সুনয়না,
এটি তোমার কাছে আমার শেষ চিঠি। যদি ইচ্ছে হয় ছিড়ে টুকরো করে ডাস্টবিনে ফেলে দিও, ঠিক ততটি টুকরো যতপরিমাণের সংখ্যা আমার জানা নেই। আমার ধারণা ছিল আমাকে করা টুকরোর সংখ্যা আমার ঠিকই জানা আছে। কিন্তু তা কতটুকু ভুল ছিল তা বুঝতে পারার আগেই টুকরোর সংখ্যা বাড়তে বাড়তে অসীম হয়ে গেছে হয়তো। আমি আসলেই জানিনা কয়টি টুকরো করার পরে তোমার কিছুটা দয়া হবে। সেই পর্যন্ত নাহয় টুকরো গুলোকে আবারো হাতে নিয়ে প্রতিটাকে দুই ভাগে বিভক্তই করতে থাক। সেই ভাগ গুলো আবারো দুই টুকরো। এভাবে হয়তো অসীম সংখ্যক টুকরার করার পরেও যদি তোমার মনের আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ না হয় তবে তাকে বর্গ সংখ্যক টুকরো করে দেখতে পার, কিংবা বর্গের ঘণ। ততক্ষণ পর্যন্ত যদি বেঁচে থাকি তারপরেও হয়তো হাসি মুখে অন্য কিছু হাতে ধরিয়ে দেব টুকরো করার জন্যে।
মাঝে মাঝে মনে হয় তুমি আমাকে ততটুকুই ঘৃণা কর যতটুকু আমি নিজেকে করি। কিন্তু ততটুকু ভালবাসতে পারনি যতটা আমি নিজেকে ভালবাসি। অবশ্য তা চেয়েছিলাম কখনোই বলবো না। শুধু তোমার জীবনের বেচে যাওয়া অবশিষ্ট্য সময়টুকু চেয়েছিলাম। স্বার্থপর মানুষ আমি, কাউকে সেই সময়ের ভাগ দিতে চাই নি। সেই সময় পাবার আশায় নিজের অবশিষ্ট্য সময় গুলোর যে কত সংখ্যকবার মৃত্যু ঘটেছে তার হিসেব করা বন্ধ করেছি অনেক আগেই, যার যোগ, বিয়োগ, গুণ কিংবা ভাগ যাই করাহোকনা কেন ফলাফল অসীম। সেই হিসেব কি করে মিলে তা কোন প্রতিষ্ঠান কিংবা শিক্ষক শেখাতে পারবে বলে জানা নেই আমার।
অপেক্ষা, একটা ব্যাস্ততম রাস্তার একপাশ থেকে অন্য পাশে তোমার নির্ভয়ে পারাপারের। চাইলে সকল ভয় বহন করতে পারি কিন্তু জোর করে কারো সময় যেমন নেয়া সম্ভব নয় তেমনি ভয় নেতা তো অসম্ভব ছাড়া আর কিছুই নয়।
সেই ব্যাস্ততম সড়কের একপাশে বাদ দিয়ে সময় বোধকরি থমকে গেছে। মানুষ সহ সকল যান বাহন স্থির। শুধু আমি একাই অস্থির। চারপাশের মতন স্থির হয়ে থমকে গেলে হয়তো সদা জাগ্রত অনুভূতি গুলোও আবার অবশ হয়ে পরতো। অবশ অনুভূতি গুলো দেয়াল ভেঙ্গে বেরিয়ে আসতে অক্ষম থাকতো। সেই সাথে সময় গুলোও অবশ হত যতক্ষণনা রাস্তার এই পাশে এসে পৌছুতে কিংবা অনন্ত কাল।
প্রিয়তমেষু বলে আর বিরক্ত করবো না তোমায়। হয়তো সেকেন্ডে সেকেন্ডে খোঁচাবও না তীক্ষ্ণ কথার বাণে। বিরক্তকে প্রশ্রয় দিতে তোমার খারাপও লাগতো না হয়তো। কিন্তু আমার প্রতিটি খোঁচা যে আমাকেই প্রতি ক্ষণে আমাকেই ক্ষত বিক্ষত করছে তা কখনোই বলা হয় নি। কিছু কিছু সম্পর্ক বোধকরি বিস্তর দূরত্বের মাঝেই সীমাবদ্ধ থেকে যায়। কিন্তু সেই দূরত্বকে কাছে নিয়ে আসার মতন কল্পনা শক্তি আমার আগেও ছিল, এখনো আছে।নিজের অসীম অভিযোজন ক্ষমতার পরীক্ষা দিয়ে চলছি প্রতিনিয়তই। এই ক্ষমতা ফুরিয়ে যায়নি বলেই হয়তো বেচে আছি এখনো। কিন্তু কতদিন এই ক্ষমতা ধরে রাখার শক্তি থাকবে তা নিজেও জানিনা। ফুরিয়ে গেলে হয়তো ঠাকুমার ঝুলির নটে গাছটির মতই মুড়িয়ে পরবো।
একটি গল্প শোনানোর ইচ্ছে ছিল তোমাকে। খুব ছোট একটা গল্প। আমার জানা নেই এই পর্যন্ত তোমার পড়ার ধৈর্য্য হবে কিনা। তারপরেও বলার চেষ্টা করি। একটা ছেলের গল্প। হঠাৎ বলা নেই কওয়া নেই একটা মেয়েকে হুট করে বলে বসলো “বিয়ে করবে আমাকে?” মেয়েটি বেশ মজার ছলেই বলেছিল- “যদি কোনদিন তোমার এইডস হয় তবে পরের দিনই বিয়ে করবো।” সম্ভবত মেয়েটির জানা ছিল না তার সেই মজার ছলে বলা কথার প্রেক্ষিতে প্রতিদিন ছেলেটির সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনার অংশ হিসেবে যুক্ত হয়ে যাবে সেই ব্যাধি।
শেষ করছি
পুরোনো পাপী হিসেবেই থাকলাম
যান্ত্রিকতা আমাদের সব কিছুই ভুলিয়ে দিয়েছে। মানুষের সবচাইতে আবেগ যেই ব্যাপারগুলোয় জড়িয়ে ছিল তার একটা হয়তো এই চিঠি যা বিলুপ্ত প্রায় এখন। সবাইরে মনে করাইয়া দেওনের অল্প প্রচেষ্টা ছাড়া আর কিছুই না এই চিঠি।
মূল পোষ্টঃ সুনয়না