somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সমতার সংঘাত

০১ লা এপ্রিল, ২০১৬ ভোর ৪:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সৃস্টির আদি থেকেই আমরা মানুষের মধ্যে ভিন্নতা দেখতে পাই। তখন থেকেই মানুষ দুই রকমের পুরুষ এবং নারী। মূলত বিভেদের শুরু সেখানেই। মানুষ কিন্তু এক রকম করে তৈরি করা হলো না! দুই ধরণের মানুষ বানিয়ে তাঁদের প্রায় সবকিছুই দেয়া হলো আলাদা আলাদা করে।
আকার আকৃতি, বেশভূষা, চলনবলন, দায়দায়িত্ব সবই ভিন্ন।পৃথিবী তো চলে আসছিলো ভালোভাবেই কিন্তু বাধ সাধলো পুরুষ নামক মানুষেরা। তাঁরা নারীদের উপর একচ্ছত্র অধিকার দাবি করতে গিয়ে তাঁদের একপেশে করে ফেলতে লাগলো। সময়ের পরিবর্তনে পুরুষদের এই সিদ্ধান্ত কতো বিশাল আকার ধারণ করতে পারে তা তাঁরা নিজেরাও জানলো না। দাবিয়ে রাখার নীতি এক পর্যায়ে বিপ্লব ডেকে আনে এটাই অলিখিত নিয়ম। তাঁদেরকে কিছু পুরুষালি মন্ত্র শেখানো হলো আর তাঁরা ভাবলো মন্ত্রবলে সিদ্ধি সাধন হবে। সময় এগোতে লাগলো। মন্ত্রবলে কাজ হলো না, নারীরা বিদ্রোহ করলো। নারীদের সেই সবকিছুই করা চাই যা পুরুষ মানুষেরা করে। তাঁদের চাই সমান অধিকার। নারীরা ভুলে গেলো সমান অধিকার আর একই ধরণের কাজ করতে পারা এক কথা নয়। তাঁরা উপেক্ষা করতে চাইলো প্রাকৃতিক নিয়মে তাঁদের কিছু সীমাবদ্ধতার কথা। আমি বলতে চাইছি না গুরুত্বপূর্ণ কাজের দায়িত্বে গিয়ে নারীরা মাতৃত্ব এবং সন্তান লালনপালন করার সময় পাবে না। আমি বলতে চাইছি এসব সীমাবদ্ধতার জন্য নারীরা দায়ী নয়, এগুলো শুরু থেকেই তাঁদের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে যা পুরুষদের জন্য করা হয় নাই। সাময়িক শারীরিক সীমাবদ্ধতা নিয়েও নারীরা মস্তিষ্ক চালিত কাজ করতে যথেষ্ট পারদর্শী। পুরুষরা একাধিক স্ত্রী নিয়েও গর্বিত পিতার আসনে অধিষ্ঠিত থাকতে পারে এ সুবিধা দেয়া হয়েছে তাঁদের । নারীদের কিন্তু সে সুবিধা দেয়া হয় নাই।
নারী এবং পুরুষকে বানানো হয়েছিলো একে অপরের শক্তি হিসাবে একসাথে পথ চলার জন্য কিন্ত কালে-কালে তাঁরা সর্বক্ষেত্রে নিজেদের মধ্যে প্রাচীর তৈরি করলো। সময় পরিবর্তনে এঁরা পাশাপাশি চলা থেকে মুখোমুখি সংঘর্ষে লিপ্ত হলো। নারীপুরুষ পরস্পরকে সাথী হিসাবে তৈরি করা হয়েছিলো, একে অপরের দাসদাসী হিসাবে নয়। দু’জনকে বানানো হয়েছিলো একে অপরকে ভালোবেসে পৃথিবীকে পরিবর্ধন করার পথে এগিয়ে চলার জন্য, একজন নারীকে পথে একা পেয়ে ধর্ষণের পরে মেরে ফেলার জন্য নয়। একসময় সুন্দরের প্রতীক নারীদের অধিষ্ঠিত করা হলো বস্তুর আসনে। কেনো করা হলো? কারা করলো এসব সেটা ভিন্ন প্রসঙ্গ।
