রাত প্রায় ১২টা ১৫ মিনিট।
জিলানী ভাই বল্লো হিরা ভাই কি সত্যিই শ্মশানে যেতে চান?
আমি আর জিলানী ভাই আশ্রমের এক রুমে মশারির ভেতর শুয়ে আছি, অন্য রুমে বশির, জজ মিয়া আর মহিউদ্দিন, বাইরে টঙের উপর সারোয়ার একা শুয়ে, ইস্রাফিল বাইরে কি জেন করে।
আমি বললাম চলেন যাই দেখে আসি যদি কাউকে পাই!
আশ্রম থেকে চিতাখোলা মাত্র ৫ মিনিটের হাঁটা পথ।
চিতাখোলার পাশেই বিশাল বড় মন্দির।
মন্দিরে একজন ব্রাহ্মণ মানে পূজারি রাতে একা থাকে। লোক মুখে শুনেছি পূজারির বয়স শতবছরের উপরে! সব্বাই নাকি জন্মমের পর থেকেই তাকে এমনিই দেখতেছে। উনার বয়স থেমে আছে হয়তো। (আমি নিজেও অনেক বছর একই দেখতেছি)।
রাত প্রায় সারে ১২টায় আমি ইস্রাফিল এবং জিলানী ভাই হাঁটা শুরু করলাম চিতাখোলার উদ্দেশ্যে।
আমরা সবাই লুঙ্গি আর গেঞ্জি গায়ে। গত এপ্রিল মাসের ২ তারিখের কথা। সেদিন কেন জানিনা প্রচন্ড কুয়াশা ছিলো। চারিদিক খোলা পান্তর কিন্তু বেশিদূর দেখা যায়না। এই সময় এতো কুয়াশা ভাবা যায়না!
আধা পথ চলার পর আমার একটু একটু করে শীত লাগতে ছিল। হাতের লাইটের চার্জ শেষ। জ্বলে নিবে - জ্বলে নিবে।
জিলানী ভাই ভাবছিলো এতো রাতে সুন্দর বিছানা-মশারি ছেড়ে ঘুম ঘুম চোখে আমি এতো বড় রিস্ক নিবনা।
আমাদের এতো বেশি রিস্ক নিতেই হলো।
তবে আমার জীবনে এই প্রথম রাত বারো টার পর চিতাখোলায় যাওয়া।
আমি জানিনা আমার মত আর কত জনের এমন অভিজ্ঞতা হইছে???
(চলবে,,,,,)
(যদি বেচে থাকি ঈদের পর আশ্রমের পাশের ঐ শ্মশানে বসেই বাকিটুকু পোস্ট করবো। হয়তো একই সময়ে, অবশ্যই মেঘলা রাতে।)
উপরের অংশটুকুর বয়ান লিখেছে আমার বন্ধু হীরা।
নিচের অংশটুকুতে ঐ একই সময়ের কথা লিখেছি আমি আমার বয়ানে।
০২-০৪-২০২১
"গল্প কিন্তু গল্প না" (ওয়ান পয়েন্ট হাফ)
রাত প্রায় ১২টা ১৫ মিনিট, এটা ঢাকা শহরের রাত না। যেখানে বসে আছি সেখানে রাত ৮ টা মানে সব শুনশান।
আশ্রমের প্রায় নির্মিত দুটি ঘরের একটিতে ঘুমাচ্ছে বসির, জজ মিয়া আর মহিউদ্দিন। অন্যটিতে হীরা, জিলানী ভাই। ইস্রাফীল এখনো বাইরে অন্ধকারে ঘুরে বেড়াচ্ছে বিড়ালের পায়ের নিঃশব্দতায়। কিছুক্ষণ আগে মশাল গুলিতে তেল ঢেলেছে। পাশের মাচার উপরে তাবুতে শুয়ে আমি লক্ষ্য করছি সবটাই।
বাতাস না থাকলেও অতিরিক্ত গরম না। বরং চারদিকে অসময়ের কুয়াশা ঘিরে আছে। তাবুতে ঢুকার সময় আমার সাথে সাথে অনাহুত কিছু মশাও ঢুকে গেছে। অনেক কষ্টে সেগুলি মেরেছি আমি।
মহিউদ্দিনের নাক ডাকায় বিরাম নেই। নাক ডাকার শব্দে ঘুমতে না পেরে জিলানী ভাই আর হিরা শুয়ে শুয়ে আলোচনা করছে খাল পারে যাওয়ার। আমাকে জিজ্ঞাসা করতেই আমি না করে দিয়েছে, যাবো না। যদিও আশ্রম থেকে খালের দূরুত্ব খুব বেশি না তবুও ধান ক্ষেতের ভিতর দিয়ে খাল পর্যন্ত যেতে ধান গাছের এচড়ে শরীর চুলকাবে, আর বোনাস হিসবে যেকোনো সময় কাদায় পরে যেতে পারি।
আলাপে আলাপে খাল পার থেকে সরে ওদের গন্তব্য ঘুরে গেলো শ্মশানের দিকে। আশ্রম থেকে শ্মশানের দূরুত্বও খুব বেশি না, রাতের অন্ধকার গেলে সর্বচ্চো ৫ মিনিটের হাঁটা পথ, দিনের আলোয় ৩ মিনিট।
আমারও ইচ্ছে হলো সাথে যাবার, কিন্তু তাবু থেকে বেরিয়ে আবার ঢুকার সময় আমার সাথে সাথে মশারাও ঢুকে যাবে, সেগুলিকে আবার মারতে হবে। এই ভাবনায় আমি আর গেলাম না ওদের সাথে। বুঝতে পারলাম নীরা, জিলানী ভাই আর ইস্রাফীল রওনা হয়ে গেছে শ্মশানের পথে।
ধান ক্ষেতের উপর দিয়ে সাদা কুয়াশার চাদর এগিয়ে আসছে আমার দিকে, অন্য পাশে ৪টি মশাল টিমটিম করে লালচে আলো দিচ্ছে। অন্য পাশে মহিউদ্দিনের নাক ডাকার শব্দ। আমি একা একা শুয়ে আছি এটা মাচার উপরে বদ্ধ তাবুতে। শামুকে গতীতে সময় এগিয়ে চলে। একসময় আমার সামান্য চোখ লেগে আসে।
বেশ কিছুক্ষণ পরে ওদের ফিরে আশার সাড়া পেয়ে তন্দ্রাটা কেটে যায়।
শ্মশানে কাদের দর্শন মিললো রাতের অন্ধকারে!!
সেই বয়ান নাকি আসবে ঈদের পরে, সেই শ্মশানে বসেই পোস্ট করবে হীরা।
অপেক্ষায় থাকি আমরা।
নোট :
আশ্রম : আমাদের মনের কোনের ছোট ছোট স্বপ্নগুলিকে আশ্রয় দিতেই এই আশ্রম, স্বপ্নের আশ্রম।
আশ্রমের ছবি তুলেছে হীরা
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই মে, ২০২১ বিকাল ৪:০৬