ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগ কে বলা হয় ইউরোপের সবচেয়ে কঠিন ও প্রতিদ্বন্দিতা পূর্ণ লীগ ,এটি সবচেয়ে টেলিভাইসড লীগও বটে।খুব বেশী ফিজিক্যালিটি এলাও করা আর ছোট দল গুলোর হার না মানা মনোভাবের কারনে ম্যাচ গুলো খুব প্রতিদ্বন্দিতা হয় । একারনে খুব দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এই লীগ।ইউরো কোয়ালিফিকেশন আর প্রীতি ম্যাচের জন্য ইন্টারন্যাশনাল ব্রেক চলছে এখন।আসুন এই ফাকে একটা প্লেব্যাক হয়ে যাক।
ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগে এখন পর্যন্ত খেলা হয়েছে সাতটি করে।শিরোপা প্রার্থী মেইন দল গুলোর অবস্থান কোথায় আর কেমন খেলল তা দেখে নেওয়া যাক।
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড
ফ্যালকাও,ভ্যান পার্সি, ওয়েইন রুনি, ডি মারিয়া--স্বপ্নের এক অ্যাটাকিং ইউনিট,বিশ্বের যে কোন ডিফেন্সকে দুমড়ে মুচড়ে দেয়ার জন্য যথেষ্ট।কিন্তু ফুটবলে সবকিছু নিয়ম মেনে হয় না,ইপিএলে তো অঘটনই যেন নিয়ম।ম্যান ইউ এই রকম অ্যাটাক নিয়েই হেরেছে ২টি,ড্র ২ আর জিতেছে ৩টি তে। ৭ ম্যাচ শেষে পয়েন্ট ১১, টপ চেলসি থেকে ৮ পয়েন্ট কম নিয়ে চতুর্থ।
n
পয়েন্ট টেবিল দেখে বলতে পারেন এ আর এমন কি খারাপ! কেন ম্যান ইউ সাপোর্টাররা ভয় পাবেন আসছি সে প্রসংঙ্গে। ওয়ার্ল্ড ফুটবলে এখন যে কয়জন সেন্ট্রাল স্ট্রাইকার আছেন তাদের মধ্যে কে সেরা এই প্রশ্ন করলে যে কয়টি নাম আসে তার মধ্যে ফ্যালকাও এক থেকে তিনের মধ্যে থাকবেন অবলীলায় ( এখানে বলে রাখি মেসি ,রোনাল্ডো,নেইমার কেও সেন্ট্রাল স্ট্রাইকার নন,বার্সায় কোন কোন ম্যাচে মেসিকে ওই পজিশনে খেলানো হলেও এটা ওর প্রেফারড পজিশন না) । সেই ফ্যালকাও যখন ৯ মিলিয়ন পাউন্ড লোন ফি দিয়ে ম্যান ইউতে আসলেন, প্রতিপক্ষ ক্লাব গুলো নিশ্চিত কিছু সময়ের জন্য হলেও নতুন ছক কষতে বসেছিলেন।সাথে আসলেন ৬০ মিলিয়ন পাউন্ডম্যান রিয়েল মাদ্রিদ উইঙ্গার অ্যাঙ্গেল ডি মারিয়া। আমি ম্যান ইউ সাপোর্টার হলে খুশিতে লাফানো শুরু করতাম।লম্ফ যম্ফ বেশি দিন স্থায়ী হল না্।কারণ,লুই ভ্যান গালের ডিফেন্স। প্রচন্ড রকম শেকি এবং ইনএক্সপেরিয়েন্সড এক ডিফেন্স নিয়ে যে প্রিমিয়ার লীগ খেলা যায় না এটা ভ্যান গাল একটু একটু করে বুঝছেন।তাই ১৫০মিলিয়ন পাউন্ড খরচ করেও নতুন প্রোমোটেড টীমের কাছে ৫ গোল খাচ্ছে।এক সাথে ফার্ডিনেন্ড,ভিদিচ,এভরা চলে যাওয়া এবং নতুন সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার না কেনার
খেসারত দিচ্ছে ম্যান ইউ।উইন্টার ট্রান্সফার উইন্ডোতে ডিফেন্ডার কিনে সামাল দিতে পারে কিনা তার উপরেই নির্ভর করছে ম্যান ইউ শীর্ষ চারের স্বপ্ন।
লিভারপুল
গত সিজনে সবচেয়ে নজরকাড়া ফুটবল খেলা লিভারপুল অল্পের জন্য শিরোপা থেকে বঞ্চিত হয়, ২৪ বছর পর প্রিমিয়ার লীগ শিরোপা জয়ের হাতছানি পাওয়া লিভারপুলের স্বপ্ন শেষ হয়ে যায় আসলে নিজেদের মাঠে চেলসির কাছে হেরে।তবে নতুন করে স্বপ্ন দেখার শুরুতেই আসে বাধা।গত দুই সিজনের লিভারপুল ট্যালিসম্যান লুইস সুয়ারেজ নাম লিখান বার্সায় আর সিজনের শুরুতেই ইনজুরিতে পরেন আরেক স্টার স্ট্রাইকার ড্যানিয়েল স্টারিজ।ব্যাস,যা হওয়ার তাই হল, ৭ ম্যাচে ৩টি তে হার ১টি ড্র জয় ৩টি,পয়েন্ট ১০।
ডু ইট লাইক স্পারস, ইংলিশ ফুটবলে এটা এখন একটা প্রবাদ এর মতো হয়ে গেছে,বেল কে রিয়েল মাদ্রিদ এর কাছে ১০০ মিলিয়ন দিয়ে বিক্রি করার পর টটেনহ্যাম ৭-৮টা প্লেয়ার কিনে যে হযবরল অবস্থা তৈরি করেছিল সেই অবস্থা বোঝাতেই এই ফ্রেজ টা ইউজ করা হয়।বলা হচ্ছে সুয়ারেজ কে বিক্রি করে লিভারপুল যে ৯-১০টা প্লেয়ার কিনলো,তাতে আদৌতে সুয়ারেজের ঘাটতি কি পোষানো যাবে!!
