২০১০ সালের মার্চের শেষে বান্দরবনের বগালেক গিয়েছিলাম।আমরা ৫ জন। চিম্বুক এর কাছাকাছি ওয়াই জাংশন এর কাছে একটা সেতুতে ওঠার জায়গার মাটি সরে গেছে আগের দিন বৃস্টিতে। রুমা যাওয়ার রাস্তা বন্ধ। সেতু ঠিক কখন হবে তা বলতে পারছে না কেও। মানুষ জনের সাথে কথা বলে হাটা শুরু করলাম। শুরু হলো এক ভয়ংকর সুন্দর যাত্রা।
নৌকা পাহাড়ের নীচে নদীর পাড়ে থামিয়ে ফটোসেশন
রূমা পৌছে চান্দের গাড়ি ঠিক করা হলো। কিন্তু গাড়ি বগালেক পর্যন্ত যাবে না,তার ৪-৫ কিলো আগে যে গ্রামটা আছে (পরে ঐ গ্রামে রাত কাটিয়েছিলাম) ঐ পর্যন্ত যাবে। গ্রামের আগে ভীষন খাড়া একটা ঢাল আছে। আগের দিনের বৃষ্টিতে ঢালের জায়গায় জায়গায় গর্ত হয়ে যাওয়ার গাড়ি আটকে যাবে।
এদিকে আর্মি চেক পোস্ট থেকে পারমিশন দিচ্ছিল না। ঘন্টা দেড়ক পর পাওয়া গেল যাওয়ার অনুমতি। রূমা বাজার শুকনো খাবার,পানি আর টর্ট কিনে রওনা হতে হতে আরও আধা ঘন্টা।
রূমা থেকে প্রায় ৩ কিলো দূরে যে কংক্রীটের সেতু টা ওটার গোড়ার মাটি সরে গেছে। গাড়ি ছেড়ে হেটে গ্রাম টাতে পৌছুব ঠিক করলাম। রাতে কেউ রূমা থেকে পায়ে হেটে বগালেক গিয়েছে এমন পাগল খুজে পাওয়া যাবে না মনে হয়।
মুনলাইপাড়া পার হয়ে ৩-৪ কিলো যাওয়ার পর আমরা ভূলটা বুঝতে পারলাম। সেই ওয়াই জাংশন থেকে ২২-২৫কিলো হেটে এখন এই অন্ধকার রাতে পাহাড়ে আরো ১০কিলো!! কিন্তু ততক্ষনে দেরি হয়ে গেছে।
পাহাড়ের উপর রাতের আকাশ এক অপার্থিব সুন্দর,হাজার তারার ফুল ফুটে আছে যেন।আমাদের গাইড আমাদের এক লাইন ধরে হাটতে আর একটা চর্ট জ্বালাতে বলল। আর একটু পর পর আমাদের গুনতে লাগলো। ঘটনা বুঝতে পেরে আমাদের অবস্থা খারাপ ।সারাদিনের ক্লান্তি ভূলে কায়মনোবাক্যে হাটতে লাগলাম। পায়ের কোন বোধ পাচ্ছিলাম না।
অবশেষে দূরে একটা আলো দেখতে পেলাম,গ্রামটার আলো।মাটিতে পড়ে গেলাম প্রায় সাথে সাথে।
ঐ মুহূর্তে
পেছনের গ্রামটিতে রাত্রিযাপন করেছিলাম।বাসা গুলার নীচে এরা শূকর পালন করে। বিকট গন্ধ।সেই গন্ধেই কি শান্তির ঘুমই দিয়ে ছিলাম।
আবার হন্টন,পথে
ছবির বাম থেকে ২য় জন আমাদের গাইড,নাম ভূলে গেছি;
গ্রাম থেকে বর হওয়ার পথে একটা দোকান থেকে দুধ চা খাই। চা টা কেমন যেন লাগছিল। তখন কাউকে কিছু বলি নাই। আসার পথে সবাইকে জিঞ্গেস করায় সবাই বলল চা টার স্বাদ একটু অন্যরকম ছিল।তাইতো!ওরা দুধ পেল কোথায়,গরু,ছাগল তো নেই!! না জেনে খাইছি!!!
এই পাহাড়টার উপরে বগালেক!
অবশেষে
পুনশ্চ; হেটে যাওয়ার পথে দু পাশের প্রকৃতি কি অপার সৌ্ন্দর্য নিয়ে দাড়িয়ে আছে তা দেখে আমরা পাগল হইনি ঠিক কিন্তু অবাক বিস্ময়ে বিমূঢ় হয়েছিলাম। আর হা এখানে প্রাকৃতিক দৃশ্যের তেমন কোন কিছুই তোলা হয়নি।
হূমায়ূন আহমেদ বলেছিলেন ,কোন সৌন্দর্যকে ক্যামরায় বন্দীকরে ফেললে তার প্রতি আবেদন কমে যায়। আমরা হয়তো সেটা চাইনি।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জুন, ২০১৪ রাত ১১:১৬