আজ ২৫ জানুয়ারি—একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠার সেই কালো দিবস। ১৯৭৫ সালের এ তারিখে এদেশের রাজনীতির ইতিহাসে রচিত হয়েছিল এক কালো অধ্যায়ের। ওইদিন সংসদে তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান পেশকৃত চতুর্থ সংশোধনী বিল পাস হয়। এর মাধ্যমে দেশের সব রাজনৈতিক দল বিলুপ্ত করে









চতুর্থ সংশোধনী বিল পাসের এক মাস পর অর্থাত্ ১৯৭৫ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি তত্কালীন রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান এদেশের মানুষের সব মৌলিক রাজনৈতিক অধিকার হরণ করেন। এদিন তিনি সব রাজনৈতিক দল বিলুপ্ত করে ‘বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ (বাকশাল)’ নামে একটি জাতীয় রাজনৈতিক দল গঠন করেন। একইসঙ্গে নিজেকে এই দলের চেয়ারম্যান হিসেবে ঘোষণা দেন। পাশাপাশি দল পরিচালনা এবং দলের যাবতীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রেও একক ক্ষমতার অধিকারী হন। কয়েকটি দলের মাধ্যমে বাকশাল গঠিত হলেও দলের মধ্যে এবং রাষ্ট্র পরিচালনায় তাদের কোনো কর্তৃত্ব ছিল না। এভাবে শেখ মুজিবুর রহমান ওই সময় আমাদের রাষ্ট্র, সমাজ এবং রাজনৈতিক অঙ্গনের একাধিপতি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। তিনি বাকশালের দর্শন বাস্তবায়নের জন্য ১৯৭৫ সালের ১৬ জুন দেশের সবক’টি সংবাদপত্র বিলুপ্ত করেন। শুধু সরকারি ব্যবস্থাপনায় দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক বাংলা, বাংলাদেশ অবজারভার এবং বাংলাদেশ টাইমস—এ চারটি পত্রিকা সাময়িকভাবে প্রকাশনার সুযোগ দেয়া হয়।
এর আগে ওই বছর ৭ জুন বাকশালের গঠনতন্ত্র, কার্যনির্বাহী ও কেন্দ্রীয় কমিটি এবং পাঁচটি ফ্রন্ট ও এর কার্যনির্বাহী কমিটি ঘোষণা করা হয়। প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিবুর রহমান জাতীয় দলের চেয়ারম্যান হিসেবে সংগঠনের সেক্রেটারি জেনারেল পদে প্রধানমন্ত্রী এম মনসুর আলীর নাম ঘোষণা করেন। জিল্লুর রহমান, শেখ ফজলুল হক মণি ও আবদুর রাজ্জাককে দলের সেক্রেটারি করা হয়। আর ফ্রন্ট পাঁচটি হলো : জাতীয় কৃষক লীগ, জাতীয় শ্রমিক লীগ, জাতীয় মহিলা লীগ, জাতীয় যুবলীগ ও জাতীয় ছাত্রলীগ। এর সেক্রেটারিরা হলেন যথাক্রমে ফনী ভূষণ মজুমদার, অধ্যাপক ইউসুফ আলী, বেগম সাজেদা চৌধুরী, তোফায়েল আহমদ এবং শেখ শহীদুল ইসলাম। ১৫ জনকে নিয়ে কার্যনির্বাহী কমিটি এবং ১১৫ সদস্য রাখা হয় কেন্দ্রীয় কমিটিতে।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুর পর পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে দেশে আবার বহুদলীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থা চালু হয়। তবে বর্তমান সময়ে এমন একটি পরিস্থিতিতে দিনটি আমাদের কাছে ফিরে এসেছে যখন আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত এবং তারা সেই বাকশালী কায়দায় রাষ্ট্র পরিচালনা করছে। একতরফাভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা পরিবর্তনের পথকে করেছে রুদ্ধ। বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর চালানো হচ্ছে নানা ধরনের অমানবিক নির্যাতন-নিপীড়ন। ফ্যাসিস্ট কায়দায় আঘাত হানা হচ্ছে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর। আর বর্বর নির্যাতন করা হচ্ছে সাংবাদিকদের।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জানুয়ারি, ২০১২ দুপুর ১২:৩৪