আমার মতে লিভারপুল সুয়ারেজ ইস্যু ছাড়া অন্য যে জায়গায় স্ট্রাগল করবে সেটা হল চ্যাম্পিয়ন্স লীগ এবং প্রিমিয়ার লীগ দুইটা এক সাথে খেলা।সাধারনত যেসব টীম অনেক দিন পর চ্যাম্পিয়ন্স লীগ খেলতে আসে তারা প্রথম ১-২ সিজন স্ট্রাগল করে।ম্যানসিটির ক্ষেত্রে যেমনটা হয়েছিল।
ব্রান্ডন রজার্সকে আমি বেশ পছন্দ করি এই কারনে যে খুব আক্রমনাত্মক ফুটবল খেলে।সোয়াসির সাবেক এই কোচ লিভারপুলকে কি পারবেন ২৪ বছরের আকাক্ষা ঘুচাতে,দেখা যাক।
আর্সেনাল
১৮ বছর ধরে এই ক্লাবের ম্যানেজার ফরাসি আর্সেন ভেঙ্গার। তার দলের কয়েকজনের জন্মের আগে থেকেই আর্সেন ,ক্লাবের ম্যানেজার!! এই সুদীর্ঘ সময়ে তিনি জিতেছেন বেশ কিছু শিরোপা,বাজে রেফারিং এর জন্য জিততে জিততেও জেতা হয়নি চ্যাম্পিয়ন্স লীগ । তবে তার সবচেয়ে বড় অর্জন 'ইনভিন্সিবল' টীম,০২-০৩ সিজনে অপরাজিত থেকে লীগ জেতা আর টানা ৪৯ ম্যাচ না হারা অঁরি,বার্গকেম্প,পিরেস,ভিয়েরার সেই 'ইনভিন্সিবল' আর্সেনাল।
তাদের উত্তরসুরি মেসুত ওজিল,অ্যালেক্সিস সানচেজ,ওয়েলবেক,উইলশায়ার রা কি পারবে ১০ বছরের আক্ষেপ ঘুচাতে! আর্সেনালের ডাই হার্ড ফ্যান ও সন্দেহ পোষণ করে দলটি এবছর প্রিমিয়ার লীগ জেতার জন্য যথেষ্ট নয়। কিন্তু ওজিলকে যদি ওর প্রেফারড সেন্ট্রা অ্যাটাকিং পজিশনে খেলিয়ে সানচেজ,ওয়েলব্যাক,ইনজুরি থেকে প্রায় এক বছর পর ফিরে আসা ওয়ালকট দের কাছ থেকে সর্বোচ্চ টুকু আদায় করা যায় , তবেই ভলো কিছু আশা করা যায়।
আমার মনে হয় আর্সেন ভেঙ্গার তার সেরাটা দিয়ে ফেলেছেন,নতুন আর কিছু পাওয়ার নেই তার কাছে। আধুনিক ফুটবলের অনেক অস্ত্রই তিনি রপ্ত করতে পারেন নি কিংবা চান নি। মরিনিও এর সাথে ১১ বারের মধ্যে ১ বারও জিততে না পারাটা কি প্রমাণ করে না যে আর্সেন একজন ব্যাক ডেটেড ম্যানেজার।এই্ সত্য যত তাড়াতাড়ি আর্সেন বুঝবেন ততই মঙ্গল।
'In Wenger we don't want to believe'
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই অক্টোবর, ২০১৪ ভোর ৬:৫২