এই বাক্যটি এখন আর সত্যি নয়। একটা সময় ছিলো যখন রিলের ক্যামেরায় ছবি তুলতাম। ৩৬টি ছবি উঠতো একটি রিলে। ক্যামেরায় সেই রিল ফিট করার সময় এমন সূক্ষ্ণ ভাবে বসাতাম যাতে অতি সামান্য অংশও নষ্ট না হয়। ৩৬টির বেশী ছবি উঠলে কিযে আনন্দ হতো তা বর্তমান ডিজিটাল ফটোগ্রাফাররা বুঝবেন না। বেড়াতে গেলে কার ভাগে কয়টা ছবি সেটা আলাদা করে মনে রাখতে হতো। ফলে প্রতিটা ছবি তোলার সময় স্থান, ব্যাকগ্রাউন্ড, ফ্রেম ইত্যাদি নানান দিক বিবেচনা করে তোলা হতো। তখন প্রতিটা ছবির পিছনে গল্প থাকতো। এখন অনেকের হাতেই ডিএসএলআর, প্রায় সকলের হাতেই ভালোমানের ক্যামেরা যুক্ত স্মাটফোন। ছবি তোলায় খরচ নেই, রিল থেকে ডেবলাপ করে ছবি ধোলাই করার ঝামেলা নেই, খরচও নেই। তাই সকলে প্রচুর ছবি তুলতে পারছেন, ফলে ছবির পিছনের গল্প গেছে কমে। এখন আর সব ছবির পিছনে গল্প থাকে না। অন্ততো আমার তোলা সব ছবির পিছনে এখন আর তেমন গল্প থাকে না।
আজ এখানে সামুর ছবি প্রতিযোগিতার জন্য আমার তোলা ১২টি ছবি রইলো, যার কয়েকটি গল্পহীন আর কয়েকটি গল্পযুক্ত। সমস্যা হচ্ছে ১২টি ছবির মধ্যে কয়েকটি হয়তো আগেও সামুতে দেয়া হয়েছে। সামুতে এতো ছবি শেয়ার করেছি যে, কোনটি কখন শেয়ার করেছি তা মনে রাখা কঠিন। আগে এই ছবিগুলির কোনোটি দেখে থাকলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন সকলে।
০১। বাড়ি ফেরা
২০১৩ সালের জুলাই মাসের ৮ তারিখের ছবি এটি। এক ছোটো ভাইয়ের নিমন্ত্রণে ঢাকা থেকে গেছি বিরামপুরে বেড়াতে আমরা ৪ জন। সেখান থেকে কয়েকটা যায়গা বেড়িয়ে শেষ পর্যন্ত আমাদের গন্তব্য ছিলো তেঁতুলিয়ার ডাকবাংলো। বেশ কয়েকবার বেড়িয়েছি আমরা ওখানে। অনেক স্মৃতি জড়ানো। ৭ তারিখ রাতে সেই স্মৃতির টানেই ঢাকা থেকে দুইজন ড্রাইভার সাথে নিয়ে ছুটে আসে সাইফুল আমাদের সাথে যোগ দিতে। শুধু রাতটুকু আড্ডা দিয়ে পরদিন সকালেই ও আবার চলে যায় ঢাকায়। আমরাও ফিরতি পথ ধরি ঢাকার। চাইলে ওর গাড়িতে আমরা একজন ফিরে আসতে পারতাম, তা আমরা করিনি।
০২। রাজবাড়ির কন্যা
গিয়েছিলাম একটি কনে দেখার অনুষ্ঠানে। গিয়ে দেখি সেখানে কনে পক্ষ বিয়ের আয়োজন করে বসে আছে। পরিস্থিতি ঘোলাটে। বেশ বড়সড়ো ঝামেলা হয়েছিলো। আমি ঐসব ঝামেলা গায়ে না মেখে বৌ-বাচ্চা আর ভাগনিকে নিয়ে ঢুকে যাই গ্রামের ফসলের মাঠে। খুঁজেপাই এক মৌরি খেত। কানে পিঁয়াস ফুলে দিয়ে সেই মৌরিক্ষেতের সামনে আমার ভাগনি।
০৩। তিন নাম্বার ছবিটা প্রথমে দেয়া আছে
০৪। পূর্ণ গ্রাস সূর্যগ্রহণ
