সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের লেখা কাকাবাবু সিরিজের ৫ম বই “খালি জাহাজের রহস্য”।
সিরিজের ১ম বই “ভয়ংকর সুন্দর” ছিল কাশ্মীর এলাকায় একটি মূর্তির মাথা উদ্ধারের কাহিনী নিয়ে লেখা।
২য় বই “সবুজ দ্বীপের রাজা” ছিল আন্দামানে বিদেশী বিজ্ঞানীদের নিখোঁজ হওয়া নিয়ে গল্প।
৩য় বই “পাহাড় চূড়ায় আতঙ্ক” ছিল নেপালের হিমালয়ের পাদদেশে ইয়েতি রহস্য নিয়ে।
৪র্থ বই “ভূপাল রহস্য” ছিল ভূপালের কিছু গুহাচিত্র আর ইতিহাসবিদদের খুন হয়ে যাওয়া নিয়ে লেখা।
আজ লিখতে বসেছি সিরিজের ৫ম বই “খালি জাহাজের রহস্য” এর কাহিনী সংক্ষেপ।
কাহিনী সংক্ষেপঃ
কাকাবাবু সন্তুকে নিয়ে কেনিং হয়ে সুন্দরবন যাবেন বলে বেরিয়েছেন। ট্যাক্সি না পেয়ে এলাকার ছেলে বিমানের গাড়িতে করেই রওনা হন, বিমান সহ তিন জনে মিলে। সুন্দরবনে একটি বিদেশী লঞ্চ এসে ভিড়েছে, যার ভেতরে কোন যাত্রী নেই। লঞ্চটির ডাইনিং টেবিলে খাবর সাজানো ছিল, খাওয়া শুর হওয়ার পরে যেন যাত্রীরা হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে। লঞ্চে কোন কাগজ পত্রও নেই। সেটা দেখতেই চলেছেন কাকাবাবু।
কিছু দূর আসার পরে সন্তুরা দেখল রাস্তার উপরে এটা এক্সিডেন্ট হয়েছে। ক্যানিং থেকে ফেরার পথে একটা জীপ আর গরুর গাড়িতে সংঘর্ষ হয়। একজন লোক মাথা ফেটে অজ্ঞান হয়ে পরে আছে দেখে কাকাবাবু তাকে আর ড্রাইভারকে নিয়ে চললেন হাসপাতালের দিকে। ওদের হাসপাতালে রেখে কাকাবাবুরা ক্যানিং পৌঁছে থানায় রিপোর্ট করে লঞ্চটা দেখতে চললো।
কাকাবাবু থানাতে গিয়ে জানতে পারলেন কলকাতা থেকে বড়কর্তারা যাচ্ছেন লঞ্চটা দেখতে। কাকাবাবুর পরিচিত পুলিশের একজন বড়কর্তাও সেখানে আছে। কিন্তু কাকাবাবুরা ঘাটে পৌছাতে পৌছাতে পুলিশের লঞ্চ ছেড়ে চলে যায় তাই কাকাবাবুরা বাধ্য হয়ে অন্য আরেকটি লঞ্চে করে যাত্রা শুরু করে। লঞ্চে উঠার পরে “ছোট সাধু” নামে একজন এসে কাকাবাবুর সাথে আলাপ করে। মাঝ নদীতে যাওয়ার পরে দেখা যায় পুলিশের লঞ্চটা দাঁড়িয়ে আছে মাছ কেনার জন্য। সুযোগ পেয়ে কাকাবাবুরা পুলিশের লঞ্চে উঠে যায়। কাকাবাবু তাদের সাথে ছোট সাধুকেও জোড় করে নিয়ে যান।
ছোট সাধুকে দেখেই পুলিশের বড়কর্তা চিনে ফেলে, ওর নাম তিনি শুনেছেন, অভিযোগ আছে সে স্মাগ্লিং এর সাথে জড়িত। তাকে ভয় দেখিয়ে শাট খুলতে বাধ্য করা হলে দেখা যায় সাধুর জামার নিচে ২৫-৩০ হাজার টাকা ব্যান্ডেজের মত করে বাধা আছে। এরমধ্যে একজন এসে জানালো নদীতে একটি লাশ ভেসে যাচ্ছে, সাধু লাশটিকে তার চাচাত ভাই হিসেবে চিনতে পারে। এর নামেও ডাকাতির অভিযোগে থানায় ডায়রি আছে।
পুলিশের লঞ্চ গোসাবা থানা পর্যন্ত গেলো। সেখান থেকে স্পিটবোটে করে বিদেশী লঞ্চটা পর্যন্ত যাওয়া হবে, দুজন গোসাবা থানায় থেকে যাবে লঞ্চ থেকে চুরি যাওয়া মালের কোন হদিস বের করা যায় কিনা সে চেষ্টা করতে। স্পিটবোটে অনেকটা পথ যাওয়ার পরে সুন্দরবনের ভিতরের খাল ধরে চলতে শুরু করে। পথে বিপদে পরা একটা নৌকাকে সাহায্য করতে গিয়ে ওরা ডাকাতের পাল্লায় পরে। পরে যখন বিদেশী লঞ্চটির কাছে পৌছয় তখন দেখে লঞ্চটাকে উদ্ধার করতে আসা আরেকটা লঞ্চ চরায় আটকে আছে। কাকাবাবু প্রথমে স্পিটবোটে করে লঞ্চটার চারপাশটা বাইরে থেকে দেখে নিয়ে ভেতরে ঢুকেন।
