

রাহুল গান্ধি বিতর্কে জড়িয়ে গেলেন ‘হিন্দু' সন্ত্রাসবাদের প্রশ্নে। কিছুটা হলেও অস্বস্তিতে পড়ে গেল কংগ্রেস পার্টি। এই নয়া বিতর্কের মূলে উইকিলিকসের ফাঁস করা এক বার্তা। যাতে বলা হয়েছে, ভারতে হিন্দু মৌলবাদী সংগঠনগুলোকে লস্কর-ই-তৈয়বার থেকেও বিপজ্জনক বলে মন্তব্য করেছিলেন রাহুল। গত বছর জুলাইয়ে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে মার্কিন বিদেশ সচিব হিলারি ক্লিনটনের সম্মানে আয়োজিত এক মধ্যাহ্নভোজে তিনি ভারতে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত টিমোথি রোমারকে এ কথা বলেন। পাশে বসা রাহুলকে এ দেশে লস্করের কার্যকলাপ সম্পর্কে প্রশ্ন করেছিলেন রোমার। জবাবে রাহুল বলেন, ‘ভারতে মুসলিম সম্প্রদায়ের কোনও কোনও অংশ থেকে লস্কর-ই-তৈয়বা সমর্থন পেলেও তাদের চেয়ে বড় আশঙ্কার বিষয় হলো হিন্দু মৌলবাদী সংগঠনের বাড়বাড়ন্ত।'
রাহুলের এই মন্তব্য নিয়েই শনিবার সকাল থেকে তোলপাড় পড়ে যায় জাতীয় রাজনীতিতে। বিজেপি-আরএসএস তথা সঙ্ঘ পরিবার কার্যত রে রে করে ওঠার মতো করেই আক্রমণ শানায় কংগ্রেস ও গান্ধী পরিবারের এই তরুণ নেতার বিরুদ্ধে। বিজেপি'র রবিশঙ্কর প্রসাদ অভিযোগ তোলেন, এক তো লস্করসহ পাক জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোই এতে উৎসাহ পাবে, তার ওপর বিদেশী রাষ্ট্রদূতের কাছে দেশের ঘরোয়া সমস্যা নিয়ে কথা বলে ভারতকে খাটো করেছেন রাহুল। রাহুলের ‘বড় হতে' আরও সময় লাগবে বলে কটাক্ষ করে রবিশঙ্কর এ-ও বলেন, ‘উনি দেশে সাম্প্রদায়িক বিভাজন তৈরি করতে চাইছেন। উনি মনে করছেন, হিন্দুদের বিরুদ্ধে কথা বললে মুসলিমরা উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেসকে ভোট দেবেন। এই রাজনীতি দেশের ভবিষ্যতের জন্য বিপজ্জনক।'
স্বাভাবিকভাবেই এই আক্রমণে গোড়ায় কিছুটা অস্বস্তি ও বিভ্রান্তিতে পড়ে যান কংগ্রেস নেতৃত্ব। দলের তরফে প্রথমে বলা হয়, রাহুলের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে। কিন্তু পরে রাহুলের তরফে একটি কৌশলী বিবৃতি দিয়ে বলা হয়, ‘রাহুল গান্ধী মনে করেন সন্ত্রাসবাদ এবং সাম্প্রদায়িকতা দেশের সামনে বড় আশঙ্কার বিষয়। সব ধরনের সন্ত্রাস সম্পর্কেই সতর্ক থাকা উচিত, কারা সেই সন্ত্রাসের ঘটনায় জড়িত তা বড় কথা নয়।'
গত মাসে দিল্লীতে এআইসিসি'র এক বৈঠকে খোদ সোনিয়া গান্ধীই হিন্দু সন্ত্রাসবাদ প্রশ্নে বিজেপি তথা সঙ্ঘ পরিবারের তীব্র সমালোচনা করেছেন। এর প্রথম উদ্দেশ্য হল, দুর্নীতি থেকে বিতর্কের মুখ ঘুরিয়ে দেয়া। দ্বিতীয়ত, সংখ্যালঘু মহলকে বার্তা দেয়া। আর সর্বোপরি, বিজেপি যখন কট্টর হিন্দুত্বের পথ ছেড়ে মধ্যপন্থা নিয়ে চলতে চাইছে, তখন আরও বেশি করে তাদের সাম্প্রদায়িক বলে চিহ্নিত করা।
আনন্দবাজার পত্রিকা।
Click This Link