somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শিলালিপি -৪

১৮ ই অক্টোবর, ২০১৩ রাত ২:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি ওই তিনজনের হিংস্র থেকে হিংস্রতর আক্রমনের শিকার হতে থাকলাম । স্বাভাবিক ভাবেই ওদের এড়িয়ে চলতে শুরু করলাম । দুপুরে ভাত খাবার পর পরই দুভাই এয়ার গান নিয়ে বেড়িয়ে পরি । সন্ধ্যা পর্যন্ত পাখির পেছনে ছুটি । সন্ধার পর প্রতিদিনই কিছু না কিছু বাজার সদাই করি । এতে আমার পড়াশোনা গোল্লায় গেল কিন্তু মনের জোর ফিরে পাতে শুরু করলাম । এর সাথে সাথে ঘরে পরিবর্তন শুরু হল । বড় আপা প্রাইমারি স্কুলের চাকরি ছেড়ে বিসিএস-এ জয়েন করে চুনারুঘাট চলে গেল অবিবাহিত থেকেই । এই বঙ্গ নারীর বয়স তখন ৩১ পার হয়ে গেছে । আমার পরীক্ষার বাকি ৬ মাসেরও কম । আব্বা সহকারী অধ্যাপক হিসেবে এল পি আর-এ চলে এসেছেন । এই অবস্থায় তাঁর কর্মকাণ্ড সীমা ছাড়িয়ে গেল । দুই তিনটা পেয়ারা গাছে ১ম বারের মত হাজার হাজার পেয়ারা এসেছিল । পিঁপড়া তাড়ানোর নামে সব গুলো গাছের গোঁড়ায় কেরোসিন তেল ঢেলে দিলেন । পেয়ারা সমেত গাছ গুলো মরে গেল । অথচ প্রতিদিন আমি এগুলোয় এরোসল দিতাম, গোঁড়ার মাতি আলগা করে দিলাম, মানে যা কিছু করনীয় তাঁর সবই করতাম । মনে খুব কষ্ট পেলাম কিন্তু কিছু বলিনি । একদিন ঘুম থেকে উঠে দেখি আব্বা আম্মা বাসায় নেই । গেল কই ? কাউকে কিছু না জানিয়ে কোন এক মহিলা কবিরাজের কাছে আম্মাকে নিয়ে গেছে একুশ দিনের জন্য । খুব টেনশন হতে থাকলো আম্মার জন্য । যেখানে পিজি হসপিটালের ডাক্তাররা আম্মার কিছু করতে পারেনা সেখানে............
২২ তম দিনে এক পা এবং কোমর ভেঙ্গে আম্মা ফেরত এলেন চির পঙ্গু হয়ে । আগে যাও কিছুটা হাঁটতে পারতেন এখন তাও শেষ হয়ে গেল । নিরব দর্শকের মত দেখে গেলাম । সারা রাত পশুর মত ঘো ঘো করে আম্মা চিৎকার করে কাঁদে । আমরা দৌড়ে গিয়ে লাইট জালালে সব শান্ত । লাইট নিভালে আবার শুরু । শেষ রাতের দিকে শুরু হত আব্বার মারপিট । কি ভয়ঙ্কর ভাবে মোটা বাঁশ দিয়ে পেটাত না কেউ না দেখলে বিশ্বাস করা অসম্ভব । একসময় সবাই মোটামুটি অভ্যস্ত হয়ে পড়ল কিন্তু আমি পারলাম না । আম্মা জেগে থাকে শারীরিক কষ্টে আর আমি জেগে থাকতে শুরু করলাম ভয়ে । এ জাতীয় অমানুষিক নির্যাতন আম্মা কমপক্ষে আরও ১৫ বছর সহ্য করে অবশেষে এক প্রকার মৃত্যু বরন করলেন আমার কোলে মাথা রেখে । এক প্রকার হত্যা কাণ্ড । আব্বা অবশ্য এই সুযোগে আমার দিকে আঙ্গুল তোলার চেষ্টা করে ছিলেন কিন্তু সফল হননি ।
আম্মাকে এতো এতো খারাপ নির্যাতনের কারন শুরুতে আমি জানতাম না । সে আসলে ২য় বিয়ে করতে চাইছিল । এই আধা মরা মহিলার সারা গায়ে কালো কালো দাগ জমাট বেঁধে থাকতো । নির্যাতনের চিহ্ন । একদিন শিতের দুপুরে আম্মা আমাকে ডেকে বললেন, আজ সন্ধায় ঘরে নতুন বউ আসবে । তোর সৎ মা । কোন রকম ঝুট ঝামেলা বাঁধাবি না কিন্তু । আমরা পাঁচ ভাই বোন, একটা চাচাত বোন ( সে আমাদের সংসার মেনটেইন করত ) , দুইটা কাজের লোক থাকতে বিয়ের প্রয়োজন টা কি ? আম্মা বললেন, শুধু আমার সেবার জন্য তাকে আনা হচ্ছে । বড় আপা বললেন, এইটা আব্বার ফাণ্ডামেন্টাল নিড । মেঝো ভাই বললেন, আব্বা অবশ্যই বিয়ে করবে । বাবু ( সেঝ ভাই, সে-ই এই গল্পের গুরুত্তপূর্ণ অঙ্গ ) বলল, আব্বার সমস্যাটা আমাদের সবারই বোঝা উচিত । দেখা গেল আমি আর বড় ভাইয়া ছাড়া সবাই মোটামুটি বিষয়টা সম্পর্কে জানে । সন্ধ্যায় সবাইকে অবাক করে দিয়ে মোটা, কালো, ডিভোর্সি নোংরা চেহারার এক মহিলা কে সাথে নিয়ে ইনি উপস্থিত । সাথে যথারীতি ১৫-২০ জনের এক দঙ্গল বন্ধু বান্ধব যেন এদের সামনে আমি কিছু বলতে না পারি । রাত দশটা পর্যন্ত রাস্তায় হাঁটাহাঁটি করে কাটালাম । বড় ভাইয়া এসেই জানতে চাইল আমাদের এই মুহূর্তে করনীয় কি ? বললাম, আমি তুমি এই বিয়ের স্বীকৃতি দেব না কিন্তু বাস্তবতা মেনে কাউকে কিছু বলবও না । ভাইয়া এই কথা মেনে নিলেন ।
বিয়ের ১ম তিন মাস তাদের ভয়াবহ নোংরামিতে জীবন অতীস্ট হয়ে উঠল । দিন নাই দুপুর নাই দুয়ার জানালা খোলা রেখেই তারা মিলিত হতে শুরু করল । ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা জানালা দিয়ে এই দৃশ্য দেখত । দৌড়ে এসে বলত, জানালা দিয়া দেখেন গিয়া তারা কি করে । না কিছু বলতে পারলাম না পারলাম সইতে । আম্মার সেবার জন্য যিনি আসলেন তিনি আলাদা ঘরে আব্বাকে নিয়ে দিব্বি আমোদ ফুর্তি করতে লাগলেন । ৭-৮ মাস পরে শুনলাম ওনি মা হতে চলেছেন । আব্বার ব্যস্ততা বেড়ে গেল । সারাদিন নতুন বউ নিয়ে ডাক্তার কবিরাজের কাছে দৌড়ায় । একদিন তো মহারানী সবাইকে শুনিয়ে বলে দিল যে কারো দাসিগিরি করার জন্য এখানে বউ হয়ে আসেনি বরং আব্বা তাঁর কাছ থেকে যে যৌতুক নিয়েছে প্রয়োজন হলে এজন্য আব্বাকে সে জেল খাটিয়ে, টাকা বুঝে নিয়ে , সম্পত্তির ভাগ নিয়ে তবে এখান থেকে বিদায় নিবে । আমার বাপ যৌতুক নিয়ে বিয়ে করেছেন? আজব দুনিয়া । আম্মা তাঁর শেষ সময় পর্যন্ত একা হয়ে গেলেন । আমরা তাঁর জালে শৃঙ্খলিত হয়ে পড়লাম । শুরু হল অত্যাচার নির্যাতন ।
১৮ ই অক্টোবর ২০১৩ রাত ২ টা ২৫ মিনিট ।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নবীজির জন্মের আগে আরবে গজব অবস্থা ছিলো

