উইকিলিকসের নথি আমাদের সামনে খুলে দিয়েছে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের গোপন কুশ্রী চেহারা। যা দুনিয়ার তাবত্ মানুষের সামনে উদোম হয়ে গেছে। কারণ দেশে দেশে শাসন, শোষণ, লুণ্ঠন অব্যাহত রাখতে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ যে কত ভয়ঙ্কর ও পৈশাচিক পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারে, ফাঁস হওয়া আমেরিকার ডিপ্লোম্যাটিক ডকুমেন্টগুলো তার দিকে আমাদের চোখ খুলে দিয়েছে।
আর এ কাজ করতে গিয়ে মার্কিনিরা দেশে দেশে তাদের দূতাবাসগুলোকে রীতিমত গোয়েন্দাগিরির দফতর বানিয়ে ফেলেছে। আজকের একমেরু বিশ্বে ‘আঙ্কেল শ্যাম’ কোনো রকমের আন্তর্জাতিক আইনের তোয়াক্কা করেন না বলেই মনে হয়। এখন রেগে-মেগে শ্যাম চাচা উইকি বস জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে বিচারের আওতায় আনার কথা ঘোষণা করেছেন। জুলিয়ানের অপরাধ হচ্ছে, তিনি কেন এসব তথ্য ফাঁস করে দিয়েছেন। আমেরিকার প্রবল প্রতাপান্বিত মিডিয়া ঝড় তুলেছে, জুলিয়ানের কেন এখনও ফাঁসি দেয়া হচ্ছে না। একটা পত্রিকার দম্ভোক্তি দেখুন : Why isn't Julian Assange dead yet?
তথ্য প্রকাশ করা যদি অপরাধ হয় তাহলে দেশে দেশে নাশকতা, ষড়যন্ত্র, ইচ্ছামত ক্ষমতার পালাবদল, অস্ত্র ব্যবসা, প্রাকৃতিক সম্পদ লুণ্ঠন এবং সামরিক আগ্রাসন কি ভয়ানক অপরাধের মধ্যে পড়ে না? যে দেশটি নাকি দেশে দেশে তথ্য আর গণতন্ত্রের স্বাধীনতা ফেরি করতে ক্লান্ত, বাক ও ব্যক্তিস্বাধীনতার স্লোগান দিতে দিতে রীতিমত প্রাণান্ত—সে-ই কিনা উইকিলিকসের ব্যাপারে প্রাচীনপন্থী! কথায় বলে, সত্যের ঢোল আপনি বাজে। আমেরিকার দুষ্কর্মের কথা প্রকাশ করে দিয়ে উইকিলিকস বস নতুন কিছু বলেননি। যা করেছেন, সত্যকে তিনি নতুন করে মানুষের সামনে হাজির করেছেন। এতেই আমেরিকার গোস্সা।
‘ফ্রিডম’ ও ‘ডেমোক্র্যাসির’ একালের নিশানবরদার মার্কিন সাম্রাজ্যবাদীরা সত্য প্রকাশে এতখানি বিচলিত হয়ে পড়েছে যে তারা এখন সামন্তবাদী শাসকের মতো আচরণ করতেও দ্বিধা করছে না। ওসব গোপন নথিপত্র প্রকাশের ফলে আমেরিকার ডিপ্লোম্যাটিক কারসাজি সাধারণ মানুষের কাছে চলে এসেছে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন এর দায় স্বীকার করে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর কাছে ক্ষমা চেয়েছেন।
হিলারির ক্ষমা চাওয়ার প্রসঙ্গে একটা ঘটনার কথা মনে পড়ল। আফগানিস্তানে মার্কিন আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর যুদ্ধবিমান থেকে ওরা আফগান ক্ষুধার্ত শিশুদের জন্য রুটি ফেলতে শুরু করে। একদিকে রুটি আর একদিকে বোমা। রুটি কুড়াতে এসে ক্ষুধার্ত শিশুরা বোমার আঘাতে মারা যায়। সেই শিশুদের মৃত্যুতে মার্কিনিরা ক্ষমা চায়। ওদের পলিসি মেকাররা কিন্তু বলে, ওটা নাকি Collateral Damage—অনুষঙ্গিক ক্ষয়ক্ষতি!
হিলারির ক্ষমা প্রার্থনায় বিচলিত হওয়ার কিছু নেই। এই প্রতারক, মিথ্যুক, মোনাফেক সভ্যতার কর্তাব্যক্তিদের ক্ষমা প্রার্থনার তলায় আছে অন্য রকমের অভিসন্ধি। ক্ষমা প্রার্থনাও ওদের ডিপ্লোম্যাটিক কারসাজির অংশ। এরা সবকিছুই করতে পারে। এদের কাছে নীতি-নৈতিকতা ও মূল্যবোধের কানাকড়িও মূল্য নেই।
কৃতজ্ঞতা: ফাহমিদ-উর-রহমান
১. ০৩ রা জানুয়ারি, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:৩০ ০