ভেতরে ঢুকে দেখা গেলো কয়েকবার লুট করা হয়েছে লঞ্চটিতে। কোন কিছুই নেই সেখানে, তবে রেডিওটি আছে কারণ সেটি দেয়ালের ভেতরে থাকাতে কেউ দেখতে পায়নি। রেডিও চালুকরে সুইডিশ ভাষা শুনে কাকাবাবু বললেন এই লঞ্চের মালিকের নাম “ইংগোমার স্মেল্ট”। ইংগোমার স্মেল্ট একজন বিজ্ঞানী, বছর ছয়েক আগে লঞ্চ নিয়ে সাগরে বেরিয়ে যান, মাঝে মাঝে খাবার ও পানি কেনার জন্য কাছের কোন বন্দরে যেতেন।
এরমধ্যে সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত নেমেছে, তখন কাকাবাবু বললেন তিনি আজ রাত এই লঞ্চেই কাটাতে চান। কাকাবাবুর সাথে সাথে বাকিরাও রয়ে গেলেন সেখানে। কাকাবাবু খুঁজে খুঁজে একটা গুপ্ত কুঠরি পেলেন লঞ্চটির মধ্যে, সিঁড়ির নিচে। কুঠরিটিতে প্রচুর বই আর লেখার কাগজের সাথে হাত, পা আর মুখ বাধা একজন মৃতপ্রায় অজ্ঞান লোককে পাওয়া গেলো।
কাকাবাবু গুপ্ত কুঠরিতে ইংগোমার স্মেল্টের ডায়রি পান, সেখান থেকে জানতে পারেন তার লঞ্চের ইঞ্জিন হঠাত করে নষ্ট হয়ে যায়। তিনি ভাসতে ভাসতে সুন্দরবনের কাছে চলে আসেন। সেখানে হঠাৎ করেই ডাকাত আক্রমণ করে, তাই তিনি গুপ্ত কুঠরিতে লুকিয়ে পরেন। ১২ ঘণ্টা পরে তিনি কুঠুরি থেকে বেরিয়ে আসেন। তারপরে আর কিছু সেখানে লেখা নেই।
গুপ্ত কুঠরিতে বন্দি লোকটি সামান্য যেকটা কথা বলল তাতে জানা গেল তাকে “হারু দফাদার” এখানে আটকে রেখে গেছে। এই হারু দফাদারের লাশই আজ কাকাবাবুরা নদী থেকে উদ্ধার করেছে। কাকাবাবুরা এবার ফেরার পথ ধরেন। ফেরার সময় একটা জেলেদের দ্বীপে গিয়ে বিদেশী লঞ্চটির কিছু আসবাব দেখতে পেলো কাকাবাবুরা। সেখানেও জানা গেল হারু দফাদার সেগুলি সেখানে রেখে গেছে। সেই দ্বীপে কাকাবাবুরা প্যাটে গুলি লাগা এক ডাকাতকে ধরে ফেলে। হারু দফাদার তাকে গুলি করেছিলো, আর সে হারু দফাদারকে বুকে ছুরি গেঁথে দিয়ে দফা রফা করেছে। আরো জানা গেলো বিদেশী সাহেবকে তারা মারেনি, সাহেব লাফিয়ে নদীর জলে পরে ভেগে গেছেন।
“ইংগোমার স্মেল্টের” বেচে থাকার চান্স আছে দেখে কাকাবাবুরা নদীর চার ধারে অনেকটা যায়গা ধরে খুঁজে দেখতে লাগলো কিন্তু তাকে না পেয়ে ফিরে যাওয়ার পথ ধরলো। সেই সময় তাদের স্পিটবোট উলটে গেলো, সবাই সাঁতরে নদীর ধারে উঠলো। তখনই কাকাবাবু বনের মাঝে একটা বাঁশির আওয়াজ শুনতে পান। তারপর .....
এপিগ্রাম :
১। দূর দেশে একই যায়গায় বারবার যাওয়ার চেয়ে বাড়ীর কাছের নতুন যায়গায় যেতে বেশী ভাল লাগে।
২। পৃথিবীতে দুচারটে মানুষ এখনো অদ্ভুত হয় বলেই এখনো মানুষের জীবনে বৈচিত্র আছে। নইলে সব মানুষই একরকম হয়ে যেত।
৩। অভাবের সময় যা পাওয়া যায় তাই ভালো লাগে।
সমাপ্ত
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:৩০