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৯ ই মে, ২০২৫ সকাল ১১:০২



নবীজির জন্মের আগে আরবে বেশ কিছু ধর্ম ছিলো।
ধর্ম না বলে কুসংস্কার বলা ভালো। সেই সময় মানুষ রসিকে সাপ মনে করতো। মগজহীন মানুষ দিয়ে ভরা ছিলো আরব। সেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনু গল্পঃ ব্যর্থ বাসনার দাহ

লিখেছেন সামিয়া, ০৯ ই মে, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৮

ছবিঃনেট

খুব তাড়াহুড়া করে বের হয় তন্দ্রা, আজ স্কুলে যাবে না, কোনো টিউশনি করাবে না, ফোন করে সব student-কে মানা করে দিয়েছে। এগারোটার আগে ওকে এয়ারপোর্ট পৌঁছতে হবে।

নাবিল আসছে,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ডায়েরী- ১৫২

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৯ ই মে, ২০২৫ বিকাল ৫:২৩



এনসিপি আওয়ামীলীগকে এত ভয় পাচ্ছে কেন?
অলরেডি আওয়ামীলীগের তো কোমর ভেঙ্গে গেছে। তবু রাতদুপুরে এত আন্দোলন কেন? দেশে ১৮/২০ কোটি মানুষ। তারা তো আওয়ামীগকে ভয় পাচ্ছে না। তাহলে এনসিপির এত... ...বাকিটুকু পড়ুন

বৃথা হে সাধনা ধীমান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৯ ই মে, ২০২৫ রাত ১০:৩২

বৃথা হে সাধনা ধীমান.....

বিএনপি মিডিয়া সেল এর সদস্য সচিব ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদউদ্দীন চৌধুরী এ্যানী সকল পত্রিকা কতৃপক্ষের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ কর্মসূচি শুরু করেছেন- বিএনপির এ উদ্যোগ নিঃসন্দেহে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি কি দু’জন ভারতীয়র আচরণ দিয়ে পুরো ভারতকে বিচার করব?

লিখেছেন প্রগতি বিশ্বাস, ০৯ ই মে, ২০২৫ রাত ১০:৩৬

সাম্প্রতিককালে একটি আন্তর্জাতিক কমিউনিটিতে যুক্ত হয়ে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনার সুযোগ হয়েছে। এই আন্তর্জাতিক কমিউনিটিতে ভারত এবং চীনের জনসংখ্যাগত আনুপাতিক কারণে অংশগ্রহণ বেশি। এই কমিউনিটিতে ভারত, চীন ছাড়াও পাকিস্তান, নেপাল, ইউক্রেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×