নারী’রা রাস্তায় শ্লোগান দেয়ার পরেও কিন্তু ঠিক সময় মতো ঘরে ফিরে যায় সংসার, স্বামী, সন্তানের মমতায়। তাঁরা প্রতীক্ষা করে প্রিয় মানুষটির ঘরে ফিরে আসার। আর পুরুষেরা? সব কাজের মাঝেও মনে রাখে নিজের দায়িত্ত্ববোধ। তাঁরা তাঁদের আপন মানুষটির নিরাপত্তার কথা ভাবে, প্রয়োজনে শত ব্যস্ততার মাঝেও বলিষ্ঠ হাতে প্রিয়জনের হাত ধরে পার করে দেয় ঝুঁকিপূর্ণ পথ! বাস্তব জীবনে একে অপরের প্রয়োজন অস্বীকার করেনা কেউই তবুও কেনো এতো সংঘাত? নিজেদের মধ্যে যাঁদের এতো মমত্ত্ববোধ তাঁরাই কিনা আজ রাজপথে! নিজেদের জীবনের প্রতিটি দিন নারীরা দেয় তাঁদের সংসারের জন্য অথচ তাঁদের কন্ঠে আজ দাবি আদায়ের শ্লোগানের প্রয়োজন হয়েছে। কিন্ত কেন? একথা ভাববার সময় এসেছে।
আধুনিকতার নামে আমরা নারীপুরুষেরা নিজেদের দায়িত্ববোধ থেকে ছিটকে পরছি। স্বাধীনতার নামে উভয়ের কাছেই উভয়ের দায়বদ্ধতার কথা অস্বীকার করতে চাইছি। স্বাধীনতা মানুষকে শ্বাসরোধ করে না, মানুষকে বুক ভরে শ্বাস নিয়ে বাঁচতে শেখায়। একজন পুরুষ যদি একজন নারীকে তাঁর মাকে ভালোবাসার একচতুর্থাংশ এবং একজন নারী একজন পুরুষকে তাঁর বাবাকে ভালোবাসার একচতুর্থাংশও অনুভব করতে দিতে পারতো তবে উভয় উভয়ের কাছে চিরদিনের জন্য বন্দী নয় বন্ধু হয়ে থাকবে। হিংসাপরায়ণ হয়ে এই ক্ষেত্রটা আমরা হারাতে বসেছি। এটাকে আবাদ করার জন্য প্রয়োজন পরস্পরের প্রতি বিশ্বস্থ ভালোবাসার বৃক্ষ রোপণ, প্রয়োজন মমত্ত্ববোধের বীজ বপন।
যেখানে একজন আরেকজন ব্যতীত অসম্পূর্ন সেখানে নারীপুরুষদের মধ্যে অধিকার নিয়ে সংগ্রাম! নারী এবং পুরুষদের এই অসম্যতার মনোভাব প্রজন্মের পরে প্রজন্ম প্রসারিত হচ্ছে। এসব দেখে আমরা সহজেই হিসাব করতে পারি যে বাবা-মা তথা পরিবারের নিজেদের কার্যকলাপের মাধ্যমে এগুলো সংক্রামক ভাইরাল আকারে সন্তানদের মধ্যে ছড়িয়ে যাচ্ছে এবং বেড়ে যাচ্ছে একে অপরের প্রতি নির্যাতন নিপীড়নের ভয়াবহতা। কেউ নির্যাতিত হচ্ছে মেন্টালি কেউ বা হচ্ছে ফিজিক্যালি মেন্টালি দুইভাবেই। শুধু মিছিল আর স্লোগান দিয়ে পৃথিবী বদলানো কতোটুকু সম্ভব? ছেলেমেয়েদের মানুষ হিসাবে গড়ে তোলার গুরুদায়িত্ব বাবা-মায়ের। অনেক সময় মনে করা হয় এই দায়িত্ব মায়ের উপরেই বেশি বর্তায় যেহেতু মায়েরা সন্তানদের কাছে বেশি সময় থাকে। কিন্তু পদে পদে মায়েরা বাবার ভয় দেখিয়ে সন্তানদের বশ মানায় সেটা আমরা না দেখতে পেলেও একথা অস্বীকার করার অবকাশ নাই যে কাছে কম সময় থেকেও ছেলেমেয়েরা বাবার দ্বারা মায়ের চেয়ে বেশি না হলেও সমান ভাবে প্রভাবিত হয়।
