somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মাছি ফাঁদ উদ্ভিদ

০৭ ই মার্চ, ২০১১ রাত ১১:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

“প্রেমের ফাঁদপাতা ভুবনে” উপ্স!! ভুল হইয়া গিয়াছে, ইহা হইব “মাছির ফাঁদপাতা বাগানে”। বুঝিতে পারেন নাই!!! আজ আমরা এমন একখানি উদ্ভিদের সম্পর্কে আলোচনা করিবো যাহারা, আমাদের চারিপাশে ছড়াইয়া ছিটাইয়া স্থির পড়িয়া থাকা উদ্ভিদদিগের চাইতে সামান্য ভিন্ন। আমাদের চারিপাশের উদ্ভিদগুলি তাহাদের নিজের পত্রে, মূল বা শিকড় দ্বারা জল আর খনিজলবন টানিয়া আনিয়া, সেইগুলিকে সূর্যের তাপে কার্বনডাইঅক্সাইডের সহিত ভাজিয়া, নিজেদের খাদ্য তৈয়ার করিয়া থাকে। উদ্ভিদবিজ্ঞানীগন উদ্ভিদদিগের এই রন্ধন প্রক্রিয়াকে “স্যালকসংশ্লষণ” (বানান ঠিক আছে কিনা বলিতে পারিলাম না। ইহা কিন্তু গীন্নির ভ্রাতা “শেলক” নয়ে।) বলিয়া থাকেন। কিন্ত আজ আমরা যেই উদ্ভিদ লইয়া আলোচনা করিতে চাহিতেছে, তাহারা এই রকম আলো-বাতাস খাইয়া তৃপ্ত হইতে পারে না। উহাদের মাংসের প্রতি বিশেষ আশক্তি রহিয়াছে বলিয়া মালুম হয়। কিন্তু তাহারা আমাদিগের মত বাজার হইতে মাংস কিনিয়া আনিতে পারেনা। তাহারা মাংস কিনিবার অর্থ কোথায় পাইবে? তাহা ছাড়া অর্থ পাইলেও তাহা অনর্থকই হইবে। কারণ অন্য গাছেদের ন্যায় ইহাদেরও হাঁটিবার জন্য পা নাই। বিশেষ এই উদ্ভিদখানির নাম “মাছি ফাঁদ” উদ্ভিদ। ভাবিতেছেন ইহা আবার কেমন নাম হইলো ? তবে ইংরেজী “Flytrap” “ফ্রাইট্র্যাপ” বলিলে অনেকোই চিনিতে পারিবেন! যাহারা এখনো চিনিতে পারিতেছেন না তাহরা নিচের উদ্ভিদটির দিকে দৃষ্টিপাত করিতে পারেন।



(ফুলসহ হাতে আকা একখানি ফ্লাইট্র্যাপ বা মাছি ফাঁদ উদ্ভিদ)



“মাছি ফাঁদ” গাছের বিশেষ এই প্রজাতিটিকে উদ্ভিদবিজ্ঞানীগন “ভেনাস ফ্লাইট্র্যাপ” (Venus_Flytrap) নামে আলাদা করিয়া রাখিয়াছেন। “মাছি ফাঁদ” বা “ভেনাস ফ্লাইট্র্যাপ” একধরনের মাংসাশী উদ্ভিদ তাহা আগেই বয়ান করিয়াছি। আমাদের বাংলাদেশে ইহাদের পাওয়া যায় না। মূলত ইহারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর ক্যারোলিনার জলাভূমিতে বেশি হইয়া থাকে।



পূর্ণবয়স্ক একখানি “মাছি ফাঁদ” গাছের দৈর্ঘ্য প্রায় ১ ফুট মত হইতে পারে। বসন্তকালে ইহাদের মাঝেও বসন্তের আগমণ ঘটে। সেই সময় উদ্ভিদগুলির মাঝ বরাবর লম্বা দন্ডাকৃতির কান্ডে দৃষ্টিনন্দন ধবল সাদা ফুল ফুটিয়া থাকে।


