আমরা কি আসলেই কাছের জিনিষ দেখতে পাই? চোখ খোলা অবস্থায়ও কি অন্ধ মনে হয় না নিজেদের?? নয়তো সব কিছুই কাছে থাকার পরেও কেন দেখতে পাইনা এর কোন কারণ বুঝতে পারিনা। মাঝে মাঝে মাথাইয় সমস্যা দেখা দিলে লালনের গান শুনি। নিজের মতন অর্থ খুজি বা তৈরী করি। পুরাটা ব্যাপারই নিজের জন্যে। অন্য কারও অপছন্দ হওয়াটা অস্বাভাবিক না। ভুল ভ্রান্তি থাকলে ধরাইয়া দিলে খুশি হই। আমার ক্ষুদ্রমস্তিষ্কে এই কাজ করা ধৃষ্ঠতার সমপর্যায়ের। মাঝে মাঝে ধৃষ্টতা দেখাতে ভাল লাগে।
//বাড়ির পাশে আড়শি নগর
সেথায় এক পড়শি বসত করে
আমি একদিন ও না দেখিলাম তারে
গেরাম বেড়ে অগাধ পানি
নাই কিনারা নাই তরণী পারে
বান্ছা করি দেখব তারে
কেমনে সেথায় যাইরে
কি বলব পড়শির ও কথা
হস্থ পদ স্কন্ধ মাথা নাইরে
ক্ষনিক ভাসে শূন্যের উপর
ক্ষনিক ভাসে নীরে
পড়শি যদি আমায় ছুতো
যম যাতনা সকল যেত দূরে
সে আর লালন একখানে রয়
লক্ষ যোজন ফাক রে//
আড়শি নগর আসলে কি? সঠিক জানা নাই আমার। তবে যতটা বুঝি তাতে আড়শি নগর সেই জায়গাকেই বলা হয় যেখানে পৌছানোর জন্যে মানব সমাজের সৃষ্টি। আমাদের আড়শি নগর খুব বেশি দূরে না। অর্থাৎ আড়শি নগরের খোজ করতে কোথাও যেতে হয় না আসলে। "বাড়ির পাশে আড়শি নগর" এর মানে দাড়ায় তবে নিজের খুব কাছেই আড়শি নগরের অবস্থান। "সেথা পড়শি বসত করে" এই পড়শি কে কি চিনতে পারা যায় । তিনি আর কেউ নন স্রষ্ঠা কিংবা মনের মানুষ যার সন্ধান করতে করতেই সকল বাউলের জীবনের শেষ পর্যন্ত যায়। পড়শি রূপেই অবস্থান তার আমাদের খুব কাছেই শুধু ঠিক মতন দেখার চেষ্টা।
"গেরাম বেড়ে অগাধ পানি
নাই কিনারা নাই তরণী পারে
বান্ছা করি দেখব তারে
কেমনে সেথায় যাইরে"
এইখানে আসলে আমাদের বিভিন্ন অনুযোগের কথা বলা হয়। "বাঞ্ছা করি দেখবো তারে" অর্থাৎ স্রষ্ঠাকে দেখার বা খুজে পাওয়ার ইচ্ছা আছে কিন্তু অগাধ পানি কূল কিনারা নাই ধরণের অনুযোগ। কিন্তু আসলেই কি তাই? খুজতে চাইলে খোজার মতন খুজতে হয় তবেই খুজে পাওয়া যায় মনের মানুষ। সেখানে নাই কোন বাঁধা। বাঁধা বিপত্তি সকলই আমাদের নিজেদের সৃষ্টি।
"কি বলব পড়শির ও কথা
হস্থ পদ স্কন্ধ মাথা নাইরে
ক্ষনিক ভাসে শূন্যের উপর
ক্ষনিক ভাসে নীরে"
পড়শি বা মনের মানুষের দেখা সহজেই যে মেলে না তার কারণ কি? তার কি আকার আছে? হাত পা কিংবা মাথা?? কিছুই নেই। "ক্ষণিক ভাসে শুন্যের উপর ক্ষণিক ভাসে নীরে" অর্থাৎ তার বিচরণ সর্বত্র। যে কোন স্থানেই তাকে পাওয়া যাবে শুধু খুজে পেতে হবে মাত্র।
"পড়শি যদি আমায় ছুতো
যম যাতনা সকল যেত দূরে
সে আর লালন একখানে রয়
লক্ষ যোজন ফাক রে"
শেষে এসে সত্য কথাই সুন্দর করে স্বীকার করে নিয়েছেন লালন সাঁই। পড়শির সংস্পর্ষে সকল জরা যাতনা দূর হয় কিন্তু সেই পড়শির সংস্পর্ষ আগে পাওয়া চাই। "সে আর লালন একখানে রয় লক্ষ যোজন ফাক রে" লালন এইখানে সমগ্র মানব জাতির ধারক হিসেবে এসেছেন। অর্থাৎ মনের মানুষ আর লালন একখানেই অবস্থান করে কিন্তু শুধু খুজে না পাওয়ার কারণেই দূরত্ব লক্ষ যোজন।
মাঝে মাঝেই লালনের দর্শনে দোটানায় পরি। আসলেই কি তার সৃষ্টি কর্তায় বিশ্বাস ছিল কি ছিল না মাঝে মাঝে দোটানায় পরি। এই গানের কথায় সম্পূর্ণরূপেই লালন সৃষ্টিকর্তার কথা তুলে এনেছেন তাতে কোন সন্দেহ নেই। তবে কি "সৃষ্টিকর্তা" আর "মনের মানুষ" দুটোই কি এক? তা ঠিক করার দায়ভার আপনাদের উপরেই থাকলো
মূল পোষ্টঃ ~আমি একদিনও না দেখিলাম তারে~
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১০:৫২