আমি নতুন সিনেমার চেয়ে পুরনো সিনেমা গুলি দেখতে বেশ পছন্দ করি। বাংলা কিছু সাদা কালো সিনেমা এখনো মাঝে মাঝেই আমি দেখি। হলিউডের খুব পুরনো সিনেমা না দেখলেও মোটামুটি পুরনো, ১৯৮০ এর পরের সিনেমা গুলি দেখি। এই কিছু দিন আগে দেখলাম ১৯৯৪ সালে মুক্তি পাওয়া একটি কমেডি-ড্রামা সিনেমা ফরেস্ট গাম্প (Forrest Gump)।
আমার দেখা অসাধারন সিনেমাগুলির মধ্যে এটি একটি। উইন্সটন গ্রুমের লেখা উপন্যাস ফরেস্ট গাম্প অবলম্বনে নির্মিত হয়েছিলো এই সিনেমাটি। ১৯৯৫ সালের অস্কারে সিনেমাটি ১৪ টি বিভাগে মনোনয়ন পায় এবং ৬ টি বিভাগে শ্রেষ্ঠ পুরস্কার লাভ করে। সিনেমায় মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছে টম হ্যাঙ্কস, যার অভিনয় আমি বেশ পছন্দ করি। এই সিনেমায় অভিনয়ের জন্য টম হ্যাঙ্কস শ্রেষ্ঠ অভিনেতার অস্কার জিতে নেন।
এখানে বলে রাখা ভালো আমি ফরেস্ট গাম্প সিনেমার পুরো গল্পটাই উপস্থাপন করে দিবো। তাই এটিকে কাহিনী সংক্ষেপ বা রিভিউ যাই বলেন না কেনো পড়ে ফেললে মূল সিনেমা দেখার আগ্রহে ভাটা পরতে পারে। লেখাটা বিশাল বড় হয়ে যাওয়ার কারণে আমি ৩টি পর্বে শেষ করার চেষ্টা করবো।
সিনেমা শুরু হয় ১৯৮১ সালের কোন এক সময়ে বোকাসোকা সাদাসিদে ফরেস্ট গাম্প বাসস্ট্যান্ডে বসে পাশের অপরিচিত মহিলাকে নিজের জীবনের গল্প শোনাচ্ছে। মহিলাটির পায়ে চকচকে সাদা জুতা আর ফরেস্টের পায়ে ছেড়া ফাটা পুরনো জুতা।
ফরেস্ট গাম্প যখন বাচ্চা বয়েসর তখন তাঁর শিরদাঁড়া বাঁকা বলে ডাক্তার তাঁকে লোহার রড যুক্ত স্পেশাল জুতো পরিয়ে দেয়।
ফরেস্টের মা তাঁকে স্কুলে ভর্তি করার জন্য নিয়ে যান, কিন্তু ফরেস্টের আইকিউ লেভেল কম থাকায় প্রিন্সিপাল ওকে এডমিশন দিতে চায় না। বাধ্য হয়ে ফরেস্টের মা প্রিন্সিপালের শারীরিক চাহিদা মিটানোর পরে ফরেস্টকে স্কুলে ভর্তী করানো হয়।
ফরেস্টদের বাড়িতে শুধু ফরেস্ট আর ওর মা থাকতেন, কারণ ফরেস্টের বাবা ছিলো না। ফরেস্টের মা সংসার চালানোর জন্য ওদের বাড়ীটিতে হোম-স্টে হিসেবে নানান লোকেদের অর্থের বিনিময়ে থাকতে দিতো। একদিন ওদের বাড়িতে একজন গায়ক আসে, সে গিটার বাজিয়ে গান করছিলো আর ফরেস্ট গানের তালে তালে নাচছিল। ফরেস্টে পায়ে লাগানো লোহার রড যুক্ত স্পেশাল জুতোর কারণে তার স্টেপগুলি খুব অদ্ভূত দেখাচ্ছিলো। ফরেস্টের সেই অদ্ভূত স্টেপগুলো গায়কটি খুব ভালভাবে খেয়াল করছিল। কিছুদিন পর ফরেস্টে আর তাঁর মা বাজার থেকে ফেরার সময় টিভিতে দেখতে পায় সেই গায়ক ফরেস্টের নাচের সেই অদ্ভূত স্টাইলে নাচছে আর দর্শকরা সেটা খুবই পছন্দ করছে।