(“ভেনাস ফ্লাইট্র্যাপ”এর ফুল)

ইহার পরে “মাছি ফাঁদ” গাছে চকচকে কৃষ্ণকালো অনেকগুলি ফল থোকায় থোকায় ধরিয়া থাকে।


(“ভেনাস ফ্লাইট্র্যাপ”এর ফল)

সাধারণত বিজ হইতেই ইহাদের চারা গজায়, কিন্তু এই চারাগুলি বড় হইতে কয়েক বৎসর সময় লেগিয়া যায়। বিজ হইতে জন্ম লওয়া চারা গাছটির প্রথম ৪/৫ বৎসর উহার শৈশব কাল বলা চলে। উহারা কম-বেশি ৫ বৎসর পরে স্বাবালকত্ত পায়, আর বাঁচিয়া থাকে মোটামুটি ২০ হইতে ৩০ বৎসর পর্যন্ত।


(এক গোছা “ভেনাস ফ্লাইট্র্যাপ”)




আগেই বলিয়াছি ইহারা মাংস খাইতে বিশেষ পছন্দ করে। তাই বলিয়া ভাবিবেন না ইহাদের দাঁত-মুখ রহিয়াছে। ইহাদের আদোও কোনো মুখ বা দাঁত নাই।
প্রশ্ন উঠিতে পারে - “তাহা হলেই ইহারা মাংস খায় কেমন করিয়া?”
উত্তর হইতেছে - “পাতা দিয়া খায়।“ একটু অসম্ভব মনে হইলেও আসল ঘটনা এইটাই। বিশ্বাস না হইলেও করিবার কিছুই নই।

মূলত “মাছি ফাঁদ” গাছগুলির গোড়ার দিক হইতে তার সবুজ পাতাগুলি জন্মায়। এই পাতাগুলি দেখিতে অনেকটাই ঝিনুকের মত হইয়া থাকে, ঝিনুকের মতই পাতাগুলিও দুই খন্ডে বিভক্ত। পাতাগুলি ঝিনুকের মতই নিজেদের মেলিয়া ধরিতে পারে আবার গুটাইয়া ফেলিতে পারে। এই পাতাগুলি ১ ইঞ্চির সমান লম্বা হইতে পারে। দুই খন্ডের এই পাতাগুলির ভিতরের দিক লাল রং এর হইয়া থাকে, অবশ্য লাল রং হওয়ার বিশেষ কারণও রহিয়াছে।


(ফেঁদের ভিতরের লাল রং পতঙ্গদিগকে আকৃষ্ট করিবার জন্য।)


পাতাগুলির বাহিরের প্রান্তে সিলিয়া নামের কিছু সূচালো শক্ত শুরের ন্যায় অংশ রহিয়াছে। আর পাতার প্রতিটি খন্ডের মধ্যিখানে তিনখানি করিয়া ট্রিগার রহিয়াছে। পাতার প্রান্ত বরাবর মিষ্টি জাতীয় একপ্রকার তরলের হালকা প্রলেপ রহিয়াছে। এই মিষ্টির লোভে পড়িয়া কিট-পতঙ্গগুলি উড়িয়া আসিয়া বসে, তাহা ছাড়া পাতার মাঝের লাল রংও উহাদের আকৃষ্ট করে। আগেই বলিয়াছি পাতার মধ্যে রহিয়াছে তিনখানি করিয়া ট্রিগার।