অনেক পরিবারে মাকে বাবার কাছে আর বাবাকে মায়ের কাছে অত্যাচারিত হতে দেখে ছেলেমেয়েরা শিখছে নির্যাতন, শিখছে একে অপরের প্রতি ঘৃণাবোধ। এ সমস্ত হিংসা বিদ্বেষ পরবর্তীতে সন্তানদের ব্যক্তি জীবনে প্রভাব ফেলছে, সমাজকে অবক্ষয়ের পথে ঠেলে দিচ্ছে। পরিবার এবং পরিবেশ থেকেই পুরুষেরা শিখছে নারীরা ভোগের বস্তু, শিখছে নারীদের দাবিয়ে রাখার মন্ত্র। পুরুষেরা স্ত্রী বা মা যে কোনো সম্পর্কেই হোক নারীদের তাঁদের স্বাধীনতা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে! বাড়ছে দুই পক্ষের মধ্যে বৈষম্য ভাব।
মায়েদের অতি আদরে ছেলেরা জন্ম থেকেই পুরুষালিভাব নিয়ে বেড়ে ওঠে। বহু পরিবারে আদরের নামে মায়েরা ছেলেদের সব অন্যায়কে সায় দেয়। একদিন এই সব সন্তানরাই হয়ে উঠতে পারে রেপিস্ট কিংবা এসিড নিক্ষেপকারী। যে সমস্যা শুরু হয় পরিবার থেকে, সেই সমস্যা সত্যিকার অর্থে পরিবর্তন করতে চাইলে তা শুরু করতে হবে পরিবার থেকেই। যেদিন একজন পুরুষ একজন নারীর মাঝে তার মা বা বোনের মুখ দেখতে পাবে এবং সম্মান দিতে শিখবে সেদিনই এই অপরাধ এবং অন্তর্যুদ্ধ কমে যাবে। যেদিন একজন মা তাঁর মেয়েকে সাবধানে চলার পাশাপাশি ছেলেকেও শিখাবে সামনে দেখা মেয়েটিকে সম্মান করা ছেলের কর্তব্য, মেয়েটির অমতে কিছু করার অধিকার তাঁর নেই সেদিন আসবে আসল পরিবর্তন। ‘আমার এক ডজন ছেলে আছে আমিই রাজা যা খুশি করতে পারি’ এই প্রথা থেকেও বেরিয়ে আসতে হবে বাবা-মা তথা পরিবারকে। একজন নারীকেও জানতে হবে কি করে পুরুষদের সম্মান করতে হয়। সমান অধিকার আদায় করতে গিয়ে নিজেকে উঁচু দেখানোর চেষ্টা করলে বৈষম্যতার অবসান হবে না। যেহেতু পুরুষদের তুলনায় নারীদের অপরাধের সংখ্যা কম এই জন্য এনিয়ে আলোচনাও হয় কম। কখনো পুরুষেরা নারীদের, কখনো নারীরা নিজেরাই নিজেদের ভোগের সামগ্রী হিসাবে উপস্থাপন করে যা নানা রকম অপরাধকে প্রভাবিত করে। দুঃখজনক হলেও সত্যি অনেক অঘটনই ঘটে পরিচিত মহলের মধ্যে থেকে।
পরিশেষে, আমরা যেনো সৃষ্টির গুরু রহস্যকে সম্মান করি। নারীপুরুষ কেউ কাউকে উঁচুনিচু না ভেবে যার যার স্থানে আমরা সম্মানিত একথা ভাবতে শিখি। নিজেদের দায়িত্ব কর্তব্যে আমরা একক। বন্ধুত্ব এবং সহযাত্রীর সম্পর্কবোধকে লালন করতে হবে আমাদের। পরিবার পরিবর্তন হলেই সমাজ বদলে যাবে আর সমাজ বদলালেই পৃথিবী বদলানো অপ্রতিরোধ্য।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা এপ্রিল, ২০১৬ ভোর ৪:১৭
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×