স্কুলের প্রথম দিনে স্কুল বাসে উঠার পরে ফরেস্টকে কেউ পাশে বসতে দিতে চায় না। ঠিক তখন একটি বাচ্চা মেয়ে ফরেস্টকে ডেকে তার পাশে বসতে দেয়। মেয়েটির নাম ছিলো জেনি। এরপরে জেনির সাথে ফরেস্টের খুব ভাল বন্ধুত্ব হয়ে যায়। অবসর সময়ে ওরা একটা গাছের ডালে বসে নিজেদের মধ্যে গল্প করে।
একদিন জেনি আর ফরেস্ট পাশাপাশি হেঁটে যাচ্ছিলো তখন হঠাৎ পিছন থেকে ওদের ক্লাসের কয়কজন ছেলে ফরেস্টের মাথায় ঢিল ছুড়তে থাকে। জেনি ওদের থামতে বললেও ছেলেগুলি থামে না। তখন জেনি ফরেস্টকে সেখান থেকে দৌঁড়ে পালিয়ে যেতে বলে। জেনির কথা শুনু বোকাসোকা ফরেস্ট জীবনে প্রথমবার দৌড়তে শুরু করে। ছেলেগুলি তখন সাইকেল নিয়ে ফরেস্টের পিছু ধাওয়া করে। পিছন থেকে জেনি রান ফরেস্ট রান বলে ফরেস্টকে পালিয়ে যেতে বলে। সেটা শুনে ফরেস্ট আরো জোড়ে দৌড়াতে শুরু করলে ওর পায়ে লাগানো সেই লোহার রড গুলি খুলে পড়ে যায়। ফলে ফরেস্ট আরো জোড়ে দৌড়াতে শুরু করে। ছেলেগুলি সাইকেল নিয়েও তাকে ধরতে পারে না।
জেনির মা ছিলো না। তাঁর বাবা ছিলো মাতাল এবং অকারণেই সে জেনিকে শারিরীক অত্যাচার করতো। তাই পুলিশ এসে জেনিকে তার নানীর বাড়িতে দিয়ে যায়। জেনির নানীর বাড়ি ছিলো ফরেস্টের বাড়ির খুবই কাছে। তাই রাতের বেলা যখন জেনি ভয় পেতো তখন সে ফরেস্টের ঘরে এসে এক সাথে ঘুমাতো। জেনিই ছিলো ফরেস্টের একমাত্র বন্ধু।
দেখতে দেখতে ওরা বড় হয়ে উঠে। স্কুলের সেই ছেলেরাও বড় হয়ে গেছে। সেই ছোট বেলার মতো আবারও ছেলে গুলি ফরেস্টকে ঢিল ছুড়লে জেনির কথা শুনে আবারও ফরেস্ট দৈড়তে শুরু করে। ফরেস্ট প্রচন্ড গতিতে দৌড়ে স্কুলের রাগবী খেলার মাঠ পার হয়ে যায়।
ওর দৌড়ের গতি দেখে রাগবী কোচ ফরেস্টকে দলে নিয়ে নেয়। ফরেস্ট খেলা বুঝতো না, নিয়ম কানুন জানতো না, কিন্তু যখনই ওর হাতে কেউ বল তুলে দিতো ও দৌড়ে মাঠ পাড় করে ফলতো, কেউ ওকে ধরতে পারতো না। ফরেস্টের কারণে ওর দল সব সময় খেলায় জিতে যেতো। দেখতে দেখতে ফরেস্টের খেলার নাম ছড়িয়ে পরে। ফরেস্ট অল-এ্যামেরিকান রাগবী টিমে সিলেক্ট হয়ে যায়।
এই ভালো খেলার জন্যই বোকাসোকা ফরেস্টের আইকিউ কম থাকার পরেও একটি কলেজে পড়ার সুযোগ পায় এবং পাঁচ বছর পরে সেই কলেজ থেকে ডিগ্রী পেয়েছিল।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই নভেম্বর, ২০২১ বিকাল ৪:৪৪