বাংলাদেশে রিয়েলিটি শো’র জোয়ার শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত অনেকগুলো ইভেন্ট নিয়েই কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি হয়েছে। নাজেহাল ও বিব্রত হতে হয়েছে দর্শক-প্রতিযোগী, এমনকি বিচারককেও। সম্প্রতি এরকমই এক বিব্রতকর ও বিতর্কিত পরিস্থিতির জন্ম দিয়েছে দুই বাংলার নারীদের নিয়ে সদ্য সমাপ্ত সুন্দরী প্রতিযোগিতা ‘মিস অ্যান্ড মিসেস অদ্বিতীয়া’।
প্রতিযোগিতার মূল আয়োজক কলকাতার ফ্যাশন ম্যাগাজিন ‘অদ্বিতীয়া’র সম্পাদক ও খ্যাতিমান বিউটিশিয়ান কেয়া শেঠ। বাংলাদেশে এর মিডিয়া পার্টনার ছিল বৈশাখী টেলিভিশন ও দৈনিক কালের কন্ঠ পত্রিকা।
বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের নারীদের নিয়ে গত ২৮ জুলাই কলকাতার নেতাজী ইনডোর স্টেডিয়ামে এ প্রতিযোগিতার গ্র্যান্ড ফিনালে অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ থেকে এ সুন্দরী প্রতিযোগিতায় মিস অদ্বিতীয়া হয়েছেন বাংলাদেশের কামাল মুন, আর মিসেস অদ্বিতীয়া হয়েছেন সিলভীয়া আফরিন।
যদিও ‘মিস অ্যান্ড মিসেস অদ্বিতীয়া’র গ্র্যান্ড ফিনালে অংশ নেওয়ার কথা ছিল সেরা তিন মিস অদ্বিতীয়া’র। কিন্তু চূড়ান্ত অনুষ্ঠানে সেরা তিন মিস অদ্বিতীয়ার একজন আনহা আমিনকে অংশ নিতে দেখা যায় নি। অনুষ্ঠানে তাকে না দেখতে পেয়ে অবাক হন বাংলাদেশের দর্শকরা। আনহাকে বাদ দিয়েই অনুষ্ঠিত হয় গ্র্যান্ড ফিনালে।
জানা গেছে, মূল অনুষ্ঠানের আগেই সব আশা-আকাঙ্খা জলাঞ্জলি দিয়ে কলকাতা থেকে বাংলাদেশে চলে আসেন বাংলাদেশের সেরা তিন মিস অদ্বিতীয়া’র একজন নারায়ণগঞ্জ মহিলা কলেজের ছাত্রী আনহা আমিন।
আনহা আমিনের সঙ্গে যোগাযোগ করে বাংলানিউজ জানতে চায়, কেন তিনি কলকাতা পর্যন্ত গিয়েও গ্র্যান্ড ফিনালের আগেই দেশে ফিরে আসেন?
জবাবে বিব্রত আনহা বলেন, “প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে গিয়ে কলকাতায় আমি কিছু অনাকাঙ্খিত ও অনৈতিক ঘটনার মুখোমুখি হই। মুসলিম নারী হিসেবে নিজেকে সেই আপত্তিজনক পরিবেশে মানাতে পারি নি বলেই দেশে ফিরে আসি।”
বিষয়টি খোলাসা করার অনুরোধ জানালে খানিকটা দ্বিধা নিয়েই আনহা বলেন, “প্রতিযোগিতার এক পর্বে বিকিনির মতো স্বল্প বসনে ফটোসেশনের প্রস্তাব দেওয়া হয়। এ ফটো দিয়ে নাকি কোন এক ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদ (কভার) করা হবে। আমি সেই খোলামেলা সেশনে অংশ নিতে আপত্তি জানালে আমার সঙ্গে ভীষণ দুর্ব্যবহার করা হয়।“
আনহার অভিযোগ, “আমাদের নিরাপত্তার জন্য চুক্তি অনুযায়ী যেরকম মানসম্পন্ন হোটেলে থাকার ব্যবস্থা করার কথা ছিল, তাও করা হয়নি। এমন এক হোটেলে আমাদের রাখার ব্যবস্থা করা হয়, যেখানে অসামাজিক কর্মকাণ্ডের স্পস্ট ইঙ্গিত ছিল। এমন কি আসা-যাওয়ার পথে সেই হোটেলে আসা খদ্দেরদের অশ্লীল ইশরায় আমাদের বিব্রত হতে হয়েছে।”
ক্ষোভ প্রকাশ করে আনহা আমিন বলেন, “কলকাতায় এ প্রতিযোগিতার কোরিওগ্রাফার থেকে শুরু করে মেকাপম্যান পর্যন্ত সবাই প্রতিযোগীদের সঙ্গে আপত্তিজনক ব্যবহার করেছে। ইভেন্ট আয়োজকদের কেউ কেউ বোঝাতে চেয়েছে, যে নিজেকে যতো উজাড় করে দেবে তার স্কোরিং ততো বেশি হবে। সবচেয়ে আপত্তির বিষয় ছিল, মেয়েদের পোশাক ঠিকঠাক করে দেওয়ার জন্য সেখানে রাখা হয় পুরুষ ড্রেসম্যান। এ বিষয়টি নিয়েও আমার সঙ্গে আয়োজকদের বাকবিতণ্ডা হয়। সবমিলিয়ে একপর্যায়ে ওই পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে নিতে না পেরে গ্র্যান্ড ফিনালেতে অংশ না নিয়েই দেশে ফিরে আসি।”
“এই বিউটি ইভেন্টে তো বাংলাদেশের আরও মেয়েরা ছিল, তারাও কী প্রতিবাদ করেন নি?”- এ প্রশ্নের উত্তরে আনহা বলেন, “বাংলাদেশ থেকে যেসব প্রতিযোগী এখানে অংশ নিয়েছিল তাদের প্রত্যেকেই কমবেশি বিব্রত ও হতভম্ব হয়েছেন। নানারকম অশালীন ব্যবহারে অতিষ্ঠ হয়ে আমি কয়েকজন প্রতিযোগীকে দেশে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানাই। তাদের কেউ কেউ আমাকে বলেন, “শুরু থেকে সব ধাপ পেরিয়ে এতো টাকা পয়সা খরচ করে এতোদূর এসে এখন এভাবে ফিরে যাবো না। নাচতে নেমে ঘোমটা দেবো না। আমারা শেষ দেখতে চাই। এ কারণে বাধ্য হয়ে তাদের ফেলে মায়ের অসুস্থতার কথা বলে আমি একাই চলে আসি।”
আনহা আমিন জানান, প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার উদ্দেশ্যে গত ২০ জুলাই থেকে বাংলাদেশের প্রতিযোগীদের হাওড়ার আইটিসি ফরচুন হোটেল থাকতে হয়েছে। সেখানে মিডিয়া পার্টনার বাংলাদেশের বৈশাখী টিভির কাউকে খুজেঁ পাওয়া যায় নি।
আনহা আমিনের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে “মিস অ্যান্ড মিসেস অদ্বিতীয়া’ প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিজয়ী সিলভিয়া আফরিনের সঙ্গে যোগাযোগ হলে তিনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান।
সূত্র: Click This Link