বাংলা ভাষায় বহুল প্রচলিত একটি কথা আছে, 'মোল্লার দৌড় মসজিদ পর্যন্ত।' কথাটি দৃষ্টিকটু হলেও অর্থপূর্ণ। আসুন ভেবেচিন্তে দেখি-
হেফাজতে ইসলামের সর্বোচ্চ নেতা আল্লামা শফি সাহেব বলেছেন, "নারী হচ্ছে তেঁতুল। তেঁতুল দেখলে যেমন মানুষের লালা ঝরে তেমনি নারী দেখলেও পুরুষের লালা ঝরে। নারী কেন বাইরে যাবে, পড়াশোনা করবে, বাজারে যাবে, গার্মেন্টস করবে? নারী থাকবে চার দেয়ালের মদ্ধ্যে আবদ্ধ। ক্লাস থ্রি-ফোর পর্যন্ত পড়াই তো এনাফ। স্বামীর টাকা পয়সা হিসাব করে রাখার মত শিক্ষাই তাদের জন্য প্রযোজ্য।"
শফি হুজুরেরা তো ওয়াজ করেই খালাস। তাদের ওয়াজ আর বাস্তব জগতের মধ্যে যে আকাশ-পাতাল তফাৎ তা উনারা কখনোই বুঝতে পারেন না। কারণ ওই উপরের কথাটি। দৌড় ওই পর্যন্তই।
বাংলাদেশে গার্মেন্টস শ্রমিকদের মধ্যে ৮০ থেকে ৮৫ ভাগ শ্রমিকই নারী। তারা দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে শহরে এসে কাজ করেন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে তারা কেন আসে শহরে? শহরের লাল-নীল বাত্তি কি তাদের চুম্বকের মত টানে? নাকি শফি হুজুরের মতে, তারা গ্রাম ছেড়ে নাচতে নাচতে শহরে বেলেল্লাপনা করতে আসে? আমি জানি এসব প্রশ্ন ও প্রশ্নের উত্তর তাদের ওই দৌড়ের বাউন্ডারির বাইরে।
নারীরা গার্মেন্টস এ কাজ করে, রাস্তায় কাজ করে, ক্ষেতে কাজ করে, বাসা বাড়িতে কাজ করে, কাজ করে হাট-বাজারে। প্রশ্ন হল এইসব কাজ করে তারা যে অর্থ উপার্জন করে, তারা তা কোথায় খরচ করে? তারা কি তাদের উপার্জিত অর্থের দ্বারা রুপচর্চা করে? নাকি সেই অর্থ দ্বারা অনর্থ করে বেড়ায়? আমি জানি, এসব প্রশ্ন ও প্রশ্নের উত্তরও তাদের ওই স্বল্প দূরত্বের বাউন্ডারিতে কখনোই প্রবেশ করে না।
সারা দেশে লাখ লাখ ছেলে ক্বওমী মাদ্রাসায় পড়ছে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে ওইসব ছেলেপেলে অধিকাংশই এতিম না হয় গরিব-দুঃস্থ পরিবারের সন্তান। নিতান্ত ভাগ্যের ফেরেই তাদের জায়গা হয়েছে ওখানে। এর অন্যতম কারণ ক্বওমী মাদ্রাসায় পড়তে কোন খরচ দরকার হয় না। আপনি যদি খোঁজ নেন তাহলে দেখবেন, অধিকাংশ ছেলেদের মা-বোনেরাই রাস্তায়-গার্মেন্টসে কাজ করে তাদের পরিবার চালাচ্ছে। তাদের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আবদার পূরণ করছে। অথচ মাদ্রাসা ছাত্রদের মন-মগজ এভাবেই গড়া হয়ে থাকে যে, তারা তাদের নিজেদের সত্বাটুকু হারিয়ে ফেলে। তার প্রমাণ কতটা ভয়ংকর ও হাস্যকর দেখুন- শফি হুজুরের ওই ওয়াজ হাজার হাজার মাদ্রাসা ছাত্র তাৎক্ষনিক, আগে ও পরে শুনেছে কিন্তু কেউ প্রতিবাদ করেনি। তাদের সামনেই তাদের মা-বোনকে নিয়ে কুৎসিত কথাগুলো হুজুর বললেন এবং তারা মারহাবা মারহাবা বলে হাত তালি দিল! কিছুদিন পর এরাই যখন পড়াশোনা শেষ করে ওয়াজ করবে তখন তারাও শফি হুজুরের মতই বলবে! এর বিন্দুমাত্র ব্যতিক্রম হবে না। ভাবা যায়!
বিভিন্ন সময় আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে। কিন্তু মাদ্রাসা শিক্ষা নিয়ে তেমন কোন উন্নত ব্যবস্থা নিতে কোন সরকারকেই দেখা যায়নি। মাদ্রাসা হুজুরদের গোড়াঁমিও এর জন্য অনেকাংশে দায়ী। তবে সময় এসেছে মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থাকে একটি কাঠামোতে নিয়ে আসার। না হলে অদূর ভবিষ্যতে আমরা যে আমরা ভয়াবহ সমস্যার সম্মুখীন হব, সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। বড় বড় আলেম-উলামা-হুজুরদের ওপরও অনুরোধ থাকবে একটু বাস্তবিক হওয়ার। হুরপরীর স্বপ্নে বিভোর না থেকে একটু জেগে ওঠার।