দুই হাজার বারো সালে ব্লগার রাজীব হত্যার পরে মৌলবাদ এবং নাস্তিকতা নিয়ে কয়েকদিন পড়াশুনা করেছিলাম। কিছু লিখেছিলাম আবার কিছু লিখে শেষ করা হয় নাই। আস্তিক এর আভিধানিক অর্থ – সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বে বিশ্বাসী; A having faith in God and in life…theism.
নাস্তিক এর আভিধানিক অর্থ - সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বে যে বিশ্বাস করে না, নিরীশ্বরবাদী; A disbelieving in the existence of God…atheism.
মানুষ কেন আস্তিক অথবা নাস্তিক হয় একথা বিভিন্ন আঙ্গিকে আলোচিত হতে পারে যা আমার এ লেখার প্রাধান্য নয়। এঁদের এক গোষ্ঠী জন্মগত প্রাপ্তিতে বিশ্বাসী আর অন্য গোষ্ঠী তাঁদের যুক্তিবাদে চালিত। আমার দৃষ্টিতে মানুষ আস্তিক হয় জন্মগত ভাবে আর নাস্তিক হয় জন্মের পরে। নাস্তিকতাবাদে বিশ্বাসী হয়ে ওঠার পেছনে সাধারণত একটা না একটা কারণ থাকতে দেখা যায়। আমার কর্মজীবন ও অভিজ্ঞতায় যে দু’টি কারণ বেশি দেখেছি – তার একটি, দার্শনিকদের বিভিন্ন দর্শন ও মতবাদের লেখা পড়ার পর তাঁরা সবকিছুতে যুক্তি বা প্রমাণ খুঁজে বের করার চেষ্টা করে আর অন্যটিকে আমি মানুষের মনের সংকীর্ণতা বলে ধরে নেই যেমন ভিন্ন বিশ্বাসে সম্পর্ক হলে কেউ কারোটা মেনে না নিয়ে মাঝামাঝি পথ বেছে নেয় বা কোনো পথই নেয় না।
যে কারণেই একজন মানুষ আস্তিক বা নাস্তিক হোক তাতে আমার ক্ষতি কিছু নাই কারণ এটা যার যার ব্যক্তিগত ব্যাপার। এঁরা যদি কেউ কাউকে প্রভাবিত না করে বা চাপিয়ে না দেয় তবে সমস্যার কিছু আছে বলেও আমি মনে করি না।
প্রগতি অর্থ Progress, জ্ঞানে বা কর্মে অগ্রগতি। প্রগতি অর্থ আক্রমণ হওয়া কাম্য নয় তা যে কোনো ধরণের ব্যক্তিগত বা গোষ্ঠী গত আক্রমণই হোক না কেন। বুদ্ধিমান ব্যক্তিদেরও এ ধরণের কাজকর্ম করতে দেখা যায় যা হতাশাজনক এবং অনেক জটিলতার সৃষ্টি করে। আমার ধারণা প্রত্যেকটি মানুষ যার যার চিন্তায় কম বেশি মৌলবাদী। সে মৌলবাদ যদি ব্যক্তি, সমাজ বা মানব কল্যাণের অন্তরায় না হয় তাতে সমস্যা থাকার কথা নয়। যে কোন ধরণের মৌলবাদ বা ব্যক্তিগত আক্রমণ যদি কোন মানুষের বিশ্বাসকে আঘাত করে তা ভালো কাজের মধ্যে পড়ে কিনা তর্ক সাপেক্ষ। বর্তমান বিশ্বে ইসলামিক ফান্ডামেন্টালিজম বেঁড়ে যাওয়ায় কিছু কিছু মুসলিম নিজের আত্মপরিচয় দিতে দ্বিধা করে। এমনও দেখা যায় কিছু মানুষ সমগ্র মুসলিম গোষ্ঠীকে হেয় করতে গিয়ে ইসলাম ধর্মকে আক্রমণ করছে, আবার খোলা মন বা প্রগতিশীল পরিচয় দেয়ার লক্ষ্যে নিজেকে নাস্তিক বলে পরিচয় দিতেও দ্বিধা করছে না। আমার চোখে কোনো ধর্মই মন্দ নয়। মন্দ যদি কিছু হয় সেটা মানুষের কার্যকলাপ। আলোচনা অথবা নতুন কথা লিখতে গিয়ে হযরত মোহাম্মদ(সঃ), শ্রীকৃষ্ণ বা যীশুর চরিত্র বিশ্লেষণ করা নতুন কিছু আবিষ্কারের মধ্যে পরে নাকি অন্য বিশ্বাসীদের বিশ্বাসে আক্রমণ করা হয় তা সকলের ভাববার বিষয়। এ ধরণের কাজে লিপ্ত হওয়া নিয়ে দু’একজনের সাথে কথাও হয়েছে। যে যার বিশ্বাস নিয়ে থাকলে সমস্যাটা কী? শুধু ধর্মীয় নয় যে কোনো বিশ্বাসে আঘাত হানলে মানুষ ক্ষিপ্ত হয়ে উঠতে পারে তার অর্থ এই নয় যে ঐ মানুষটিকে সহিংস হতে হবে। সহিষ্ণু হয়েও একটি অন্যায়ের প্রতিবাদ করা যেতে পারে। যদি কারো লেখা অনৈতিক বা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধানোর উৎস মনে হয় তাকে আইনের আওতায় আনা যেতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে দেশ থেকে বহিষ্কার করতেও দেখা যায়।
মৌলবাদ শব্দটি ধর্মীয় ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হলেও মূলত এটি যে কোনো ক্ষেত্রেই হতে পারে। “(Radicalization (or radicalisation) is a process by which an individual or group comes to adopt increasingly extreme political, social, or religious ideals and aspirations that (1) reject or undermine the status quo or (2) reject and/or undermine contemporary ideas and expressions of freedom of choice.)”