(ফঁদের ভিতরের লাল রং। একটু লক্ষ্য করিলে প্রতিখন্ডের ট্রিগার গুলি দেখিতে পাইবেন।)
মিষ্টি রসের সন্ধানে পোকাগুলি পাতার মধ্যে বিচরন করিবার কালে সেই ট্রিগারে নাড়া দেয়। একবার ট্রিগারে নাড়া লাগিলেও পাতাগুলি শিকারের উপরে ঝাপাইয়া পরে না, কারণ বাসাত বা অন্যকোনো কিছুর দরুনও ট্রিগার নাড়া খাইতে পারে। কিন্তু যেই মাত্র দ্বিতীয়বার ট্রিগার নাড়া খায় সাথে সাথে প্রচন্ড দ্রুততায় চোখের নিমিশে পাতার দুইখানি খন্ড নিজেদের গুটাইয়া লয়। আর বেচারা বোকা নিরিহ পতঙ্গ ফাঁদে ধরা পড়িয়া যায়।


(ধরা পরা মাছি)


(মাকড়সা ধরা পরিয়াছে)



ফাঁদের দরজা বন্ধ হইয়া যাইবার পরেই একধরনের তরল রস বাহির হইয়া পতঙ্গটিকে ডুবাইয়া ফেলে। এই তরল রসই হইতেছে পরিপাক সাহায্যকারি উৎসেচক। এই তরল রস পতঙ্গটিকে এমন একখানি অবস্থায় লইয়া আসে যাহাতে “মাছি ফাঁদ” উদ্ভিদ উহা হইতে প্রয়োজনীয় পুষ্টি সংগ্রহ করিতে পারে। কিন্তু যত তাড়াতাড়ি বলিলাম ততো তারাতারি ইহা হয় না। পতঙ্গটিকে পুষ্টি সংগ্রহ করিবার তম অবস্থায় আনিতে ৮ হইতে ১০ দিন সময় লাগিয়া যায়। তরলে ডুবিয়া পতঙ্গটি ধীরে ধীরে নরম হইতে হইতে ৮/১০ দিন পরে গলিয়া নাইট্রোজেনসমৃদ্ধ তরল পদার্থে পরিণত হইয়া যায়। আর এই নাইট্রোজেনসমৃদ্ধ তরল “মাছি ফাঁদ” উদ্ভিদ দ্বারা শোষিত হইয়া যায়। কিন্তু কোনো কারণে যদি পতঙ্গটির মৃতদেহের কোনো শক্ত অংশ “মাছি ফাঁদ” উদ্ভিদটি হজম করিতে না পারে, সেইগুলি সব শেষে পাতার ফাঁদটি খুলিয়া বের করিয়া দেয়। খাওয়া শেষ হইলে “মাছি ফাঁদ” উদ্ভিদ তাহার পাতার ফাঁদটিকে আবার আগের মতই মেলিয়া পাতিয়া রাখিয়া দেয় পরপর্তী শিকারের আশাতে। এই ভাবে একখানি ফাঁদ কমবেশি তিনবার শিকার ধরিতে পারে।


ফাঁদে ধরা পরিবার পরে শিকার যদি ফাঁদের ভিতরে বেশি নড়াচড়া করিতে থাকে, তাহাহইলে ফাঁদটি আরো বেশি আটশাট হইয়া যায়, আর পরিপাক কার্যও দ্রুততর হইতে থাকে।



(মাকড়সা ধরা পরিয়াছে)



(মাছি ধরা পরিয়াছে)

আগেই বলিয়াছি “মাছি ফাঁদ” গাছগুলি তাহাদের পাতার ফাঁদগুলি প্রচন্ড দ্রুততার সহিত বন্ধ করিতে পারে। দেখাগিয়াছে মাত্র ০.১ (শূন্য দশমিক এক) সেকেণ্ডে ইহারা এই কাজটি করিতে পারে। ইহার ফলে ফাঁদে বসা কিট-পতঙ্গগুলি অনায়াশে ধরা পরিয়া যায়। কিন্তু কোন কারণে শিকার ধরিতে ব্যর্থ হইলে অথবা শিকার ধরিতে পারার পরে কোনো কারণে তাহা বাহির হইয়া গেলে, ফাঁদটি পুনরায় মেলিয়া ধরিতে “মাছি ফাঁদ” উদ্ভিদের প্রায় ১২ ঘন্টা সময় লাগিয়া যায়।


