সত্যবতীর গর্ভে চিত্রাঙ্গদ ও বিচিত্রবীর্য নামে শান্তনুর দুই ছেল জন্ম নিল। ছোট ছেলে বিচিত্রবীর্য যৌবনলাভ করার আগেই শান্তনু মারা গেলেন। সত্যবতীর মত নিয়ে ভীষ্ম চিত্রাঙ্গদকে রাজা হিসেবে ঘোষণা করলেন। চিত্রাঙ্গদ ছিলো প্রচন্ড শক্তিশালী এবং অহংকারী। সে মানুষ, দেবতা, অসুর, গর্ন্ধব সকলেই নিকৃষ্ট মনে করতো।
এদিকে গর্ন্ধবরাজের নামও ছিল চিত্রাঙ্গদ। একদিন গর্ন্ধবরাজ চিত্রাঙ্গদ সত্যবতীর পুত্র চিত্রাঙ্গদকে তাঁর নাম পরিবর্তন করতে বললেন, আর নাম পরিবর্তন না করলে তাঁর সাথে লড়াইয়ে নামতে বললেন।
কুরুক্ষেত্রে হিরন্মতী নদীর তীরে দুজনের মধ্যে প্রচন্ড লড়াই শুরু হল। লড়াইয়ে সত্যবতীর পুত্র চিত্রাঙ্গদ নিহত হল। চিত্রাঙ্গদের মৃত্যর পরে ভীষ্ম অপ্রাপ্তবয়স্ক বিচিত্রবীর্যকে রাজপদে বসালেন।
বিচিত্রবীর্য যৌবনলাভ করার পরে ভীষ্ম তাঁকে বিয়ে করানোর কথা ভাবলেন। কাশীরাজার তিন পরমা সুন্দরীর রাজকন্যার একসঙ্গে স্বয়ংবর হবে শুনে ভীষ্ম তাঁর সৎ মা সত্যবতীর অনুমতি নিয়ে একাই রথা নিয়ে বারাণসীতে সেই স্বয়ংবরে পৌছে গেলেন। নানা দেশ থেকে অনেক রাজারা স্বয়ংবরসভায় উপস্থিত হয়েছিলেন। যখন রাজকন্যাদের সঙ্গে সমস্ত রাজাদের পরিচয় করিয়ে দেয়া হচ্ছিলো তখন রাজকন্যারা ভীষ্মকে বৃদ্ধ ও একাকী দেখে তাঁর কাছ থেকে সরে গেলো। সভায় উপস্থিত অন্যান্য সকল রাজারা নানান কথায় ভীষ্মকে উপহাস করতে লাগলো।
এই সব কারণে ভীষ্ম ক্রুদ্ধ হয়ে তিন রাজকন্যাকেই নিজের রথে তুলে নিলেন এবং উপস্থিত রাজাদের উদ্দেশ্যে বললেন- "বিবাহের নানান পদ্ধতি প্রচলিত আছে, কিন্তু স্বয়ংবরসভায় বিপক্ষদের পরাজিত করে কন্যা হরণ করাই ক্ষত্রিয়ের পক্ষে শ্রেষ্ঠ পদ্ধতি। তাই আমি এই কন্যাদের হরণ নিয়ে যাচ্ছি, তোমাদের শক্তি থাকলে আমাকে আটকাও।"
ভীষ্মের কথা শুনে অন্যান্য রাজারাও রেগে গেলো, তারা তাদের অলংকার খুলে রেখে লড়াইয়ের জন্য তৈরি হল। রাজারা নিজ নিজ রথে উঠে ভীষ্মকে আক্রমণ করলো। কিন্তু ভীষ্মের সঙ্গে লড়াইয়ে রাজারা পরাজিত হল। সকলে পরাজয় মেনে নিলেও শাল্বরাজা ভীষ্মের পিছু ধাওয়া করতে লাগলো। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ভীষ্মের শরাঘাতে শাল্বরাজার সারথি ও ঘোড়া মারা পরলে তিনিও লড়াই ছেড়ে নিজ রাজ্যে ফিরে গেলেন। ভীষ্ম তিন রাজকন্যাকে নিজের সাথে যত্নসহকারে হস্তিনাপুরে নিয়ে গেলেন।
হস্তিনাপুরে পৌছে ভীষ্ম বিচিত্রবীর্যের সাথে তিন রাজকন্যার বিবাহের প্রস্তুতি নিতে শুরু করলে কাশীরাজের বড় কন্যা অম্বা ভীষ্মকে জানালো যে সে স্বয়ংবরে শাল্বরাজকেই স্বামী হিবেসে পছন্দ করেছিল এবং শাল্বরাজাও তাকে স্ত্রী হিসেবে পছন্দ করেছিলেন। অম্বার কথা শুনে ভীষ্ম অম্বাকে শাল্বরাজার কাছে পাঠিয়ে দিলেন, এবং কাশীরাজের বাকি দুই কন্যা অম্বিকা ও অম্বালিকার সঙ্গে বিচিত্রবীর্যের বিবাহ দিলেন।
বিচিত্রবীর্য দুইটি পরমা সুন্দরী যুবতী পত্নী পেয়ে কামাসক্ত হয়ে পড়লো। সাত বৎসর পরে বিচিত্রবীর্য যক্ষারোগে আকান্ত হল। চিকিৎসকদের বহু চেষ্টাতেও বিচিত্রবীর্যকে বাঁচানো গেলো না।
====================================================================
বিশেষ ঘোষণা : হিন্দুদের ধর্মীয় সাহিত্যের মহাকাব্য মহাভারতের কথা আমরা সকলেই জানি। আমি এটিকে পড়ছি একটি কল্পকাহিনীর সাহিত্য হিসেবে, ধর্মগ্রন্থ হিসেবে নয়। আমি মনে করি "যার যার বিশ্বাস তার তার কাছে। অন্যের বিশ্বাস বা ধর্মানুভূতিতে খোঁচা দেয়ার কোনো ইচ্ছে আমার নেই।" এই গ্রন্থে প্রচুর কল্পকাহিনী রয়েছে। সেগুলিই আমি এই সিরিজে পেশ করবো। যারা মহাভারত পড়েননি তারা এখান থেকে ধারাবাহিক ভাবে সেগুলি জেনে যাবেন। মনে রাখতে হবে আমার এই পোস্ট কোনো ভাবেই ধর্মীয় পোস্ট নয়।
লেখার সূত্র : কৃষ্ণদ্বৈপায়ন ব্যাস কৃত মহাভারত : অনুবাদক - রাজশেখর বসু।
ছবির সূত্র : এই সিরিজে ব্যবহৃত সকল ছবি বিভিন্ন সাইট থেকে সংগৃহীত।
====================================================================
সিরিজের পুরনো পর্বগুলি দেখতে -
মহাভারতের গপ্পো - ০০১, মহাভারতের গপ্পো - ০০২, মহাভারতের গপ্পো - ০০৩, মহাভারতের গপ্পো - ০০৪
মহাভারতের গপ্পো - ০০৫, মহাভারতের গপ্পো - ০০৬, মহাভারতের গপ্পো - ০০৭, মহাভারতের গপ্পো - ০০৮
মহাভারতের গপ্পো - ০০৯, মহাভারতের গপ্পো - ০১০, মহাভারতের গপ্পো - ০১১, মহাভারতের গপ্পো - ০১২
মহাভারতের গপ্পো - ০১৩, মহাভারতের গপ্পো - ০১৪, মহাভারতের গপ্পো - ০১৫, মহাভারতের গপ্পো - ০১৬
====================================================================