দীর্ঘ্য ৬ বছর পরে পরিবার নিয়ে বেরাতে যাওয়ার সুযোগ হলো আবার। এর মধ্যে ওদের নিয়ে বেরাতে গেলেও তা ছিলো ডে ট্রিপ, যেখানেই গেছি রাতের মধ্যে বাড়িতে ফিরতেই হয়েছে। স্ত্রী-কন্যকে নিয়ে শেষ ভ্রমণ ছিলো এই কক্সবাজারেই ২০১৪ সালের মে মাসের ১৭ তারিখে। এরপরে ছোট মেয়ের জন্ম, বাবার অসুস্থতা ও মৃত্যু। তারপরেই মায়ের দীর্ঘ্য অসুস্থতা ইত্যাদি নানান কারণে বাড়ির বাইরে বেশীদূরে যেতে পারি নি, গেলেও ফিরে এসেছি রাতের মধ্যেই।
ঠিক করি যাবো আবার কক্স সাহেবের বাজারে। আরো আগেই যাওয়ার প্লান ছিলো। কিন্তু করনার কারণে সম্ভব হয়নি। এখনো করনার করাল গ্রাসে সারা বিশ্বের সাথে বাংলাদেশও বিপর্যস্ত। তবুও কোনো কিছুই থেমে নেই। সর্বচ্চো সতর্কতার সাথেই চেষ্টা করেছি বেরাতে। আমেরিকার প্রেসিডেন্টের হয়ে গেছে করনা, আমরা কোন ছাই। আজহোক কালহোক আক্রান্ত হবোই ধরে নিয়ে সর্বচ্চো সতর্ক থাকতে হবে আমাদের, কারণ ওরা আক্রান্ত হলে ওদের মেলা ব্যবস্থা ও সামর্থ আছে সুস্থ হয়ে উঠার, যার কোনোটাই আমাদের নাই।
যাইহোক কথা না বাড়িয়ে ভ্রমণের বিষয়ে আসি। স্ত্রী কন্যাদের আবদার এবার যাবে এয়ারে। এতো করে বললাম, “[i]যে টাকায় এয়ার টিকেট কিনবো তা দিয়ে অর্ধেক ঘুরা হয়ে যাবে[/i]”। লাভ হলো না। শেষ পর্যন্ত অনলাইনে ফ্লাইট এক্সপাট থেকে ২টি অ্যাডাল্ট + ২টি চাইল্ড মোট ৪টি টিকেট কটলাম ১৪,৫৩৯/= টাকায় ২৮শে সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ বিমানের দুপুর ২টার ফ্লাইটের। এয়ার টিকেট এতো সস্তা হয়ে গেছে দেখে অবাক হলাম। যদিও আমার জন্য মোটেও সস্তা নয়, বরং খরচ একটু বেশীই হয়ে গেলো।
২৮ তারিখ হাতে কিছুটা সময় নিয়েই বের হই বাড়ি থেকে। উত্তর বাড্ডা আমার বাসা থেকে এয়ারপোর্টে যেতে সময় লাগবে সর্বচ্চো ২০ মিনিট উবারে। দেখা গেলো তার আগেই পৌছে গেছি।
টিকেট দেখিয়ে ডমেষ্টিক টার্মিনালে ঢুকে ব্যাগ চেক করিয়ে বোডিং ফরম গুলি ফিলাপ করে ব্যাগ জমা দিয়ে দ্বিতীয় ধাপের চেকিং শেষে অপেক্ষা করতে থাকি এরোপ্লেন উঠার।
এক সময় ডাক পরে আমাদের। পৌছে যাই বিমানের এরোপ্লেনের সামনে। শুরু হয় সকলের সেলফি আর ছবি উঠানোর পালা। আমরাও বাদ যাইনা এই সুযোগ থেকে।
নির্দিষ্ট আসনে সকলে বসে পরার পরে ঘোষণা হয় আমাদের যাত্রা শুরুর। ৪০ মিনিটের ফ্লাই শেষে এরোপ্লেন পৌছবে কক্সবাজারে। শুরু হয় এরোপ্লেন যাত্রা।
টেকঅফের কিছু পরে আমি জানালার পাশে বসে কয়েকটি ছবি তুলি। শুরু হয় পাখির চোখে দেখা, আকাশ থেকে দেখা মেঘের খেলার এক অনবদ্য কাব্য রাচনা হতে থাকে যেনো।
জানালার পাশে বসে আমার ছোট মেয়ে নুয়াইরাও দেখে অবাক হয়ে মেঘের খেলা।
এরমধ্যে নির্দিষ্ট ৪০ মিনিট শেষ হয়ে এলে কক্সবাজার এয়ারপোর্টে ল্যান্ড করে এরোপ্লেন।
এরোপ্লেন থেকে নেমে একটি কক্ষে গিয়ে নাম লিখে বের হয়ে ব্যাগ সংগ্রহ করে বেরিয়ে আসি এয়ারপোর্ট থেকে। ১০০ টাকা দিয়ে একটি ইজিবাইক ভাড়া করে চলে আসি কক্সবাজারের লাবনী পয়েন্টের কল্লোল হোটেলের রেস্টুরেন্ট কাশুন্দি-তে।
কক্সবাজারে আসলে আমি চেষ্টা করি সৈকতের কাছাকাছি কোনো হোটেলে উঠতে, বারান্দা থেকে সাগর দেখা যায় এমন রুম পছন্দ। এখন কক্সবাজারের জন্য অফ সিজন বলে বেশ সস্তাতেই রুম পাওয়া যায়। প্রথম পছন্দ ছিলো হোটেল কল্লোল। আগেও বেশ কয়েকবার এটায় থেকেছি। এবার এসি একটি রুম যেখানে একটি কাপল বেড ও একটি সিঙ্গেল বেড আছে এবং রুম থেকে চমৎকার সাগর দেখা যায় সেটির সর্বশেষ ভাড়া চাইলো ৩,৩০০/= টাকা। আর একটু কমে চমৎকার একটি রুম পেয়ে গেলাম পাশেই হোটেল অভিসারে। এটাতেও বিছানায় বসে সাগার দেখা যায়, এসি আছে। কিন্তু মাত্র একটি কাপল বেড। বেশ বড় রুম, একটা এক্সটা বেড দেয়ার পরেও পর্যাপ্ত জায়গা রয়ে গেলো হাঁটাচলার। সাথে ছোট্টো একটা বারান্দা, বিশাল ওয়াসরুম। ভাড়া রফা হলো ২,০০০/= টাকা।
চলবে.....
ভ্রমণ সংক্রান্ত আমার সকল লেখার লিংক -
মরুভূমির জলদস্যুর ভ্রমণ বিলাস