অনেকেই এই গাছটিকে শখ করিয় লাগাইতে চায়, কিন্তু গাছগুলি চাষ করা খুবই কষ্টকর। মূলত ইহারা নিজেদের পরিবেশ ব্যাতিতো ভালো ভাবে বাঁচিতে পারে না। তাই ইচ্ছা থাকিলেও ইহাদের চাষ করিবার স্বাদ অপূর্ণই থাকিয়া যাইবে আমার।
নিচে আরো কিছু “মাছি ফাঁদ”উদ্ভিদের ছবি দেখিতে পারেন।


১।


(গুটাইয়া রাখা একখানি ফাঁদ)

২।


(“ভেনাস ফ্লাইট্র্যাপ” টপে)

৩।


(“ভেনাস ফ্লাইট্র্যাপের চারাগাছ”)

৪।


“ভেনাস ফ্লাইট্র্যাপের চারাগাছ”)


৫।


(ফাঁদপাতা ভেনাস ফ্লাইট্র্যাপ)

৬।


(ফাঁদপাতা ভেনাস ফ্লাইট্র্যাপ)


৭।


(ফাঁদ গুটাইয়া রাখা ভেনাস ফ্লাইট্র্যাপ)

৮।


(ফাঁদ গুটাইয়া রাখা ভেনাস ফ্লাইট্র্যাপ)

৯।


(ফাঁদ গুলি ফুলের মত মেলিয়া লাখিয়াছে ভেনাস ফ্লাইট্র্যাপ)


সকল প্রকারের ভুলের জন্য ক্ষমা চাহিয়া জানাইতেছি - তথ্যাদি সংগ্রহ করিয়াছি উইকি হইতে, আর কিছু ছবিও। ইহা ছাড়া গুগল মামা অনেক ছবি আনিয়া দিয়াছে।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ্‌ সাহেবের ডায়রি ।। পৃথিবীকে ঠান্ডা করতে ছিটানো হবে ৫০ লাখ টন হীরার গুঁড়ো

লিখেছেন শাহ আজিজ, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৯:০২




জলবায়ূ পরিবর্তনের ফলে বেড়েছে তাপমাত্রা। এতে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। তাই উত্তপ্ত এই পৃথিবীকে শীতল করার জন্য বায়ুমণ্ডলে ছড়ানো হতে পারে ৫০ লাখ টন হীরার ধূলিকণা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

অচেনা মানুষ আপনাদের দীপাবলীর শুভেচ্ছা

লিখেছেন আজব লিংকন, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ রাত ১০:২১



আমারই বুকে না হয় শিবেরই বুকে
নাচো গো... ও নাচো গো...
পবন দা'র গলায় ভবা পাগলার গানটা কারা জানি ফুল ভলিউমে বাজিয়ে গেল। আহ.. সে সুরের টানে বুকের মাঝে সুখের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোরআন পড়বেন, ফিকাহ জানবেন ও মানবেন

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:০০



সূরাঃ ৯৬ আলাক, ১ নং থেকে ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
১। পাঠ কর, তোমার রবের নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন
২।সৃষ্টি করেছেন মানুষকে ‘আলাক’ হতে
৩। পাঠ কর, তোমার রব মহামহিমাম্বিত
৪। যিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্নমর্যাদা!

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৩

রেহমান সোবহান একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। তার বাড়ি থেকে বিদ্যালয়ের দূরত্ব প্রায় ৬ কিলোমিটার। রেহমান সাহেব এমন একটি বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন যা খুব নির্জন এলাকায় অবস্থিত এবং সেখানে যাওয়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। অ্যাকসিডেন্ট আরও বাড়বে

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৯



এরকম সুন্দরী বালিকাকে ট্র্যাফিক দায়িত্বে দিলে চালকদের মাথা ঘুরে আরেক গাড়ির সাথে লাগিয়ে দিয়ে পুরো রাস্তাই বন্দ হয়ে যাবে ।
...বাকিটুকু পড়ুন

×