মৌলবাদ, আস্তিক বা নাস্তিক কারোর জন্যই মঙ্গলজনক নয়।
যে প্রশ্নের উত্তর দেয়ার জন্য আমার এই লেখা সেই কথায় আসছি--
লেখক হুমায়ূন আজাদের লেখা সম্পর্কে আমি খুব বেশি বলতে পারবো না। তাঁর লেখা কিছু কবিতা আমাকে মুগ্ধ করে। পত্র পত্রিকায় লেখালেখি দেখে তাঁর লেখা ‘পাক সার জমিন সাদ বাদ’ পড়তে চেয়েছিলাম, আমার এক সংস্কৃতি মনা বড় ভাই বইটি আমাকে না দিয়ে বলেছিলেন, ‘তুমি ওটা পড় না, তুমি ওটা পড়তে পারবে না...’ চ্যাপটার ওখানেই শেষ। ব্লগার রাজীব হায়দারের লেখা সম্পর্কেও আমার অভিজ্ঞতা সীমিত কারণ তাঁর লেখা কখনো পড়ি নাই তবে ঐ দুর্ঘটনার পরে আস্তিকতা আর নাস্তিকতা নিয়ে পড়াশুনা করেছিলাম।
ব্লগার অভিজিৎ রায়ের লেখা সম্পর্কে আমার ধারণা বলতে তাঁর সাথে ঘটে যাওয়া সাম্প্রতিক ঘটনার পরে অন লাইন নিউজে কিছু লিঙ্ক দেখেছি এই যা।
এবার আসছি আমাকে প্রশ্ন করা প্রশ্নের জবাবে--
আমার অন্যায়ের শাস্তি স্বরূপ আমার পরিবারকে গালি গালাজ করা হবে এর তীব্র বিরোধিতা করি।
কিছু মুসলিম বা ভিন্ন ধর্মীয় মানুষ মন্দ কাজ করলে সমগ্র জাতিকে বা তাঁর ধর্ম বিশ্বাসকে আক্রমণ করার প্রতিবাদে আমার অবস্থান অটল।
যে কোনো গোষ্ঠীকে ব্যক্তিগত ভাবে আক্রমণ না করেও মুক্তমনা বা ভালো লেখক হওয়া অবশ্যই সম্ভব।
অন্যায় করা অন্যায় জেনেও মানুষ অন্যায় করে বার বার। প্রতিবাদ করা দরকার মনে করে মানুষ সীমা লঙ্ঘন করে নির্দ্বিধায়। প্রতিবাদ মানে সংগ্রাম হতে পারে। প্রতিবাদ মানে ধ্বংস বা হত্যা নয়। একটা সুন্দর পৃথিবী তৈরি করার দায়িত্ব আমাদের সকলের। একটি শান্তির পৃথিবী গড়তে হলে একে অপরকে শান্তিতে থাকতে দেয়ার চেষ্টা করতে হবে। অন্যের বিশ্বাসকে আঘাত করার এ বলয় থেকে আমাদের সকলকেই বেরিয়ে আসতে হবে।
নীচের উদ্ধৃতি আমার এই লেখার উৎস এবং এই উদ্ধৃতিই প্রমাণ করে একজন মুসলিম ভদ্রভাবে প্রতিবাদ করতে সক্ষম।
উদ্ধৃতি:
“আপা আমি চাই না যে বাংলাদেশে আর একটা লাশ পরুক কিন্তু আমি বলল্লে কি হবে যারা রানৈতিক বা অন্য কোন বিষয় নিয়ে লাশের খেলা করে তারা তো আর বসে থাকবে না।
আমি বলতে চাচ্ছিযে আমরা অনেকেই দাবী করি এভাবে যে আমি একজন মুক্তমনা বা ভালো একজন লেখক বা ব্লগার যেটাই হোক না কেন, আমরা লিখব আমাদের স্বাধীনতা রয়েছে লেখার, যার মাধ্যমে আমাদের মনের ভাব প্রকাশ করব। কিন্তু দেখেন হুমায়ন আজাদ, ব্লগার রাজিব, আভিজাত সহ যাদের প্রতি আক্রমন করা হচ্ছে তাদের সকলের সমস্যা একটা মৌলবাদদের বিরুধীতা বা তাদের সাথে সংঘর্ষ, যে বিষয় নিয়ে সংঘর্ষ সে বিষয়টা কি এরিয়ে চলা যায় না। যেমন আমি আপনাকে শ্রদ্ধা করে বলি আপা, এর বাইরে যাদি আপনাকে বা আপনার পরিবারকে উদ্ধেশ্য করে কোন অকাট্য ভাষা ব্যাবহার করি তাহলে আপনি অবশ্যই খুশি হবেন না। ঠিক তেমনি ভাবে বলি আমরা মুসলমান আমরা ব্যাক্তি বা গোষ্টির কেউ খারাপ হতে পারি আমাদের ইসলাম বা সৃষ্টি কর্তা তো খারাপ হতে পারে না। তাই বলি এই ইসলামকে কঠাক্য ছাড়া কি আরা মুক্তমনা বা ভালো লেখক হতে পারি না। যে খানে সামান্য কয়েক জন মানুষের যায়গাই আমরা গোটা বিশ্ববাসীর বিরুদ্ধে লিখছিনা। আমরা এখান থেকে বেরিয়ে আসতে পারিকিনা, আপনার শুচিন্তিত মতামত ব্যাক্ত করবেন আশা করছি।”
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা মার্চ, ২০১৫ ভোর ৪:০০