট্যান্ডে বসে আছে বাসের অপেক্ষা। ফরেস্টের পায়ে জেনির দেয়া সেই জুতা যা একটানা দৌড়ের ধকলে ছিড়ে ফেটে গেছে।
ফরেস্টের পাশে বসা মহিলা ঠিকানাটা দেখে জানাই এই ঠিকানাটা কাছেই, ফরেস্ট হেঁটেই চলে যেতে পারবে। এটা শোনার পর ফরেস্ট ওখান থেকে দৌড়ে চলে যায় জেনির বাসায়। ওখানে যেয়ে দেখে জেনি একটা হোটেলে চাকরি করে। জেনির একটি ছোট ছেলে হয়েছে। ছেলেটির নাম জুনিয়ার ফরেস্ট গাম্প। অর্থাৎ বাচ্চাটি আসলে ফরেস্টেরই ছেলে।
জেনি ফরেস্টকে জানায় তাঁর একটা কঠিন রোগ হয়েছে, সে আর খুব বেশীদিন বাঁচবে না। তখন ফরেস্ট জেনি আর তার ছেলেকে নিজের বাড়িতে নিয়ে যেতে চায়। জেনি রাজি হয় এবং ফরেস্টের বাড়িতে উঠে আসে। একদিন জেনি ফরেস্টকে বিয়ে করার প্রস্তাব দেয়। ফরেস্ট সাথে সাথে রাজি হয়ে যায়। ছোট একটি অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ওদের বিয়ে হয়ে যায়। কিছুদিন পরে জেনি মারা যায়।
ছোটবেলায় ফরেস্ট আর জেনি যে গাছে চরে খেলা করতে সেই গাছের নিচে ফরেস্ট জেনিকে কবর দেয়। ফরেস্ট প্রতিদিন সেই কবরের কাছে এসে একা একা জেনির সাথে কথা বলতো।
ফরেস্ট তার ছেলেকে খুব ভালবাসত। ফরেস্ট তার ছেলেকে স্কুলে ভর্তী করিয়েদেয়। স্কুলের প্রথমদিন সে তার ছেলেকে স্কুলের বাসে তুলে দেয়ার জন্য অপেক্ষা করছে, এমনি ভাবেই ফরেস্টের মাও একদিন তাকে স্কুল বাসে তুলে দিয়ে ছিলেন। স্কুল বাসটি সেখানে উপস্থিত হলে জুনিয়ার ফরেস্ট স্কুল বাসে উঠে চলে যায়, আর তখন ফরেস্ট আবার এক হয়ে যায়.....
----- সমাপ্ত -----
বলিউড অভিনেতা আমির খান এই ফরেস্ট গাম্প সিনেমার একটি বলিউড ভার্সন তৈরি করার ঘোষনা দিয়েছিলেন। সেটির নাম রাখা হয়েছে "Lal Singh Chaddha" (লাল সিং চাড্ডা), সিনেমায় মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করবেন আমির খান।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই নভেম্বর, ২০২১ রাত ৯:০৪