২০১৯ সালে ২৬ ডিসেম্বর বছরের তৃতীয় সূর্যগ্রণ কালে এই ছবিটি তুলে ছিলাম আমি। সূর্যের বা সূর্যগ্রহণের ছবি তোলার মতো ভালো কোনো লেন্স এবং ফিল্টার কোনোটাই নেই আমার। তবুও মনতো মানে না। এক্সরে পেপার ব্যবহার করে কোনো রকমে এই রকম কয়েকটা ছবি আমি তুলতে পেরেছিলাম। এবং এই ছবি দেখে আমি নিজেই মুগ্ধ হয়েছিলাম।
০৫। ২২ ডিগ্রী সৌর বর্ণবলয়
সকাল শেষ প্রায়, দুপুর শুরু হচ্ছে, আমার ছোট বোন ফোন করে বললো - "ভাইয়া আকাশে দেখেন, সূর্যের চারদিকে একটা রিং!!" শুনেই আমি আকাশ দেখতে বের হলাম। আসলেই সূর্যের চারদিকে একটা রিং দেখা যাচ্ছে। এটিকে বলে ২২ ডিগ্রী সৌর বর্ণবলয়। এবং আগের মতোই বলতে হচ্ছে এই ছবি তোলার মতো ভালো যন্ত্রপাতি আমার নাই। তবুও বেশ কয়েকটি ছবি তুলেছি কাঁচা হাতে।
০৬। গল্পহীন ছবি
ভারতের কাশ্মীরের বেতাব ভেলিতে এই যায়গাটি। চোখ জুড়িয়ে যাওয়ার মত সুন্দর এই যায়গাগুলি।
০৭। একজন চমৎকার মানুষ
এই ব্যাক্তি চমৎকার মানুষ। যেকোনো আসর জমিয়ে রাখার অসাধারণ দক্ষতা উনার আছে। তেমনি ভাবে উনি একজন ভালো ফটোগ্রাফার। উনি যে ফুলের ছবি তোলার চেষ্টা করছেন, আমিও সেই ফুলের একটি ছবি তুলেছিলাম। আমার তোলা ছবিটি মোটামুটি হয়েছিলো, উনার তোলা ছবিটি কেমন ছিলো জানি না। তবে উনার ছবি তোলার চেষ্টার এই স্মৃতি আমি ধরে রেখেছি আমার ক্যামেরায়।
০৮। অবাস্তব ছবি
চমৎকার একটি ছবি। বেশ কয়েকবার ক্যামেরার সেটিং পরিবতর্ণ করে, বেশ কয়েকটি ব্যর্থ চেষ্টা শেষে আমি কয়েকটি ভালো ছবি তুলতে পরেছিলাম। এই সৌন্দর্য ক্যামেরার সাটার স্পিডের কেরামতি। বাস্তব চোখে এমনটা দেখার কোনো সুযোগ নেই।
০৯। গল্পহীন ছবি
খুব চমৎকার কোনো গল্প কিন্তু হতে পারতো!!
রমনা পার্কের একটি নির্জন বেঞ্চ, পায়ের নিচে পরে আছে রক্ত রাঙ্গা পলাশ ফুল!!
১০। বজরা শাহী মসজিদ
আমার ধারনা বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর ১০টি মসজিদের তালিকা করলে নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ী উপজেলার বজরা ইউনিয়নের এই মসজিদটির স্থান তালিকার প্রথম দিকেই থাকবে।
১১। গল্পহীন ছবি
মুড়াপাড়া জমিদার বাড়ি
১২। আমাদের স্মৃতিসৌধ
অনেকবার এর সামনে দিয়ে যাওয়া আস করলেও ভেতরে ঢুকা হয়নি তখনও। বৌ-বাচ্চা নিয়ে গিয়ে ফিরে এসি প্রবেশদ্বারে তালা ঝুলতে দেখে। অনেক পরে ঐদিন সুযোগ হলো দেখার। কি নিপুন এক নির্মাণ!! অবস্থান পরিবর্ত হলে বার্হ্যিক অববয়ও কেমন পরিবর্তন হয়ে যায়!!! বাস্তবটা এমনই!!
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জুন, ২০২১ রাত ১১:১৯